শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১ |   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীর

প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০ ০৮ ০২  

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়-শেষ-মুহূর্তে-ব্যস্ত-সময়-পার-করছেন-প্রতিমা-শিল্পীর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়-শেষ-মুহূর্তে-ব্যস্ত-সময়-পার-করছেন-প্রতিমা-শিল্পীর

দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রতিটি মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির শেষ মুহূর্তের কাজ। মূলত এখন চলছে সাজসজ্জার কাজ। রং তুলির আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে বর্ণিল সাজে। পূজার সময় ঘনিয়ে আসায় এখন দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা।

দেবী দুর্গার সঙ্গে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতী দেবীকেও। দম ফেলার ফুসরত নেই মৃৎশিল্পীদের। পুরুষদের কাজে সাহায্য করছে বাড়ির নারীরাও। এবার দেবী দুর্গার আগমন ঘটবে গজে (হাতির পিঠে চড়ে) আর বিদায় নেবেন দোলায় চড়ে।

এদিকে ভক্তরা দেবী দুর্গার বলছেন মায়ের আগমনে ভক্তরা সকলেই পুলকিত। ভক্তদের মনে লেগেছে আনন্দের দোলা। পাশাপাশি এ বছর পূজা মন্ডপগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা লাগানো বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে।

জেলা শহরের কান্দিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রুপা সাহা জানান, উৎসব যেন সবাই আনন্দের সঙ্গে মিলে মিশে করতে পারি সেটাই কাম্য। মায়ের আগমন উপলক্ষে আমরা সবাই বেশ খুশি। পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করেছি। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত মায়ের রাতুল চরণে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করবো।

জেলা শহরের মেড্ডা এলাকার বাসিন্দা রাজু দেব ও লিটন সাহা বলেন, আমরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি কখন আসবে মাহেন্দ্রক্ষণ। মায়ের রাতুল চরণে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করবো। এবার মায়ের কাছে দেশের জন্য দশের জন্য প্রার্থনা করবো।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের পূর্বপাইক পাড়া গগন সাহাবাড়ি রোড সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিষ কুমার সাহা জানান, এ বছর মায়ের আগমনে আমরা অনেকটাই পুলকিত। আমরা সরকার নির্দেশিত নিয়ম মেনেই পূজার আয়োজন করেছি। এরই মধ্যে আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। মণ্ডপে প্রতিমা আনা হয়েছে। কিছুটা সাজ শয্যার কাজ চলছে। আমরা পঞ্জিকার তিথি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাড়া প্রতিবেশীসহ পূজা কমিটির সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মায়ের রাতুল চরণে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করবো।

জেলার নবীনগর উপজেলার ভোলাচং গ্রামের মৃৎশিল্পী বরেন পাল জানান, দুর্গাপূজার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি আছে। শেষ মুহূর্তে আমরা প্রতিমার গায়ের সাজসজ্জার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রতিমার কাজ শেষ করে সবাইকে বুঝিয়ে দিতে হয়। তারা প্রতিমা নিয়ে নিজ-নিজ এলাকায় মণ্ডপে স্থাপন করবেন। সেজন্য নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি।

একই কথা জানান মলাই চন্দ্র পাল নামে অপর এক মৃৎশিল্পী। তিনি জানান, কাজ শেষ হতে এখনো বাকি আছে। এর কারণে অনেক ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। তবে শেষ সময়ের আগেই কাজ সমাপ্ত করে পূজারিদের হাতে প্রতিমা তুলে দেবো। সেজন্য রাতদিন কাজ করছি। গতবার ৩২টি প্রতিমা তৈরি করেছিলাম। এবার ৪২টি প্রতিমা তৈরি করছি। ভক্তদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষের চেষ্টা করছি।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব চন্দ্র সাহা জানান, ২০২১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৮৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ বছর জেলায় ৬০৫টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় ৭৮টি, নাসিরনগর উপজেলায় ১৫১টি, নবীনগর উপজেলায় ১৩৩টি, বিজয়নগর উপজেলায় ৫৭টি, সরাইল উপজেলায় ৪৯টি, কসবা উপজেলায় ৫৪টি, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ৪৭টি, আখাউড়া উপজেলায় ২২টি এবং আশুগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ১৪টি পূজা মণ্ডপ। গত বছরের তুলনায় এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২১টি পূজা মণ্ডপ বেড়েছে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

ডিসি মো. শাহগীর আলম বলেন, এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৬০৫টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। গত বছরের তুলনায় এ বছর পূজা মণ্ডপ বেড়েছে। এ বছর পূজা মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা লাগানো বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী