বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১ |   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইউক্রেনে বিপর্যয়ের মুখে রুশ সেনারা, পুতিন এখন কী করবেন?

প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১ ০৯ ০২  

ইউক্রেনে-বিপর্যয়ের-মুখে-রুশ-সেনারা-পুতিন-এখন-কী-করবেন

ইউক্রেনে-বিপর্যয়ের-মুখে-রুশ-সেনারা-পুতিন-এখন-কী-করবেন

খারকিভ থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। এরপর থেকেই দেশে জাতীয়তাবাদীদের পক্ষ থেকে ব্যাপক চাপ আসছে অঞ্চলটি ফের দখলের জন্য। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনও কোনো মন্তব্য করেননি। এদিকে পশ্চিমা গোয়েন্দা ও স্বতন্ত্র বিশ্লেষকদের ধারণা সঠিক হলে সম্ভাব্য যেসব পদক্ষেপ নিতে পারেন পুতিন, তাতে দেশে ও ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি থাকতে পারে।

১৯৯৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর চেচনিয়ার ইসলামি জঙ্গি ও উত্তর ককেশাস অঞ্চলে সশস্ত্র শত্রু মোকাবিলা করেছেন পুতিন। ওই ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে পুতিন শক্তির প্রয়োগ জোরদার করেছিলেন। ফলে এবার ইউক্রেনে তিনি কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন সেগুলো নিয়ে জোর আলোচনা হচ্ছে। পুতিন যেসব পদক্ষেপ নিতে পারেন তা হলো-

স্থিতিশীল হওয়া, পুনঃসংগঠিত করা, আক্রমণ

মস্কোর দৃষ্টিকোণ থেকে রুশ সেনাদের রণক্ষেত্রে অবিলম্বে স্থিতিশীল হতে হবে, ইউক্রেনের অগ্রগতি ঠেকাতে হবে, পুনরায় সংগঠিত হবে এবং যদি তাদের পক্ষে সম্ভব হয় নিজেদের পাল্টা আক্রমণ চালাতে হবে।

তবে পাল্টা হামলা চালানোর রাশিয়ার পদাতিক বাহিনী বা পর্যাপ্ত সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন পশ্চিমারা। এক্ষেত্রে তারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে ব্যাপক সেনা ও সরঞ্জাম হারানোর বিষয়টি তুলে ধরছেন।

পোল্যান্ডের রোচান কনসাল্টিংয়ের পরিচালক কনরাড মুজিকা বলেন, পুতিনের এখন লোকবল নেই। স্বেচ্ছাসেবী ব্যাটালিয়নের শক্তি কম। নতুন সেনা সংগ্রহের অভিযানও প্রত্যাশামতো চলছে না। খুব কম মানুষ বাহিনীতে যোগ দিতে চাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। 

সেনা সমাবেশ

রাশিয়ার প্রায় ২০ লাখ সাবেক সেনা রয়েছে, যারা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সামরিক বাহিনীতে যুক্ত ছিল। তাদেরকে সমাবেশিত করার সুযোগ রয়েছে রাশিয়ার সামনে। তবে তাদের প্রশিক্ষণ ও মোতায়েনে সময় লাগবে।

দেশব্যাপী সেনা সমাবেশ করতে হলে রাশিয়াকে ইউক্রেনে আক্রমণকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ বদলে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। এতে দেশে পুতিনের রাজনৈতিক ঝুঁকি রয়েছে।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘনিষ্ঠ একটি থিংক ট্যাংক আরআইএসি-এর প্রধান আন্দ্রেই কর্তুনভ বলেছেন, কর্তৃপক্ষ সেনা সমাবেশের পক্ষে নয়। বড় শহরগুলোতে মানুষ ইউক্রেনে গিয়ে যুদ্ধ করতে চায় না। তাদের কাছে বিষয়টি জনপ্রিয়তা পাবে না।

শীতকালের ওপর বাজি ধরা

দুটি সূত্র গত মাসে জানিয়েছিল, পুতিন আশা করছেন আসন্ন শীতে জ্বালানির আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি এবং ঘাটতির ফলে ইউক্রেনকে রাশিয়ার শর্তে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে বাধ্য করতে পারে ইউরোপ। তবে কয়েকজন ইউরোপীয় কূটনীতিক মনে করছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের সাম্প্রতিক সাফল্যের ফলে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির জন্য ইউক্রেনকে চাপ দেওয়ার বিষয়টি আর সামনে আসবে না হয়তো। রুশ তেলের ওপর নির্ভরশীল জার্মানির মতো দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়ানো

উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনে সামরিক বিপর্যয়ের পর রাশিয়া ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চারিয়েছে। এতে খারকিভ ও পাশের পলতোভা ও সুমি অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও পানি সরবরাহ।

এ হামলার পর রুশ জাতীয়তাবাদীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তারা চান ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে এমন হামলা চালিয়ে স্থায়ীভাবে সেগুলো ধ্বংস করা হোক। কিন্তু এমন হামলার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিন্দার ঝড় উঠতে পারে।

খাদ্যশস্য চুক্তি বাতিল

জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রফতানির বিষয়ে চুক্তি নিয়ে অভিযোগ করে আসছেন পুতিন। এ সপ্তাহে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। ইউক্রেনকে যদি আঘাত করতে চান পুতিন তাহলে তিনি এ চুক্তি বাতিল করতে পারেন। 

শান্তিচুক্তি

ক্রেমলিন বলেছে, সময় আসলে শান্তিচুক্তির জন্য কিয়েভকে শর্ত দেবে রাশিয়া। তবে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, দখলকৃত অঞ্চল মুক্ত করতে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হবে। ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করা ক্রিমিয়াকেও মুক্ত করতে চায় কিয়েভ। মস্কো বারবার দাবি করে আসছে, ক্রিমিয়া নিয়ে আলোচনা শেষ হয়ে গেছে চিরতরে।

পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার

ইউক্রেনে মস্কো কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলে পশ্চিমাদের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন রাশিয়ার কর্মকর্তারা। তবুও পশ্চিমাদের মনে এ বিষয়ে এক ধরনের উদ্বেগ রয়েছে। এমন কিছু ঘটলে শুধু যে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ হবে তা নয়, এতে বিপজ্জনক মাত্রায় সংঘাত পৌঁছাবে এবং পশ্চিমা দেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।

সূত্র: রয়টার্স

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর