বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১ |   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কী কারণে এ সুন্দরী বললেন ‘আমি এখনো মরিনি’

প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪ ০২ ০১  

কী-কারণে-এ-সুন্দরী-বললেন-আমি-এখনো-মরিনি

কী-কারণে-এ-সুন্দরী-বললেন-আমি-এখনো-মরিনি

ইউক্রেনে রাশিয়া অভিযানের কয়েক মাসের পর পতন ঘটে মারিউপোল শহরের। এ সময় রুশ সেনাদের হাতে বন্দি হন ইউক্রেনীয় সেনাদের চিকিৎসক মারিয়ান মামোনোভা। সেই সসয় তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন তিনি। এরপর যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে পূর্ব ইউক্রনের কালমিউস্কে রায়ওন অঞ্চলের জেল ওলেনিভকায় মারিয়ানাকে রাখা হয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মারিয়ানার স্বামী ভাসিলি স্ত্রীর কারাবন্দি হওয়ার খবর জানতে পারেন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে।

ভাসিলি বলেন, আমার প্রথম সন্তান পৃথিবীতে আসতে যাচ্ছে। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তাকে সরাসরি দেখিনি। সে মারিউপোলে সম্মুখ সারির একজন যোদ্ধা ছিল।

ভাসিলি বলেন, স্ত্রী এ খুশির খবরটি আমাকে সরাসরি বলতে চেয়েছিল মনে হয়। এ কারণে ইন্টারনেটে একটি ইঙ্গিতপূর্ণ ইমোজি পাঠিয়েছিল। ইমোজিটি ছিল নবজাতকের সঙ্গে মা-বাবার। তিনি বাবা হতে যাচ্ছেন, এ খবর জানার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর সোশ্যালের মাধ্যমে জানতে পারি, মারিয়ানা রুশ সেনাদের হাতে বন্দি।

রুশ নিয়ন্ত্রিত ওলেনভিকা কারাগারের অবস্থা বেশি ভালো নয়। সম্প্রতি এক হামলায় ঐ কারাগারের অন্তত ১২ ইউক্রেনীয় নিহত হন। আর ঐ হামলার পর একে অপরকে দোষারোপ করছে মস্কো ও কিয়েভ।

চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে মারিয়ানার প্রথম সন্তানের জন্ম হবে। তাই বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে তাকে দ্রুত কারামুক্তির উদ্যোগ নিতে ইউক্রেন সরকারের কাছে মারিয়ানার পরিবার আবেদন করেছে। বর্তমানে তার অবস্থা সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য নেই। তিনি যদি মুক্তি না পান তাহলে কারাগারেই সন্তান জন্ম দিতে হবে। আর সেই সন্তানের ভাগ্যে কী হবে তা স্পষ্ট নয়।

মারিয়ানার বিষয়ে ইউক্রেনীয় সরকার জানায়, মারিয়ানা ভালো আছেন। তার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

এদিক, মারিয়ানার সঙ্গে কারাবন্দি থাকা আনা ভোরোশেভা গত জুলাইয়ে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি বলেন, শুরুতে মারিয়ানা একটি রুমে ২০ জনেরও বেশি বন্দিদের সঙ্গে ছিলেন। মেঝেতে ঘুমাতেন। আমাদের মধ্যে অনেক কথা হতো। সে জানিয়েছিল সে গর্ভবতী। এটা শোনার পর তার প্রতি বাড়তি যত্ন নিতাম।

তিনি আরো বলেন, এক সময় মারিয়ানাকে একটি ছোট রুমে সরিয়ে নেয়া হয়। সেখানে তুলনামূলক কম বন্দি এবং বিছানা দুটি। তার মধ্যে একটিতে মারিয়ানা ঘুমাতেন। প্রথম দিকে বন্দি বিনিময়ের সম্ভাবনার বিষয়ে অনেক আশাবাদী ছিলেন মারিয়ানা। আমরা ভেবেছিলাম গর্ভাবস্থার জন্য কারামুক্তিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে তাকে। তিনি একজন চিকিৎসক। শরীরের অবস্থা ভালো বোঝেন। গর্ভের শিশু সময়মত লাথি মারতে শুরু করায় মারিয়ানা বলেছিলেন সব ঠিকঠাক চলছে।

ভোরোশেভার বলেন, জুন মাসের শেষ দিকে এক কারারক্ষী মারিয়ানাকে জানান, তাকে অন্তত আরো দেড় মাস বন্দি থাকতে হবে। অর্থাৎ সন্তান জন্মের ছয় সপ্তাহ আগে মুক্তি পেতে পারেন মারিয়ানা। এ খবরে চিন্তিত হন তিনি। তার কাছে মনে হতে থাকে, হয়তো বন্দি অবস্থায় সন্তান জন্ম দিতে হবে তাকে। আর দোনেৎস্ক অঞ্চলের চিকিৎসাসেবা একদম ভঙ্গুর। সেখানে সন্তান জন্ম দেয়া অনেক ভয়ের।

এছাড়াও মারিয়ানা উদ্বিগ্ন এ কারণে যে, কারাগারে সন্তান জন্ম দিলেও তার শিশুকে কেড়ে নেয়া হবে। শিশুকে এ অবস্থায় রাখা যাবে না। এ কারণে এখনই ঝুঁকি নিতে হবে বলে জানান মারিয়ানার স্বামী ভাসিলি।

মারিয়ানার এক বন্ধু কেসনিয়া ফারিনা। তিনিও একসময় কারাবন্দি ছিলেন। তার সঙ্গে কারাগারের অনেক বন্দিদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, মারিয়ানাকে বলা হয়েছিল, তার সন্তানের বয়স তিন বছর হলে তাকে তার থেকে আলাদা করে দেওয়া হতে পারে।

রাশিয়ান প্রোপাগান্ডা ভিডিও থেকে মারিয়ানার বন্দি হওয়ার বিষয়টি তার বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা একটি ভিডিও থেকে জানতে পারে। যা গত ৪ এপ্রিল ট্রেলিগ্রামে চেচনিয়ার শাসক রমজান কাদিরভ পোস্ট করেন। ভিডিওতে দুই শতাধিক ইউক্রেনীয় বন্দিকে দেখানো হয়। সেখানে দাবি করা হয়, বন্দিরা রুশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। আর ঐ ভিডিওটি দেখার পরই মারিয়ানাকে শনাক্ত করেন তার স্বজনরা।

মারিয়ানার বন্ধু ফারিনা বলেন, শুরুতে অনেক আশাবাদী ও ইতিবাচক ছিলেন মারিয়ানা। কিন্তু মারিউপোলের অবস্থা অবনতির কারণে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় তার। তার কাছ থেকে ১৭ মার্চের শেষ চিঠি পেয়েছিলাম। যেখানে লেখা ছিল, ‘আমি বেঁচে আছি’।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর