শনিবার   ১৮ মে ২০২৪ |  জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১ |   ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

শারীরিক সুখ পেতে বিভিন্ন অ্যাপে হাজিরা, সতর্ক থাকুন

প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০২ ০২ ৪৮  

দিন এখন অনেকটা বদলে গেছে। একটা সময়, একটি নতুন সম্পর্ক গড়তে কতই না কী করা লাগত। আর এখন তথ্য প্রযুক্তি যত বিপ্লব ঘতছে মানুষের বিবেক বুদ্ধি লজ্জা ততটা কমে যাচ্ছে। সে সঙ্গে এখনকার মানুষ হারিয়ে ফেলছে নিজেদের ভূষণ।

বলছিলাম, ভারতের উত্তরবঙ্গের এক তরুণীর গল্প। বন্ধুদের পরামর্শে বেশ উত্তেজিত হয়েই ডেটিং অ্যাপ ডাউনলোড করেছিলেন ওই মেয়েটি। সেখানেই তার পরিচয় হয় হরেক তরুণের সঙ্গে। শুরুর দিকে কথাবার্তা চালাচালি, এরপর থেকে ভালো লাগা, সেখান থেকে নম্বর বিনিময় ইত্যাদি।

এরপর ডেটিং অ্যাপ বাদ দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে আলাপচারিতা। কথা চলতে না চলতে অপরপ্রান্ত থেকে আসে ভিডিও চ্যাট করার আবদার। ব্যস, এতেই তাদের প্রথম দেখা। এভাবে ভিডিও চ্যাট চলল কয়েকদিন। আবেগ আর লালসা বেশ বাড়তে থাকলো তরুণটির। এরপর হঠাৎ একদিন ভিন্ন আবদার ‘পোশাক খোলো’! এতে করে বেশ অবাক হয়ে যায় তরুণী।

ভারতীয় আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে ওই কাহিনীর আলোকপাত করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ভারতের বারাসাতের ওই তরুণীকে প্রথমে হোয়াটস্যাপে নগ্ন ছবি পাঠান তরুণ। পরে পাল্টা ছবি শেয়ার করার দাবি করেন তিনি। এখন কী করবেন সেই তরুণী? বেশ অবাক সে, কীভাবে একটা মানুষ এমন হতে পারে। কীভাবে এমন আবদার করতে পারে। পরে তরুণের এমন পরিস্থিতিতে ধৈর্য্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে ডেটিং অ্যাপ আর হোয়াটসঅ্যাপে তাকে ব্লক করে দেন তরুণী। কিন্তু তার মাশুল গুণতে হয় নিজেকে।

পরিবার কিংবা বন্ধুদেরকে নিজের এই বিসাদময় অভিজ্ঞতার কথা মুখ ফুটে বলতে না পারায় প্রচণ্ড অবসাদের শিকার হতে হয় তরুণীকে। পরে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তিনি। তার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেছেন, ‘পোস্ট-ট্রম্যাটিক ডিপ্রেশন’ তার। অর্থাৎ তার মানসিক চাপ এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে অনেকের কেবল কাউন্সেলিংয়ে কাজ হচ্ছে না। দিতে হচ্ছে ওষুধও।

অপরদিকে একই ঘটনা ঘটেছে অন্য নারীর জীবনে। সেই নারী তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী বিবাহিত জীবনের অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে জনপ্রিয় আরেকটি ডেটিং অ্যাপ ডাউনলোড করেছিলেন। তারও এমনই করুণ অবস্থা হয়েছে। সেখানে পরিচয় হয় কম বয়সী এক যুবকের সঙ্গে। সম্পর্ক গভীর হলে ৩৫ বছর বয়সী ওই নারীর কাছ থেকে নানা অজুহাতে বেশ কিছু টাকা হাতিয়ে নেন যুবকটি।

ব্যাস! সময় যত গড়িয়ে যায়, ছেলের চাহিদাও তত বাড়তে থাকে। পরে পরিস্থিতি বুঝে ওই নারী সরে যাইতে চাইলে শারীরিক আবেদনের কথা স্বামীকে জানিয়ে দেয়ার ‘ব্ল্যাকমেইলিং’ এর হুমকি আসতে থাকে। এক পর্যায়ে ওই নারী একেবারে বেকায়দায় পরে যান। পরে অবশ্য এককালীন বেশ কিছু টাকা দিয়ে সেই যুবকের হাত থেকে মুক্তি মিলেছিল তার।

বর্তমানে সমাজে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে এমন আরো কিছু অ্যাপস, টিন্ডার, ট্রুলি ম্যাডলি, হ্যাপেন, ওকেকিউপিড, হিঞ্জ-এর মতো ডেটিং অ্যাপ গুলো। জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে, লাইভ দেখে চ্যাটে সুখ নিতে কিংবা বাড়তি সময় কাটাতে কিংবা শুধুই শারীরিক সুখ পেতে এসব অ্যাপে হাজিরা দিচ্ছেন অনেকেই।

এদিকে, থেমে নেই প্রশাসনও। সম্প্রতি সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞ ও মনস্তাত্ত্বিকরা অনলাইনের ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারকারীদের ওপর নিবির পর্যবেক্ষণ করে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বের করেছেন। এমনকি হাতেনাতে অনেক যৌন হেনস্তাদের ধরেছেন তারা।

তাদের কাছে ওই প্রতিবেদনসহ গত কয়েক মাসে ডেটিং অ্যাপে প্রতারিত হওয়ার বেশ কিছু ঘটনা পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। মূলত দু-ধরনের নারীরা বেশি করে প্রতারিত অথবা লাঞ্চিত হচ্ছেন বলে সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন তারা।

প্রথমত, যাদের বয়স খুব কম। তারা ছেলেটির সম্পর্কে বিস্তারিত না-জেনেই জড়িয়ে পড়ছেন এবং প্রতারিত হচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, একাকিত্ব থেকে বেরোতে ডেটিং অ্যাপের দ্বারস্থ হচ্ছেন মধ্যবয়সী নারীরা। যার ফলে, শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে প্রতারণা থেকে শুরু করে আর্থিক হয়রানীর শিকার হচ্ছেন তারা।

ঘটনার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে সাইবার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তারা মূলত সঙ্গী সম্পর্কে বেশ কম জানছেন, ফলে খুব অল্প জানা বড়সড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে নারীদের কাছে। এমন পরিস্থিতিতে ‘ডেটিং অ্যাপ’ ব্যবহারকারীদের বাড়তি সচেতন হতে বলছেন তারা।

এমনকি অ্যাপে পরিচয় হওয়া কোনো পুরুষের সঙ্গে ডেটে যাওয়া বা শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে তার সম্পর্কে ভালো করে খোঁজখবর নেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন বোদ্ধারা। তাছাড়া ডেটে না যাওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে পূর্ণবয়স্ক দাদা থেকে নাতনি পর্যন্ত সকলেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে থাকেন। ব্যবহার করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাই এসব ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন না করলে এর চেয়ে বড় দুর্ঘটনাও ঘটা বেশ স্বাভাবিক।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী