রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১ |   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজ পবিত্র আশুরা

প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০ ১২ ০১  

আজ-পবিত্র-আশুরা

আজ-পবিত্র-আশুরা

আজ ১০ মহররম মঙ্গলবার, পবিত্র আশুরা। আরবি বার মাসের মধ্যে মহররম মাস হচ্ছে অন্যতম। আর মহররম মাসের মধ্যে অন্যতম দিন হচ্ছে দশম দিনটি, যাকে আরবিতে ‘আশুরা’ বলে। ইসলামের ইতিহাসে এ দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত। 

হিজরি সনের প্রথম মাসের এই দিনে পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা হতে এ যাবৎ অসংখ্য বিস্ময়কর ঘটনার তথ্য জানা যায়। শুধু মুসলিম নয়, সব মানুষের কাছে দিনটি অবিস্মরণীয়। 

ইতিহাসে বিশাল জায়গা অধিকার করে আছে পবিত্র আশুরা দিবস। তবে কারবালার শোকাবহ ঘটনাবহুল দিনটিই মুসলমানরা ধর্মীয়ভাবে বিশেষ তাৎপর্য ও গুরুত্বের সঙ্গে পালন করেন। ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের পাশাপাশি, বিশেষ পবিত্র দিবস হিসেবে দিনটি পালন করা হয় মুসলিম বিশ্বে। তাই কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার মহররম কবিতায় লিখেছেন, ‘ত্যাগ চাই, মার্সিয়া ক্রন্দন চাহি না’।

বাংলাদেশেও আজ মঙ্গলবার ১০ মহররম পবিত্র আশুরা (১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯) যথাযোগ্য মর্যাদায় ও কর্মসূচিতে পালন করা হবে। নফল রোজা, নামাজ, জিকির-আসকারের ভেতর দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দিনটি পালন করবেন। বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। মসজিদ, মাদরাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাজধানীর শিয়া সমপ্রদায়ের শত শত মানুষ তাদের পবিত্র স্থান হোসেনি দালান ঘিরে তিন দিন ধরে পালন করেছে নানা আনুষ্ঠানিকতা। শোকের আবহে কালো পতাকা ওড়ানো হয়েছে। ইমাম হোসাইন (রা.) স্মরণে আয়োজন করা হয়েছে বয়ান, জিকির, মাতম, শিরনি বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আশুরা উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, কারবালার শোকাবহ ঘটনা অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে। আলাদা বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আশুরার মহান শিক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর আহ্বান জানান। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদও আলাদা বাণী দিয়েছেন। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি।

হিজরি ৬১ সনের এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেইন (রা.) এবং তার পরিবার ও অনুসারীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন।

পবিত্র আশুরা তাই মুসলিম উম্মাহর জন্য এক তাৎপর্যপূর্ণ ও শোকাবহ দিন। দিনটি মুসলমানদের কাছে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠারও দিন। এ দিনটি মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার কাছে খুবই প্রিয়। তাই তিনি এ দিনে রোজা পালনের সওয়াব প্রদান করে থাকেন বহুগুণে। মুসলমানদের কাছে বিগত বছরের সগিরা গোনাহ এর কাফফারা হিসেবে মহররমের দুটি রোজা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

হজরত আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো আল্লাহর প্রিয় মুহাররম মাসের রোজা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম মদীনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদীরা আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন এটা কোন দিন যে তোমরা রোজা পালন করছ?

তারা বলল, এটা এমন এক মহান দিবস যেদিন আল্লাহ হজরত মুসা (আ.) ও তার সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরআউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। মুসা (আ.) শুকরিয়া হিসেবে এ দিনে রোজা পালন করেছেন। এ কারণে আমরাও রোজা পালন করে থাকি।

এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা (আ.) এর অধিকতর ঘনিষ্ঠ ও নিকটবর্তী। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম রোজা পালন করলেন ও অন্যদেরকে রোজা পালনের নির্দেশ দিলেন।

মহানবী (সা.) তাঁর ইন্তেকারের পূর্বে ইয়াহুদিদের বিপরীত পন্থা অনুসরণের লক্ষে ১০ মহররমের পূর্বে ৯ মহররম আরো একদিন রোজা রাখার আশা ব্যক্ত করেন। (সহীহ মুসলিম, হা: ১১৩৪) তাই কেউ যদি আশুরায়ে মহররমের উদ্দেশ্যে রোজা পালন করতে চায় তাহলে তাকে দু’টি রোজা রাখতে হবে। অর্থাৎ-৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ মহররম। ১০ মহররম শুধু একটি রোজা পালন করা ঠিক হবে না।

এ ঘটনা স্মরণ করে বিশ্ব মুসলিম যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে থাকে। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে তাদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।

কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা ও পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী সবাইকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা যোগায়।

এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ হোসনি দালানসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাজিয়া মিছিল বের হবে। মিছিলটি ধানমন্ডি লেকে এসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক বিশেষ প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও-টিভি চ্যানেলও এই দিনের তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে।

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া শোক মিছিলে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন। 

রাজধানীর বড় কাটারা ইমামবাড়া, খোজা শিয়া ইসনুসারী ইমামবাড়া এবং বিবিকা রওজায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি ইমামবাড়া সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে প্রত্যেক দর্শনার্থীর দেহ তল্লাশি করে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করানো হবে।

ডিএমপি কমিশনার তাজিয়া মিছিলে ঢোল বাজিয়ে দা, ছুরি, তলোয়ার ও লাঠিখেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে জানিয়ে আরো বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে এসব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১২ ফুটের বেশি বড় নিশান মিছিলে ব্যবহার করা যাবে না। আগুনের ব্যবহার করা যাবে না। মিছিলে ব্যাগ, পোঁটলা, টিফিন ক্যারিয়ার বহন করা যাবে না। মাঝপথে কেউ মিছিলে অংশ নিতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।



দৈনিক প্রভাতী/আরএজে/আরএ

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর