শনিবার   ১৮ মে ২০২৪ |  জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১ |   ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আইনস্টাইনকে কেন কেউ বিশ্বাস করেন নি?

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩ ০৩ ৫৯  

মুহূর্তের মাঝেই আমরা দেখতে পাই কোন একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দিচ্ছে সাফল্যের কথা। মানব জাতিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে দেয়ার কথা। একটি প্রবন্ধ ছাপা হয় এবং সবাই ‘ইউরেকা’ ‘ইউরেকা’ বলে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে।কিন্তু দৃশ্যপট সর্বদা এমন নাও হতে পারে।কারণ, একজন বিজ্ঞানীকে মাঝে মাঝেই সমগ্র পৃথিবীকে তার আবিষ্কার কিনবা তার প্রাপ্তির কথা জানাতে বেশ বেগ পেয়ে থাকতে হয়।
এটা বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের জন্য একেবারে সত্য। ১৯০৫ সালে যখন তিনি তার ‘আপেক্ষিকতাবাদ’ সূত্রটি দেন তখন তাকে ব্রিটিশদের ‘ইথার’ ধারণাটির সাথে এক প্রকার যুদ্ধই করতে হয়েছিল।আইনস্টাইন বলেন যে, মহাবিশ্ব ও সময় পরস্পরের সাথে একই সূত্রে বাঁধা।এটা তখনকার সময়ে মেনে নেয়া একটু কঠিন ছিল কারণ সবার মাঝে তখন ইথারের ধারণাটি জেঁকে বসেছিল।
১৯ শতকে এসে ইথারকেম ধারণা করা হয় এমন একটি মাধ্যম হিসেবে যেটি মহাবিশ্বকে পরিপূর্ণ করতে পারে। ‘প্রথম ডার্ক ম্যাটার’ হিসেবে এটি তখন পরিচিত। এটি এমন একটি ধারণা যার সাথে আলো, শব্দ, বিদ্যুৎ এমনকি “কোন কিছু নেই” তার ধারণার সাথেও সম্পর্কিত।কিন্তু আইনস্টাইন বলেন যে আসলে এমন কোন কিছুর অস্তিত্ব পরীক্ষা করে পাওয়া যায় না। কিন্তু তাকে কেউ তখন বিশ্বাস করেন নি। ১৯০৭ সালে লর্ড ক্যাল্ভিন বলেন যে, ‘মহাবিশ্বে এমন কোন কঠিন পদার্থ অবশ্যই আছে যা হবে নমনীয়, বাড়ানো কমানো যাবে চাপের মাধ্যমে এবং মহাকর্ষীয় বলের সাথে যার কোন সম্পর্কই থাকবে না।’
কিন্তু পরবর্তীতে লর্ড ক্যালভিনের এই ধারণাও গ্রহণযোগ্য হয় নি কারণ এ ধরনের কোন পদার্থের অস্তিত্বই নেই।
তারপরও আইনস্টাইন যখন তার তত্ত্বটি নিয়ে ইথারের ধারণার সাথে লড়াই করে যাচ্ছিলেন, তাকে যে দেশটি শুধুমাত্র বুঝতে চেষ্টা করে, তা হচ্ছে জার্মানী। তার তত্ত্বটি সেখানে আলোচনা করা হয়, সমালোচিত হয় এবং প্রশংসিতও হয়। আইনস্টাইনের যে সকল পুস্তক রয়েছে, তার প্রকাশ তিন বছর ধরে কেবলমাত্র জার্মানী থেকেই প্রকাশিত হয়। ১৯১০ সালে ফ্রান্সে আইনস্টাইনকে অবহেলা করা হয়। ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রেও আইনস্টাইন তার তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে পারেন নি।
১৯২৩ সালের শেষের দিকে ইবেনিজার কানিংহাম ও নরম্যান ক্যাম্পবেল ছিলেন প্রথম দুজন যারা আইনস্টাইনের এই তত্ত্বটি বোঝার চেষ্টা করেন। ইথারের বিরুদ্ধে কেবলমাত্র ক্যাম্পবেলের আওয়াজই তখন পাওয়া যাচ্ছিল। সালটা ১৯০৫ থেকে ১৯১১।
স্বভাবতই দেখা যাচ্ছে যে, বিজ্ঞানীদের প্রথমে মানুষকে কোন তত্ত্ব বুঝাতে কিছুটা বেগ পেতেই হয়। কারণ, মানুষ নতুন কিছুকে খুব সহজে আমন্ত্রণ জানাতে পারে না যেখানে তাদের মাঝে আগে থেকেই একটা ভ্রান্ত ধারণা ঢুকিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সবশেষে জয়টা বিজ্ঞানেরই হয়।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী