বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১ |   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাংলাদেশের ২ প্রকল্প পেল ‘আগা খান’ পুরস্কার

প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০ ১০ ০১  

বাংলাদেশের-২-প্রকল্প-পেল-আগা-খান-পুরস্কার

বাংলাদেশের-২-প্রকল্প-পেল-আগা-খান-পুরস্কার

বাংলাদেশের দুটি প্রকল্প বিশ্বব্যাপী স্থাপত্যের অন্যতম বৃহৎ পুরস্কার ‘আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার (একেএএ)-২০২২’ জিতেছে। খন্দকার হাসিবুল কবির ও সুহেলি ফারজানার ঝিনাইদহের ‘আর্বান রিভার স্পেসেস প্রকল্প’ এবং রিজভি হাসান, খাজা ফাতমি ও সাদ বেন মোস্তফার ‘রোহিঙ্গা রিফিউজি রেসপন্স প্রোগ্রাম’- এর কমিউনিটি স্পেসের নকশা এই পুরস্কার জিতেছে।

এ বছর বিজয়ী হিসেবে ছয়টি প্রকল্পের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। উল্লিখিত প্রকল্পগুলো ছাড়াও এ বছর ইন্দোনেশিয়া, ইরান, লেবানন ও সেনেগালের চারটি প্রকল্প এই পুরস্কার জয় করেছে। পুরস্কারজয়ী ছয়টি প্রকল্প একেএএ পুরস্কারের ১০ লাখ ডলার ভাগ করে নেবে।

ঝিনাইদহের আরবান রিভার স্পেসেস
নারী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসহ ঝিনাইদহের সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যাপক অংশগ্রহণে নবগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকা পরিষ্কার করে নদীতে অভিগম্যতা বাড়ানোর এই প্রকল্পটি আপাতদৃষ্টিতে সহজ ছিল। কিন্তু এর মাধ্যমেই স্থানীয় নির্মাণ কৌশল ও সহজলভ্য উপাদান ব্যবহার করে সুবিবেচনাপূর্ণ ও সাদামাটা প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়; যা স্থানীয়দের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

নদী তীরবর্তী পরিত্যক্ত ময়লার ভাগাড়কে একটি আকর্ষণীয় বহুমুখী স্থানে পরিণত করা হয়, যা এরইমধ্যে ঝিনাইদহের মানুষের কাছে ব্যাপক সমাদৃত। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পৃথিবীর অন্যতম নদীবহুল দেশের একটি নদী ও নদী তীরবর্তী অঞ্চলে পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্য বিপর্যয় যেমন রোধ করা গেছে, তেমনি নদীর স্বাভাবিক বাস্তুসংস্থানেরও উন্নতি হয়েছে।

‘আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার (একেএএ)-২০২২’ জয়ী ঝিনাইদহের ‘আর্বান রিভার স্পেসেস প্রকল্প’

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কমিউনিটি স্পেস 
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিভিন্ন জরুরি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দক্ষতা ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে রোহিঙ্গা রিফিউজি রেসপন্স প্রোগ্রামের ছয়টি অস্থায়ী কমিউনিটি স্পেস।

বাংলাদেশের কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে আশ্রয় নেওয়া বিপুল পরিমাণ বাস্তুহারা রোহিঙ্গাদের প্রয়োজন তো বটেই, বিশেষ করে নারী ও মেয়ে শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিশ্চিত করা হচ্ছে। যথাযথ কর্মপরিকল্পনা, জোরালো অংশীদারিত্ব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্পেসগুলোর নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নকশা শরণার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ এবং স্থানের চাহিদার নিরিখে করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগেও বাংলাদেশের কয়েকটি প্রকল্প আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার জিতেছে। ২০১৯ সালে ‘দক্ষিণ কানারচরের আর্কেডিয়া অ্যাডুকেশান প্রকল্প’ (স্থপতি সাইফ উল হকের নকশা) এই পুরস্কার জিতেছিল। একই বছর স্থপতি জুবায়ের হাসানের করা গাজীপুরে ‘অ্যাম্বার লুম ডেনিম শেড’- এর নকশাটি সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পেয়েছিল।

২০১৬ সালের পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে ছিল স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমের নকশা করা ঢাকার ‘বাইত উর রউফ মসজিদ’ ও কাশেফ চৌধুরীর করা গাইবান্ধার ‘ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার’। ১৯৮৯ সালে এই পুরস্কার জিতেছিল ‘গ্রামীণ ব্যাংক হাউজিং প্রোগ্রাম’ ও ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বিল্ডিং’ এবং ২০০৭ সালে রুদ্রপুরের একটি স্কুল পুরস্কারটি জেতে।

‘আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার (একেএএ)-২০২২’ জয়ী  ‘রোহিঙ্গা রিফিউজি রেসপন্স প্রোগ্রাম’- এর কমিউনিটি স্পেস

এই পাঁচটি ছাড়াও ২০১০ সালে আগা খান পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল বাংলাদেশের আরো দুটি প্রকল্প। 

১৯৭৭ সালে আগা খান এই স্থাপত্য পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এই পুরস্কারের মাধ্যমে এমন নির্মাণ শৈলী চিহ্নিত করে উৎসাহ দেওয়া হয়, যাতে মুসলিম অধ্যুষিত জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। এই পুরস্কারের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় একটি স্থাপনা মানুষের আর্থ-সামাজিক চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সাংস্কৃতিক জীবনে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখে, তাও গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।

এই বছর একেএএ এর ৪৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ বিচারক দল ৪৬৩টি প্রকল্পের মধ্য থেকে ২০টি প্রকল্পকে ১৫তম অ্যাওয়ার্ড সাইকেলের (২০২০-২০২২) জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করে। এরপর একটি বিশেষজ্ঞ দল এই তালিকায় থাকা প্রতিটি প্রকল্প সরেজমিন পর্যবেক্ষণের পর জুরিবোর্ড সেগুলোর মধ্য থেকে ছয়টি প্রকল্পকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করেন।

এই বিজয়ী প্রকল্পগুলোর সম্মানার্থে ও ত্রিবার্ষিকীর সমাপনী উপলক্ষে পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় এমন স্থানে যেগুলো স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকে ও সাংস্কৃতিকভাবে মুসলিম দুনিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ।

‘আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার (একেএএ)-২০২২’ জয়ী অন্যান্য প্রকল্পের ছবি

২০২২ সালে ওমানের রাজধানী মাসকাটে আগা খান সঙ্গীত পুরস্কারের সঙ্গে একযোগে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে। পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ২০টি প্রকল্প মনোনয়নের জন্য গঠিত নয় সদস্যের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ বিচারক দলে ছিলেন বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত বেঙ্গল ইন্সটিটিউট ফর আর্কিটেকচার ল্যান্ডস্কেপ অ্যান্ড সেটেলমেন্টসের মহাপরিচালক কাজী খালিদ আশরাফ।

একেএএ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন আগা খান। এছাড়াও স্টিয়ারিং কমিটিতে রয়েছেন ঢাকায় অবস্থিত মেরিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্টসের অধ্যক্ষ মেরিনা তাবাসসুম। পুরস্কার পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন ফররুখ দেরাখশানি।

বিশেষজ্ঞ বিচারক দল কর্তৃক সংক্ষিপ্ত তালিকার জন্য নির্বাচিত ২০টি প্রকল্পে যেসব ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে এ বছরের অক্টোবরে একটি মনোগ্রাফ প্রকাশ করবে আর্কিট্যাঙ্গল। এফএসসি ও ব্লু এঞ্জেল অনুমোদিত শতভাগ পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও জলবায়ু নিরপেক্ষ কাগজে তা মুদ্রিত হবে। সারাহ এম. হোয়াইটিং সম্পাদিত ‘ইনক্লুসিভ আর্কিটেকচার’ নামক সেই বইয়ে পুরস্কৃত ছয়টিসহ সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা ২০টি প্রকল্পের বিবরণ ও ইলাস্ট্রেশন থাকবে।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর