সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১ |   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রতিবন্ধকতা নিয়েও তারা অদম্য

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২২ ১৫ ০৩ ০২  

প্রতিবন্ধকতা-নিয়েও-তারা-অদম্য

প্রতিবন্ধকতা-নিয়েও-তারা-অদম্য

কারো হাত নেই, কারো নেই পা। তবে অধিকাংশরই নেই এক পা। কিন্তু ক্রেচে ভর করে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও তারা আজ অদম্য। নানা বয়সী কিশোর ও যুবক এক পায়ে বুট ও গায়ে জার্সি পরে পুরো মাঠ বল নিয়ে শারীরিক কসরতে ব্যস্ত সময় পার করেন। উদ্দেশ্য গাজীপুর জেলায় এমপিউটি ফুটবল টিম তৈরি।

এক পায়ের এই ফুটবল সম্পর্কে স্থানীয়দের অবগত করতে অতি সম্প্রতি কালীগঞ্জ রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ (আরআরএন) পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এমপিউটি ফুটবল জাতীয় দল ও গাজীপুর টিমের মধ্যে এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ম্যাচে ১—০ গোলে গাজীপুর টিমকে পরাজিত করে এমপিউটি জাতীয় দল।  উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত ওই প্রীতি ফুটবল ম্যাচে শারীরিক প্রতিবন্ধী ফুটবলারদের উৎসাহ দিতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি।

শারীরিক প্রতিবন্ধী ফুটবলারদের উৎসাহ দিতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি।
 
ত্রিশোর্ধ মো. শিপন মিয়া। বাড়ি গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জে উপজেলার বক্তারপুর গ্রামে। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জে এক ট্রাক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। এরপর অপারেশনে তার এক পা হাঁটু থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান শিপন ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি প্রবল আগ্রহ। সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্বপ্নের পথে তৈরি হয় বাঁধা। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে উঠলে দুই ক্রেচে ভর দিয়েই শুরু হয় ফুটবলের প্রতি তার ভালোবাসা। এখন তিনি এমপিউটি জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়ার। এই সুবাদে লাল সবুজের জার্সি গায়ে বিশ্বকাপ কোয়ালিফাই ম্যাচে জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলছেন এমপিউটি ফুটবলের গাজীপুর টিম। 

প্রীতি ফুটবল ম্যাচে শারীরিক প্রতিবন্ধী ফুটবলারদের বল দখলের লড়াই

শুধু শিপন নয়, একই উপজেলার বেরুয়া গ্রামের কিশোর নাদিম। ২০১৩ সালে ইট ভাঙার মেশিনে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পা হারায়। সেও এখন এক পায়ের ফুটবল ভালো খেলতে পারে। তৃনমূল থেকে সফলতার সঙ্গে জাতীয় দলে খেলতে চান তিনি। নাদিম বলেন, ভালো প্রশিক্ষণ ও সুযোগ পেলে শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও ঘুরে দাঁড়াতে পারে। গাজীপুরের এমপিউটি ফুটবল নিয়ে আমরা অনেক দূর যেতে চাই।

প্রীতি ফুটবল ম্যাচে শারীরিক প্রতিবন্ধী ফুটবলারদের বল দখলের লড়াই

উপজেলার বাঙ্গালহাওলা গ্রামের আরেক কিশোর তামিম, ২০১৬ সালে এক দুর্ঘটনায় সেও এক পা হারায়। তবে সে থেমে যায়নি। ক্রেচে ভর করে শারীরের অপূর্ণতা নিয়েও সে গাজীপুরের এমপিউটি ফুটবলটিমের একজন সদস্য। মনের জোর ও নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকলে সব প্রতিবন্ধকতা জয় করা যায় বলে মনে করেন তামিম।

প্রীতি ফুটবল ম্যাচে শারীরিক প্রতিবন্ধী ফুটবলারের বল দখলের লড়াই

উদ্যোক্তা শিপন মিয়া বলেন, আমাদের টিমের দলের প্রত্যেকেই সমাজের নিম্ন শ্রেণির। একদিকে দারিদ্রতা, অপরদিকে প্রতিবন্ধকতা। টিমের অনেক সদস্যই সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারিয়েছে। তবে মনের শক্তির জোরেই তারা ফুটবল খেলতে এসেছেন। গাজীপুর এমপিউটি টিমের সবাই বিদেশের মাটিতে দেশের পতাকা উড়াতে চায়। তবে টিমের নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে বলে তিনি জানান। প্রশিক্ষণের জন্য সপ্তাহের একদিন তাদের এক হতে হয়। রয়েছে এমপিউটি ফুটবলের সরঞ্জামের অভাব। এতোকিছুর পরও আমরা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয়ী করতে চাই। তাই এই ফুটবলকে এগিয়ে নিতে সরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ের সহযোগীতার প্রত্যাশা করেন তিনি।

এমপিউটি জাতীয় ফুটবল দল

বাংলাদেশ জাতীয় এমপিউটি ফুটবল দলের প্রশিক্ষক শাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে এমপিউটি ফুটবলের নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। শিশু ও কিশোরদের এ খেলায় আনলে ভালো হতো। তবে আমাদের দেশে এমন খেলোয়ার নেই বললেই চলে। এছাড়াও সারাদেশে এমপিউটি ফুটবল টিমও নেই। এ ধরনের ফুটবলের জন্য তৃনমূলেই সারা জাগাতে হবে। গাজীপুরে একটি টিম গড়ে উঠার সংবাদটি আমাদের জন্য সুখবর। এভাবে দেশের প্রতিটি জেলায় এমন উদ্যোগ নিলে একসময় অনেক খেলোয়ার উঠে আসবে।

তিনি আরো বলেন, ১৯৮৪ সাল থেকে এমপিউটি বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতি চার বছর পর পর বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি দলে ৭ জন করে খেলোয়ার থাকে। একজন গোলকিপার ও ৬ জন আউটফিল্ডে খেলে। তবে আমাদের দেশে এমপিউটি ফুটবল তেমন জনপ্রিয় না হলেও বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিভিন্ন দেশে রয়েছে এমপিউটি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। শারীরিক অক্ষম ব্যক্তিরা এ ধরনের ফুটবল খেলে। তবে এমপিউটি নিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাকুফে) জাগরন তৈরি করতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।

গাজীপুর জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক এস. এম আনোয়ারুল করিম বলেন, তাদেরকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে যদি রেজিস্ট্রেশন দিতে পারি, তাহলে সব জায়গা থেকে সুযোগ সুবিধা নিতে পারে। তাছাড়া সমাজসেবা, জেলা প্রশাসন সব সময় পাশে থাকবে। আমরা সবাই মিলে কিভাবে এই এমপিউটি ফুটবল টিমটাকে এগিয়ে নেয়া যায় সেই চেষ্টাটা আমাদের থাকবে। 

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী