বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১ |   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ডাক্তার হওয়ার বদলে যেভাবে গীতিকার হলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার

প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৫ ০৩ ০১  

ডাক্তার-হওয়ার-বদলে-যেভাবে-গীতিকার-হলেন-গাজী-মাজহারুল-আনোয়ার

ডাক্তার-হওয়ার-বদলে-যেভাবে-গীতিকার-হলেন-গাজী-মাজহারুল-আনোয়ার

যে দিনগুলোতে বাংলাদেশের মানুষজন পছন্দের গান শোনার জন্য বেতারে কান রাখতেন, যখন দেশে টেলিভিশন চ্যানেল ছিল মাত্র একটি সেসময় দিনে অনেকবার শোনা যেত গাজী মাজহারুল আনোয়ার রচিত গান। আজ রোববার সকালে মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশের অনেক কালজয়ী দেশাত্মবোধক গানের রচয়িতা গাজী মাজহারুল আনোয়ারের।

তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। সকালে অসুস্থ বোধ করলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

তিনি একই সঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, জনপ্রিয় অনেক চলচ্চিত্রের গানের গীতিকার। কিন্তু পাঁচ দশকের মতো সময় তিনি দোর্দণ্ড প্রতাপে বাংলাদেশের সঙ্গীতের জগতে বিচরণ করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ যে দিনগুলো বছরের নানা সময় উদযাপন করা হয় সেসময় সারা দেশজুড়ে বাজানো হয় তারই লেখা, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’।

দুই হাজার ছয় সালে বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের মনোনীত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের তালিকায় ছিল তার রচিত ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়ে’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল’ এই তিনটি গান।

ষাটের দশকের শুরুতে তিনি চিকিৎসায় পড়াশুনা শুরু করেন। ২০১৩ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, জন্মস্থান কুমিল্লায় স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তিনি দেয়াল পত্রিকায় কবিতা লিখতেন।

কবিতা লেখা কিভাবে তাকে গানের রচয়িতা করে তুলল সেটি বর্ণনা করে তিনি বলছিলেন, ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর যখন মেডিকেল কলেজে এসে ভর্তি হলাম, সেখানে একটা নাটক হওয়ার কথা। সেটাতে একটা গানের প্রয়োজন হয়েছিল। গানটা সেসময়কার প্রখ্যাত আবু হেনা মোস্তফা কামাল সাহেবের লেখার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সময় স্বল্পতার কারণে গানটা লিখতে পারেননি। তো আমি সেই সময় নাটকের পরিচালককে বললাম আপনি ইচ্ছা করলে আমাকে একটু ট্রাই করে দেখতে পারেন। তারপর আমি একটি গান লিখে ফেললাম।

সেই গানটি পরে গেয়েছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন। সেভাবেই রেডিওতে গানের রচয়িতা হিসেবে তার অভিষেক।

ব্যাস এরপর থেকে রেডিও পাকিস্তানের গান লেখার চেষ্টা করলেন এবং পাঁচ দশকের মতো সময় ধরে তার গানে উঠে এসেছে দেশপ্রেম, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মানুষের জীবনের গল্প, প্রেম, বিরহের কথা। এই বিষয়গুলিই গান লেখায় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেগ এনে দিয়েছে।

১৯৬৭ সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকে কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গান লেখায়ও দক্ষতা দেখান তিনি। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘নান্টু ঘটক’ ১৯৮২ সালে মুক্তি পায়। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৪১টি।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার ২০০২ সালে একুশে পদক এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম পুরস্কার ‘বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। এ ছাড়াও পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও একাধিকবার বাচসাস পুরস্কারসহ তার অর্জিত পুরস্কারের সংখ্যা ১১০।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী