বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১ |   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

৬ লেন সড়কের পাঁচ কিলোমিটার দৃশ্যমান

প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২২ ১৭ ০৫ ০২  

৬-লেন-সড়কের-পাঁচ-কিলোমিটার-দৃশ্যমান

৬-লেন-সড়কের-পাঁচ-কিলোমিটার-দৃশ্যমান

বঙ্গবন্ধু টানেল সংযোগ সড়ক ক্রসিং ওয়াই জংশন থেকে আনোয়ারার কালাবিবির দীঘির মোড় পর্যন্ত ছয় লেন সড়কের চার লেনের কাজ শেষ করতে হবে টানেল উদ্বোধনের আগেই। এরই মধ্যে চার লেন সড়কের পাঁচ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ হয়েছে। চলছে বাকি তিন কিলোমিটারের কাজ। এসব কাজ শেষ হলে সড়কে কার্পেটিং শুরু হবে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিএ।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, টানেলের সংযোগ সড়ক হিসেবে ক্রসিং ওয়াই জংশন থেকে কালাবিবির দীঘির মোড় পর্যন্ত ২৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আট দশমিক ১০ কিলোমিটার ছয় লেন সড়কের নির্মাণকাজ চলছে। ২০২১ সালের এপ্রিলে এটির নির্মাণকাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিএ। সব কাজ শেষ করে চলতি বছরের ডিসেম্বরে চার লেন সড়ক যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। বাকি দুই লেনের কাজ শেষ করতে সময় লাগবে আরো এক বছর।

সওজ’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. পারভেজ জানান, ক্রসিং ওয়াই জংশন থেকে কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু টানেল সংযোগ সড়ক রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট (কেপিএ)। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিএ’র বেইজ ক্যাম্প এলাকায় সওজ’র তত্ত্বাবধানে রয়েছে আধুনিক মানের ল্যাব। সেখানে প্রকল্পে ব্যবহৃত ইট, বালু, কংক্রিট, পাথর, বিটুমিন, রডসহ সবকিছু পরীক্ষার মাধ্যমে মান যাচাই শেষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্মাণকাজে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। এছাড়া এ প্রকল্পের কাজের মান যাচাইয়ে সওজ’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিএ’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সৈয়দ আব্দুল হান্নান জানান, ক্রসিং থেকে কালাবিবির দীঘি মোড়ের সড়কের ১৬টি কালভার্ট নির্মাণ শেষ হয়েছে। প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় বিভিন্ন স্থানে আরো পাঁচটি কালভার্ট তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়। ছয় লেন প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ আগামী তিন মাসের মধ্যে শেষ করা যাবে।

এদিকে, তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু টানেলের ৯১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই টানেলটি উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

চীনের সাংহাই শহরের আদলে বন্দরনগর চট্টগ্রাম শহরকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নগরের পতেঙ্গা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। পরে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানেলটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প ঋণ হিসেবে পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। এছাড়া বাকি অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি)। টানেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের জটিল কাজ শেষ। এখন কিছু টেকনিক্যাল কাজ চলছে। টানেলটির দৈর্ঘ্য তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেলের প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য দুই দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দুই সুড়ঙ্গে দুটি করে থাকছে মোট চারটি লেন। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্বে পাঁচ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ উড়ালসেতু।

টানেলের একপ্রান্ত আনোয়ারায় সিইউএফএল, কাফকো, কোরিয়ান ইপিজেড, প্রস্তাবিত চায়না ইপিজেড, পারকি সমুদ্র সৈকত। আনোয়ারা দিয়েই বাঁশখালী, কক্সবাজার, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল এবং মীরসরাই ও ফেনীর সোনাগাজীর বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সঙ্গে যোগাযোগের লক্ষ্যেই নেয়া হয় এ টানেল প্রকল্প।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এটি চালু হলে ত্বরান্বিত হবে কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন। পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর-বিমানবন্দরের সঙ্গেও স্থাপিত হবে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। কমে যাবে ভ্রমণের সময় ও খরচ।

এছাড়া পূর্বপ্রান্তের শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুত করা মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দরসহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে বিকশিত হবে পর্যটনশিল্প।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী