বুধবার   ১২ মার্চ ২০২৫ |  ফাল্গুন ২৭ ১৪৩১ |   ১২ রমজান ১৪৪৬

নারায়ণগঞ্জ চাঁদাবাজ নেতা নাজমুল ধরা ছোঁয়ার বাইরে

বিশেষ প্রতিনিধি :: 

প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮ ০৬ ৫৭  

নারায়ণগঞ্জ চাঁদাবাজ নেতা নাজমুল

নারায়ণগঞ্জ চাঁদাবাজ নেতা নাজমুল

নারায়ণগঞ্জ জেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড এক ভয়ংকর আতঙ্কের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য, নির্মাণকাজ, এমনকি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও চলছে একক আধিপত্যবাদী শাসন। এই দৌরাত্ম্যের মূল হোতা সাবেক ছাত্রদল নেতা নাজমুল ইসলাম (নাজমুল), যিনি একসময় নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারি, হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে পুরো এলাকাকে নিয়ন্ত্রণ করছে তার গ্যাং।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নাজমুল জুট বাণিজ্যে একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম করেছে। তার অনুমতি ছাড়া কেউ ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে না। প্রতিটি জুট বস্তার ক্রয়-বিক্রয়ে জোরপূর্বক চাঁদা কেটে নেওয়া হয়। প্রতি বস্তায় ১০ টাকা এবং বিক্রির সময় প্রতি কেজিতে অতিরিক্ত চার্জ বসিয়ে দেন নাজমুল ও তার বাহিনী। ব্যবসায়ীরা এতে বাধ্য হন কারণ নাজমুলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই তাদের ভয়ংকর পরিণতির মুখে পড়তে হয়।

কুতুবপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে কেউ যদি নতুন ভবন নির্মাণ করতে চায়, তাহলে তাকে বাধ্য হয়ে নাজমুলের নির্দেশনা মানতে হয়। যে কোনো নির্মাণকাজ শুরু করার আগে সয়েল টেস্ট থেকে শুরু করে ভবন নির্মাণের শেষ পর্যন্ত তাকে চাঁদা দিতে হয়। সাধারণভাবে ১১০ টাকায় কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নাজমুল জোর করে ১২৫ টাকা নিতে বাধ্য করে। কেউ যদি তার নিয়ম না মানে, তাহলে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় এবং অজ্ঞাত পরিচয়ে লোক পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়।সাবলিমেশন পেপার ও অস্টিস বাণিজ্যে লুটপাট সাবলিমেশন পেপার এবং অস্টিস ব্যবসায়ও নাজমুলের একচেটিয়া দখলদারি কায়েম করেছে। এলাকাবাসীর দাবি, আগে সাবলিমেশন পেপার ১৫ টাকায় বিক্রি হতো, কিন্তু এখন নাজমুল ১৮ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য করছে। একইভাবে, অস্টিস পেপার, যা সাধারণত ৮ টাকায় বিক্রি হতো, সেটি এখন সে ৫ টাকায় কিনে নিয়ে নিজের ইচ্ছামতো দামে বিক্রি করছে। কেউ যদি তার নির্দেশনা না মানে, তাহলে সন্ধ্যার পর গুম, মারধর এবং ভয়ংকর নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য নয়, সরকারি প্রকল্প ও উন্নয়নমূলক কাজেও নাজমুলের ভয়ানক দখলদারি রয়েছে। সিটি কর্পোরেশন বা স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া যে কোনো টেন্ডারে সে নিজের লোক দিয়ে কাজ করায়। যদি কোনো সাধারণ ঠিকাদার টেন্ডারে অংশ নিতে চায়, তাহলে তাকে ভয় দেখিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। অনেক সময় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বা শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে তাকে টেন্ডার থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়। ফলে সাধারণ ঠিকাদাররা কাজের সুযোগ পান না, বরং নাজমুলের অনুসারীরা ঠিকাদারি নিয়ে বাজেটের বড় অংশ আত্মসাৎ করে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নাজমুল শুধু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেই ক্ষান্ত হন না, বরং প্রতিটি দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করা হয়। দোকানের আকার অনুযায়ী মাসিক চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তার দোকানে দাঙ্গা সৃষ্টি করা হয়, মালামাল লুটপাট করা হয়, এমনকি দোকান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

স্থানীয়দের দাবি, এত বড় অপরাধচক্র সক্রিয় থাকলেও প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন নাজমুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেকে মনে করছেন, প্রশাসনের কিছু অসাধু সদস্য হয়তো নাজমুলের কাছ থেকে সুবিধা পাচ্ছেন, যার কারণে সে এতদিন ধরেই অপরাধের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে।

এলাকাবাসী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ একযোগে নাজমুলের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা চান, তার সকল অবৈধ কার্যক্রম তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে এলাকাটি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দখলদারির কবল থেকে মুক্ত হয়। প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ, দ্রুত এই অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা হোক, যাতে সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে।

Provaati
দৈনিক প্রভাতী
এই বিভাগের আরো খবর