মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১ |   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মোতালেব মিয়ার হাড়ভাঙা কষ্টের জীবন

প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২২ ১৫ ০৩ ০১  

মোতালেব-মিয়ার-হাড়ভাঙা-কষ্টের-জীবন

মোতালেব-মিয়ার-হাড়ভাঙা-কষ্টের-জীবন

শরীরের দিকে তাকালেই বয়সের ছাপ চোখে পড়ে। বয়সের ভারে কোমড় বাঁকা হয়ে গেছে; তারপরেও পেটের দায়ে কাজতো করতেই হবে। জন্মের পর বুঝতে পারা থেকেই বাপ-দাদার হাত ধরে কৃষি কাজ শুরু করেন মোতালেব মিয়া। দারিদ্রের কষাঘাতে লেখাপড়া কপালে জুটেনি মোতালেব মিয়ার। 

উপকূলীয় পাথরঘাটা উপজেলার বাদুরতলা গ্রাম থেকে পদ্মা গ্রামে ছুটে চলা। পশ্চিম বাদুরতলা গ্রামের ডাক্তার বাড়ির সামনে ধান ক্ষেতে দেখা হয় ৯০ বছরের বৃদ্ধ মোতালেব মিয়ার সঙ্গে। ধান ক্ষেতে নিজেই লাঙ্গল দিয়ে চাষ করে ধানের বীজ রোপণ করছেন। 

আরো পড়ুন >>> কানের দুলের জন্য গৃহবধূকে হত্যা, ৩ জনের ফাঁসি

৯০ বছরের বৃদ্ধ মোতালেব মিয়া উপকূলবর্তী পাথরঘাটা উপজেলার পাথরঘাটার সদর ইউপির বাদুরতলা গ্রামের মৃত আয়জদ্দিন হাওলাদারের ছেলে। প্রতিনিয়ত মোতালেব মিয়ার চলছে হাড়ভাঙা কষ্টের জীবন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে বিয়ে দেয়ার পর স্বামীর সংসার নিয়ে থাকেন আর একমাত্র ছেলে সন্তান জীবিকার তাগিদে খাগড়াছড়ি থাকেন। নিজের সংসার চলছে টানাপোড়েনের মধ্যে। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বাবা-মায়ের দেখভাল করার মতো সামর্থ্য ছেলের নেই। স্ত্রী মনোয়ারা বেগমকে নিয়ে বাবার ভিটিতে থাকেন। তার বাবার রেখে যাওয়া ৭ কাঠা জমিই একমাত্র অবলম্বন।

৯০ বছর বয়সেও কৃষি জমিতে কাজ করছেন মোতালেব মিয়া

মোতালেব মিয়া বলেন, অভাবের সংসারে ছোট থেকেই বাবার সঙ্গে কাজ করেছি। লেখাপড়া আর হয়নি। ছোটবেলা থেকেই এই কাজ করেই কোনো রকম দিন পার করছি। বৃদ্ধ বয়সে এসেও কৃষি ক্ষেতে কাজ করতে হচ্ছে। ৭ কাঠা জমি নিজেই চাষ করে এখন বীজ রোপণ করছি।

৯০ বছর বয়সী মোতালেব মিয়া

তিনি জানান, মাঝে মধ্যে ঝড় জলোচ্ছ্বাসের কারণে ফসল নষ্ট হলেও তিনি কখনই হাল ছাড়েননি। নতুন উদ্যমে নতুন করে ফসল আবাদ করেছেন। মাটি ও আবহাওয়া কৃষির জন্য বেশ উপযোগী বলে মনে করেন এই সফল কৃষক। তার জমি কখনই অনাবাদি থাকেনি।

আরো পড়ুন >>> বিকট শব্দে বিটুমিনের ড্রাম বিস্ফোরণ, ৩ শ্রমিক দগ্ধ

সারাবছরই তিনি কোনো না কোনো ফসলের আবাদ করেছেন। প্রতি বছরের মতো এ বছরও ফসল অনেক ভালো হবে বলে আশাবাদী তিনি।

৯০ বছর বয়সেও কৃষি জমিতে কাজ করছেন মোতালেব মিয়া

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংকল্প ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ বলেন, পাথরঘাটায় বেশিরভাগই মাছ ধরা ও কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। ছোট থেকে বৃদ্ধ বয়সে এসেও কৃষি ক্ষেতে কাজ করতে হয়। তবে মোতালেব মিয়ার বিষয় একটু ভিন্ন। ৯০ বছর বয়সে এসেও কৃষি ক্ষেতে কাজ খুব কম দেখা যায়। সাধারণত এমন বয়সে এসে ঝুঁকির কাজ করা সম্ভব নয়; কিন্তু মোতালেব মিয়া পেটের দায়ে নিরুপায় হয়েই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী