রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১ |   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগ করা সহজ করে দিল যে পদ্ধতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০১৮ ১৭ ০৫ ৪৫  

মেয়েদের দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগে সাহায্য করবে যে পদ্ধতি। আন্তর্জাতিক টয়লেট দিবসে ভারতে চালু করা হয়েছে এই অভিনব প্রোডাক্ট। এটি উদ্ভাবন করেছেন ভারতের অন্যতম সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ দিল্লি আইআইটির দুজন ছাত্র-অর্চিত আগরওয়াল ও হ্যারি শেহরাওয়াত। প্রোডাক্টটার নাম দেয়া হয়েছে স্যানফে, যার মানে হলো স্যানিটেশন ফর ফিমেল। ভারতে এক-একটার দাম দশ রুপিরও কম। কিন্তু রাস্তাঘাটে নোংরা শৌচাগারেও সহজ পদ্ধতিটাই মেয়েদের দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগে বিরাট সাহায্য করবে বলে বলা হচ্ছে।

দেশের সেরা চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইমস-ও এটিকে পরীক্ষা করে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ বলে রায় দিয়েছে। জনস্বাস্থ্য খাতের গবেষকরাও বলছেন, স্যানফে জনপ্রিয়তা পেলে ভারতে রাস্তাঘাটে মেয়েদের শৌচাগার ব্যবহারের অভ্যাসটাই আমূল বদলে যেতে পারে। স্যানফে যারা তৈরি করেছেন, তাদের অন্যতম অর্চিত আগরওয়াল। তিনি বলেন, ‘এটির ব্যবহার খুব সহজ। মেয়েদের মূত্রত্যাগ করার দরকার হলেই যে টয়লেট সিটের ওপর বসতে হয়, সেই প্রয়োজনটাই দূর করে দেবে এটা!’

স্যানফের নমুনা বা স্যাম্পল
তিনি বলেন, ‌‘ভারতে পাবলিক টয়লেটগুলোর পরিচ্ছন্নতার যে হাল তাতে বেশিরভাগ নারী সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন না। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাই বলছে, প্রতি দুজনের মধ্যে একজন নারী ইউরিনারি ট্র্যাক্ট বা মূত্রনালীর সংক্রমণে আক্রান্ত হন। কাজেই শৌচাগারের কোনো অংশ স্পর্শ না-করেই যাতে নারীরা সহজে মূত্রত্যাগ করতে পারেন, তার জন্য এই “স্ট্যান্ড অ্যান্ড পি” (দাঁড়াও ও প্রস্রাব করো) ডিভাইসটা নকশা করা হয়েছে।’

‘যখনই তাদের শৌচাগার ব্যবহারের দরকার পড়বে, জিনিসটা খুলে নিয়ে নারীরা দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই তাদের ফ্লো এরিয়ায় ঠিকমতো বসিয়ে নেবেন। তারপর প্রসাব করে জিনিসটা ছুঁড়ে ফেলে দিলেই, ব্যাস! টয়লেটের কোনো অংশ তাদের টাচ করার দরকারই হবে না!’-যোগ করেন আগরওয়াল।

দিল্লি আইআইটির অধ্যাপক শ্রীনিবাসন ভেঙ্কটরামনও এই প্রোডাক্টটির ডিজাইনিংয়ের সঙ্গে যুক্ত, যা তৈরি হয়েছে পুরোপুরি বায়োডিগ্রেডেবেল উপাদান দিয়ে। এই প্রোডাক্টটিকে জনপ্রিয় করে তুলতে বিভিন্ন এনজিওর সাহায্যে এক লাখ স্যাম্পল (নমুনা) সারা দেশে নারীদের মধ্যে বিনা পয়সায় বিলি করা হচ্ছে।

তার আগে গত দুমাস ধরে প্রোডাক্টটির ট্রায়াল চালানো হয়েছে বিভিন্ন বয়সী নারীদের মধ্যে। এটা ব্যবহার তৃপ্তিদায়ক বলে তারা মত দিয়েছেন। দিল্লির কলেজছাত্রী রিমা বলছেন, এখন জিমে গেলে আমি সবসময় সঙ্গে স্যানফে রাখছি। এতে সুবিধাটা হলো ওয়াশরুমে গেলে আমার ব্যাক্টেরিয়াল সংক্রমণের ভয় থাকছে না। তার চেয়েও ভালো জিনিস হলো বারবার টয়লেট সিটটা মুছে নেয়ার কষ্টও করতে হচ্ছে না।

মধ্যবয়সী গৃহবধূ নীহারিকা শর্মা বলেন, ‘যেকোনো পাবলিক টয়লেটে গেলেই মাথার ভেতর একটা ভয় কাজ করে না জানি আবার কী ইনফেকশনে পড়ব। এইটা ব্যবহার করার পর থেকে সেই ভয়টা অনেক দূর হয়েছে।’

যেভাবে ব্যবহার করতে হবে প্রোডাক্টটি
লাজপতনগরের রিনা শর্মাও প্রায় এক সুরেই বলেছেন। তিনি বলেন, ‘ভারতে পাবলিক টয়লেটগুলো এতই নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন যে, সেগুলো ব্যবহার করার কথা ভাবাই যায় না। কিন্তু এই নতুন ডিভাইসটা মেয়েদের জন্য দারুণ একটা ব্যাপার। কারণ এখন তারা সেই নোংরা টয়লেটও অনায়াসে ব্যবহার করতে পারছেন।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ পত্রলেখা চ্যাটার্জি মনে করছেন, প্রাইস পয়েন্টের দিক থেকে এগুলোর দাম মোটামুটি একটা স্যানিটারি প্যাডের মতোই। কাজেই সমাজে নারীদের যে অংশটা স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে পারেন, ধরে নেয়া যায় তারা অবশ্যই এটা পরখ করে দেখবেন।

তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে যে নারীদের রাস্তাঘাটে প্রচুর সফর করতে হয়। হাইওয়ে, এয়ারপোর্ট, শপিং মলসহ নানা জায়গায় বারবার টয়লেট ব্যবহার করার দরকার পড়ে, তাদের মধ্যে তো এটা জনপ্রিয় হতে বাধ্য।’

‘ভারতে এই নারীরা অনেকেই বহুক্ষণ ধরে প্রস্রাব চেপে রাখতে বাধ্য হন কিংবা তাদের পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে হয় সেমি-স্কোয়াট পজিশনে। এতে কিডনিতে স্টোন তৈরি হয়, ব্লাডার মাসল দুর্বল হয়ে পড়ে। আশা করা যায় এই ধরনের একটা ডিভাইস সেই সমস্যাটা দূর করতে পারবে’-যোগ করেন এই বিশেষজ্ঞ।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী