মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১ |   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নাকুগাঁও স্থলবন্দর এখন সৌভাগ্যের প্রতীক

প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২২ ২০ ০৮ ০২  

নাকুগাঁও-স্থলবন্দর-এখন-সৌভাগ্যের-প্রতীক

নাকুগাঁও-স্থলবন্দর-এখন-সৌভাগ্যের-প্রতীক

নাকুগাঁও স্থলবন্দর। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত দেশের অন্যতম এই বন্দরটি আমদানি-রফতানিকারকদের নতুন দিগন্তের পথ দেখাচ্ছে। এই বন্দরটি চালু হওয়ায় স্থানীয়রাসহ দেশের নানা প্রান্তের ব্যবসায়ীরা এখানে এসে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে শ্রমিক নেতারা বলছেন, বন্দরের কর্মকাণ্ড ঘিরে হাজারো শ্রমিক পেয়েছেন কর্মসংস্থানের পথ।

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন এবং স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ৩৩ বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৯৮ সালে নাকুগাঁও বন্দরটি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টসহ স্থল শুল্কবন্দর হিসেবে পুনরায় চালু হয়। এরপর থেকেই এ বন্দর দিয়ে কয়লা, পাথর আমদানি এবং সিমেন্ট, শাড়ি, জুস, মশারির কাপড়, জুটসহ নানা বৈধ পণ্য আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। এছাড়া এ বন্দর দিয়ে বাংলা-ভুটান ট্রানজিট রুটসহ ত্রিপক্ষীয় বাণিজ্যের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু অপ্রশস্ত রাস্তাঘাট, অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবে এ বন্দরের সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়। পরে এলাকার এমপি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এ বন্দরের গুরুত্ব অনুধাবন করে এটিকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু করেন।

পরে ২০০৯ সালের ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বন্দরটি পরিদর্শন করে এটিকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে চালুর ঘোষণা দেন।

ছবি: দৈনিক প্রভাতীপরবর্তীতে প্রায় ১৪শ’ শতাংশ জমির ওপর ১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ২৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নাকুগাঁও থেকে নকলা উপজেলা পর্যন্ত সাড়ে ২৯ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের কাজ করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৮ জুন নাকুগাঁও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব পরিচালনায় কার্যক্রম শুরু করে।

নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে আমদানির অনুমতি থাকা পণ্যগুলো হচ্ছে, গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, বীজ, গম, পাথর, কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলক্লে ও কোয়ার্টজ। 

শ্রমিক রুহুল আমীন বলেন, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সৌভাগ্যের প্রতীক এখন নাকুগাঁও স্থলবন্দর। এই বন্দর দিয়ে বর্তমানে পাথর আমদানি বেশি হচ্ছে। এখানে কাজ পেয়ে আমরা খুশি।

নাকুগাঁও স্থলবন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলম বলেন, বন্দরে ইউনিয়নভুক্ত শ্রমিক রয়েছেন ৮শ’ জন। এছাড়া পাথর ভাঙার জন্য দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে আরো তিন হাজার শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন মেশিনপত্র পরিচালনার জন্য প্রায় ৩শ’ জন শ্রমিক রয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে আলম বলেন, ইউনিয়নভুক্ত লোড-আনলোড শ্রমিকরা গড়ে প্রতিদিন ৭০০-১০০০ টাকা মজুরি পান। আর অন্যরা ৪০০-৫০০ টাকা হারে মজুরি পেয়ে থাকেন।

আলম জানান, বাড়ির কাছে স্থলবন্দর হওয়ায় খুব সহজেই তারা কর্মক্ষেত্র খুঁজে নিতে পেরেছেন। অন্যথায় ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে গিয়ে তাদের কাজ করতে হতো।

ছবি: দৈনিক প্রভাতীনাকুগাঁও স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন, এই বন্দরটি চালু হওয়ায় স্থানীয়রাসহ দেশের নানা প্রান্তের ব্যবসায়ীরা এখানে এসে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এই বন্দর চালু না হলে হয়তো আমরা কর্মহীন থাকতাম। 

এ সময় তিনি জানান, ভারতের আসাম রাজ্য থেকে তারা শুঁটকি মাছ, খৈল, সুপারি এবং পশুখাদ্যও আমদানি করতে চান। এ বিষয়ে ছাড়পত্র পেতে একটি লিখিত আবেদন চলতি মাসে জাতীয় রাজস্ব বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আর এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সির কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত লিখিতভাবে তাদেরকে অবহিত করা হয়নি।

বন্দরটির সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বন্দর দিয়ে অনুমোদিত ১৯টি পণ্য আমদানি ও নিষিদ্ধ ব্যতীত সব পণ্য রফতানি করা যাবে। গত তিন মাসে এই বন্দর থেকে সরকারের ৮৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী