বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১ |   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিয়ের সাড়ে ৬ মাসেই নিথর হলেন প্রিয়াসা

প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২২ ১৮ ০৬ ০১  

বিয়ের-সাড়ে-৬-মাসেই-নিথর-হলেন-প্রিয়াসা

বিয়ের-সাড়ে-৬-মাসেই-নিথর-হলেন-প্রিয়াসা

সুখের আশায় নাসরুল্লাহকে বিয়ে করেন প্রিয়াসা। প্রথমদিকে ভালোই কাটছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। তবে মাস তিনেক পার হতেই ফাটল ধরে সংসারে। যৌতুকের দাবিতে প্রিয়াসাকে নির্যাতন শুরু করেন স্বামী নাসরুল্লাহ।

শুধু স্বামী একাই নয়, তার শ্বশুরবাড়ির অন্যরা তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা শুরু করেন। অবশেষ বিয়ের সাড়ে ছয় মাসের মাথায় নিজ ঘর থেকে পাওয়া গেল প্রিয়াসার নিথর দেহ।

ঘটনাটি বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ডহরপুর গ্রামের। মৃত ২৩ বছরের সৈয়দা সারাহ্ প্রিয়াসার মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে-এ নিয়ে চলছে গুঞ্জন। সন্দেহের তীর তার স্বামীর দিকে।

মৃত প্রিয়াসা নওগাঁ সদরের মাস্টারপাড়া এলাকার জসিম উদ্দিনের মেয়ে। তার শ্বশুরবাড়ি বগুড়া আদমদীঘির ডহরপুর গ্রামে। প্রিয়াসার স্বামী নাসরুল্লাহ হক ঐক্যে ওই গ্রামের আনোয়ারুল হক পল্টুর ছেলে।

মৃত প্রিয়াসার স্বজনদের দাবি, যৌতুকের দাবিতে প্রিয়াসাকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। পরে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রিয়াসা আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রচারণা চালানো হয়।

এ ঘটনায় মৃত প্রিয়াসার মা ইয়াসমিন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় তিনজনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন- নাসরুল্লাহ, তার বাবা আনোয়ারুল হক পল্টু ও মা খন্দকার নিসাত। মামলার পর পুলিশ হেফাজতে থাকা প্রিয়াসার স্বামী নাসরুল্লাহকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে জানান আদমীঘি থানার ওসি মো. রেজাউল করিম রেজা। রোববার এ মামলা করা হয়।  

এদিকে প্রিয়াসার শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলছেন, পারিবারিক কলহের জেরে নিজ ঘরের সিলিংফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন প্রিয়াসা।

শনিবার সন্ধ্যায় খবর পেয়ে প্রিয়াসার লাশ উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় পুলিশ। পরে রোববার দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য প্রিয়াসার লাশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপরই থানায় হত্যা মামলা করেন মৃতের মা।

নাসরুল্লাহ হক ঐক্যের মা খন্দকার নিসাত ও চাচা আনিছুল হক নান্টু জানান, পারিবারিক কলহের জেরে শনিবার বিকেলে অভিমানে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন প্রিয়াসা। যৌতুকের দাবিতে তাকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা হয়নি।

তারা আরো জানান, নিজ ঘরের সিলিংফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিলেন প্রিয়াসা। ওই সময় তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে প্রিয়াসার মরদেহ উদ্ধার করে।

মৃত প্রিয়াসার মা ইয়াসমিন, বোন শারমিন আক্তার লাবণী ও ভাই সৈয়দ আদনান জানান, বিয়ের পর কিছুদিন ভালোই কাটছিল নাসরুল্লাহ ও প্রিয়াসার দাম্পত্য জীবন। তবে পরবর্তীতে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন নাসরুল্লাহ। বিষয়টি নিয়ে তাদের পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। এমনকি অনেকবার প্রিয়াসাকে নির্যাতনও করা হয়েছে। এছাড়া সবসময়ই প্রিয়াসাকে মানসিক নির্যাতন করা হতো। শেষ পর্যন্ত যৌতুকের দাবিতে তাকে হত্যা করা হলো। হত্যার পর আত্মহত্যা বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

ওসি মো. রেজাউল করিম রেজা বলেন, প্রিয়াসার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এ মামলায় মৃতের স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী