মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১ |   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

৬ কোটি টাকা নিয়ে পালানোর সময় ২ কোটিই পুড়িয়ে দিলো ডাকাত দল

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭ ০৫ ০২  

৬-কোটি-টাকা-নিয়ে-পালানোর-সময়-২-কোটিই-পুড়িয়ে-দিলো-ডাকাত-দল

৬-কোটি-টাকা-নিয়ে-পালানোর-সময়-২-কোটিই-পুড়িয়ে-দিলো-ডাকাত-দল

লুট করা হয়েছিল ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। কিন্তু তার মধ্যে ২ কোটি টাকা স্রেফ পুড়িয়ে নষ্ট করে দিতে বাধ্য হয় ডাকাত দল। এমনটাই দাবি করেন অভিযুক্তরা। তাদের দাবি, ভাগ্যের পরিহাসেই বিশাল এই অঙ্কের টাকা তাদের পুড়িয়ে দিতে হয়েছে।

২০১৬ সালের ঘটনা। ভারতের সালেম-চেন্নাই এগমোর এক্সপ্রেস থেকে লুট হয় নগদ ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের ৮ অগস্ট সালেমের ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাংক থেকে ৩৪২ কোটি টাকা ট্রেনে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল চেন্নাইয়ের রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়াতে। ট্রেনে উঠে ৩৪২ কোটির মধ্যে ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা লুট করে ডাকাতরা।

দুই বছর ধরে তদন্ত চালিয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবরে সিবি-সিআইডি দল মধ্যপ্রদেশের গুনা জেলার একটি গ্যাংয়ের সাতজনকে ডাকাতির অভিযোগে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করা হয়েছিল ঐ গ্যাংয়ের মূলহোতা মোহর সিংহকেও।

গ্রেফতারের পর তদন্তকারী দলের আবেদনে সন্দেহভাজনদের মধ্যে পাঁচজনকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন জেলা আদালত।

পুলিশের জেরার মুখে অভিযুক্তরা নিজেদের দোষ স্বীকার করেন এবং কীভাবে তারা এই ডাকাতির ছক কষেছিলেন, তা তারা পুলিশকে জানান। অভিযুক্তরা পুলিশকে জানান, লুটের উদ্দেশ্যে তারা বৃদ্ধাচলম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন।

চিন্না সালেম এবং বৃদ্ধাচলম রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি কোনো জায়গায় তারা চলন্ত ট্রেনের ছাদে উঠে পার্সেল ভ্যানের মাথায় গর্ত করে ট্রেনে প্রবেশ করে ডাকাতরা। এরপর কাঠের বাক্স ভেঙে নগদ টাকা নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে চম্পট দেয়।

ডাকাতির পর অভিযুক্তরা মধ্যপ্রদেশ থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করে লুটের টাকা নিয়ে নিজেদের গ্রামে চলে যান। গ্রামে পৌঁছে ওই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগও করে নেন।

অভিযুক্তরা পুলিশকে আরো জানান, লুটের টাকার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা দিয়ে বেশকিছু স্থাবর সম্পত্তি কেনা হয়। ফূর্তি, আমোদ-প্রমোদ করতেও বেশকিছু টাকা খরচ করেন তারা।

পুলিশ তাদের বয়ান শুনে দেখে, প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকার হিসাব পাওয়া গেলেও বাকি ২ কোটি টাকার হিসাব অভিযুক্তদের কাছে থেকে পাওয়া যায়নি। পুলিশ এ বিষয়ে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান, ঐ টাকা তারা পুড়িয়ে দিয়েছেন। তবে পোড়ানোর কারণ শুনে হাঁ হয়ে যায় পুলিশ।

টাকা পোড়ানোর কারণ জানতে চাইলে অভিযুক্তরা পুলিশকে জানান, ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট অর্থাৎ ডাকাতির ঠিক তিন মাস পরে কেন্দ্রের তরফে সব ৫০০ এবং ১০০০-এর নোট বাতিল করা হয়। ফলে ডাকাতের দল মহাফাঁপরে পড়ে। নোটবন্দির কারণে এই টাকা খরচ করার কোনো উপায় ছিল না। বাতিল হয়ে যাওয়ায় ওই টাকা নিয়ে ব্যাংকের লাইনে দাঁড়ালেও হাজতবাস অবশ্যম্ভাবী ছিল! অনেক ভেবে তারা ঠিক করেন, এই টাকা পুড়িয়ে দেবেন।

যেমন ভাবা তেমনই কাজ। একটি নিরিবিলি জায়গা বেছে নিয়ে চুরি করা নগদ প্রায় ২ কোটি টাকা পুড়িয়ে দেন ডাকাতদলের সদস্যেরা।

পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের কথা শুনে অবাক হয়ে যান। পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সঠিক প্রমাণ পেশ করার পর আদালত তাদের কারাদণ্ডের সাজা দেন।

পুলিশ আদালতে জানিয়েছিল, এ ঘটনায় সাতজনকে গ্রেফতার করা হলেও জড়িত ছিলেন মোট ১৬ জন।

সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস, আনন্দবাজার

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর