শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১ |   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাষ্ট্রীয়ভাবে হচ্ছে না গর্বাচেভের শেষকৃত্য, থাকছেন না পুতিন

প্রকাশিত: ২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২ ১২ ০১  

রাষ্ট্রীয়ভাবে-হচ্ছে-না-গর্বাচেভের-শেষকৃত্য-থাকছেন-না-পুতিন

রাষ্ট্রীয়ভাবে-হচ্ছে-না-গর্বাচেভের-শেষকৃত্য-থাকছেন-না-পুতিন

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার রূপকার সাবেক প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের শেষকৃত্য রাষ্ট্রীয়ভাবে আয়োজন করা হচ্ছে না। সময়সূচি না মেলায় তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) ক্রেমলিনের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেষকৃত্য শেষে শনিবার তাকে মস্কোর নভোদেভিচি সমাধিক্ষেত্রে সমাহিত করা হবে।

গত মঙ্গলবার ৯১ বছর বয়সে গর্বাচেভ মস্কোর একটি হাসপাতালে মারা যান।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলছেন, শেষকৃত্যে গার্ড অব অনারের মতো কিছু রাষ্ট্রীয় বিষয় থাকছে এবং এটি আয়োজনে সরকার সহযোগিতা করবে। তবে কীভাবে এটি পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্য থেকে আলাদা সে বিষয় তিনি বিস্তারিত বলেননি।

গর্বাচেভ ও পুতিনের সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর। ২০ বছরেরও বেশি সময় পুতিনকে রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখেছেন গর্বাচেভ। এ সময়ের মধ্যে কখনো তিনি পুতিনের সমালোচনা করেছেন, আবার কখনো করেছেন প্রশংসা। বিশেষ করে স্বৈরতন্ত্র ও দুর্নীতি ইস্যুতে পুতিনের সমালোচক ছিলেন শেষ এই সোভিয়েত নেতা।

পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোকে সোভিয়েত কমিউনিস্ট শাসনের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ায় গর্বাচেভ পশ্চিমাদের কাছে আদর্শ। অন্যদিকে অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি ‘পেরেস্ত্রোইকার’ কারণে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ায় রাশিয়ায় তিনি অপ্রিয়।

আরো পড়ুন>> ১৭২ দিনের অনশন ভাঙলেন ফিলিস্তিনি বন্দি

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরাশক্তি থেকে রাশিয়াকে দুর্দশাগ্রস্ত দেশের কাতারে নিয়ে আসার জন্য অনেক রুশ এখনও গর্বাচেভকে ক্ষমা করতে পারেন না।

সোভিয়েত পতনের পর নিজেও ক্ষমতা হারান গর্বাচেভ।  এরপর পশ্চিম দেশগুলোতে বক্তৃতা দিয়েই সময় পার করতেন। ১৯৯৯ সালে স্ত্রী রাইসা গর্বাচেভের মৃত্যুতে অনেকটাই ভেঙে পড়েন তিনি।

১৯৯৬ সালে পরিবর্তিত রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন গর্বাচেভ, তবে ভোট পেয়েছিলেন মোটে ৫ শতাংশ।

রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক সময় কড়া সমালোচক ছিলেন গর্বাচেভ।  তবে ২০১৪ সালে পুতিনের নির্দেশে যখন ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া, তখন তার পক্ষেই ছিলেন তিনি। গত বছর গর্বাচভের ৯০তম জন্মদিনে তাকে আবার প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন পুতিন।

মস্কোর হাউস অব ইউনিয়নসের বিখ্যাত হল অব কলামসে গর্বাচেভের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। সোভিয়েত নেতা ভ্লাদিমির লেনিন, জোসেফ স্তালিন ও লিওনিদ ব্রেজনেভের শেষকৃত্যও এখানে অনুষ্ঠিত হয়। গর্বাচেভকে গার্ড অব অনার দেবে সামরিক বাহিনী।

আরো পড়ুন>> অবশেষে শ্রীলংকাকে ২৯০ কোটি ডলার দিচ্ছে আইএমএফ

এরপর তাকে নভোদেভিচি সমাধিক্ষেত্রে স্ত্রী রাইসার পাশে সমাহিত করা হবে। এই সমাধিক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, কবি ও রাজপরিবারের সদস্যদের সমাহিত করা হয়। সেখানে গর্বাচেভের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়েলেৎসিন ও আরেক সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভকেও সমাহিত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখা যায়, মস্কোর সেন্ট্রাল ক্লিনিক্যাল হাসপাতালে রুশ ঐতিহ্য মেনে গর্বাচেভের কফিনে একাই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন পুতিন। তিনি সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন, মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মান জানান এবং গর্বাচেভের কফিন স্পর্শ করেন।

এ বিষয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে কাজের সময়সূচির কারণে ৩ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্টের এই কাজ করার সুযোগ হচ্ছে না। তাই আজই তিনি কাজটি সেরে নিলেন।’

রুশ ফেডারেশনের প্রথম প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেৎসিন যেভাবে রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্য পেয়েছেন, গর্বাচেভের ক্ষেত্রে তেমনটি হচ্ছে না। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর তার কারণে আড়ালে চলে যান গর্বাচেভ। ইয়েলেৎসিন নিজের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে পেশাদার কেজিবি গোয়েন্দা কর্মকর্তা পুতিনকে বেছে নেন।

ইয়েলেৎসিন ২০০৭ সালে মারা যান। তার মৃত্যুতে এক দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেন পুতিন, যা গর্বাচেভের ক্ষেত্রে হয়নি। মস্কোর ‘ক্রাইস্ট দ্য সেভিয়র’ ক্যাথেড্রালে রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্যে বিশ্বনেতাদের পাশাপাশি পুতিনও উপস্থিত ছিলেন।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর