বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১ |   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঝুড়ি ব্যাগে স্বাবলম্বী পাহাড়ি মেয়েরা

প্রকাশিত: ৬ অক্টোবর ২০২২ ১৯ ০৭ ০২  

ঝুড়ি-ব্যাগে-স্বাবলম্বী-পাহাড়ি-মেয়েরা

ঝুড়ি-ব্যাগে-স্বাবলম্বী-পাহাড়ি-মেয়েরা

রাঙ্গামাটির সদর উপজেলার মগবান ইউপির বড়াদম এলাকার অধিকাংশ ঘরে ঘরে প্লাস্টিকের বেত দিয়ে সুন্দর এবং বাহারি ডিজাইনের ছোট, বড় এবং মাঝারি ধরনের ঝুড়ি ব্যাগ বুনছেন পাহাড়ি মেয়েরা। 

পরিবারের যাবতীয় কাজ শেষ করে ব্যাগ বুননের কাজে লেগে পড়েন পাহাড়ি মেয়েরা। তাদের একটি ব্যাগ বুনতে সময় লাগে একদিন বা আধা বেলা। বেতের ঝুড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে মগবান ইউনিয়নের শত-শত নারীরা। 

পাহাড়ি নারীদের একটি বিকল্প কর্মসংস্থানের জায়গা হলো এই বেতের তৈরি ঝুড়ি ব্যাগ শিল্পে। যাদের অনেকেই ঝুড়ি ব্যাগ বুননে বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা সমরেশ চাকমা জানান, মগবান ইউনিয়নের বড়াদম এলাকায় বেতের তৈরি ঝুড়ি ব্যাগ শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে শত-শত নারী। কেউ কেউ এই শিল্পকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। আবার কেউ কেউ নিয়েছে কাজের অবসরে ঝুড়ি ব্যাগ তৈরির জন্য। ঝুড়ি ব্যাগ তৈরিতে তাদের ইউনিয়নে বসবাসরত পাহাড়ি নারীরা দিন দিন ঝুঁকে পড়ছেন। এ এলাকায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ পরিবার এই ঝুড়ি ব্যাগের তৈরির সঙ্গে জড়িত ।

সরেজমিন দেখা গেছে, এক ধরনের প্লাস্টিকের বেত দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ঝুড়িব্যাগ। এটি মূলত ঢাকনা যুক্ত এবং ঢাকনা ছাড়া দুভাবেই বানানো হচ্ছে। সাইজ অনুযায়ী তৈরি হয় বলে দামেও তারতম্য রয়েছে। সম্পূর্ণ হাতে তৈরি এই ঝুড়ি ব্যাগগুলোর সুবিধা হল, এগুলো সহজেই ধোয়া ও ব্যবহার করা যায় অনেক দিন। মূলত পার্বত্য এলাকার পাহাড়ি নারীরা এই ঝুড়িব্যাগগুলো বানিয়ে থাকেন। 

মগবান ইউনিয়নের বড়াদম এলাকার বাসিন্দা ঝুড়িব্যাগ তৈরির কারিগর লাভলী চাকমা জানান, ঝুড়িব্যাগ গুলো সম্পূর্ণ তাদের হাতের তৈরি। রঙ-বেরঙের প্লাস্টিক বেত দিয়ে ছোট, বড় এবং মাঝারি ঝুড়ি ব্যাগ তৈরি করেন। এ ব্যাগগুলো তাদের কাছ থেকে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা এসে ক্রয় করে নিয়ে যান। পাইকারীরা এ ব্যাগ ছোট, বড় এবং মাঝারি ভেদে ক্রয় করেন ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। তারা মাসে ব্যাগ বিক্রি করেন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

একই ইউনিয়নের এলাকার বাসিন্দা ঝুড়িব্যাগ তৈরির কারিগর মনা চাকমা জানান, ঝুড়ি ব্যাগগুলো তৈরি করতে তাদের একদিন লাগে। তবে অন্য কোনো কাজ না থাকলে দিনে দুইটি ব্যাগও তৈরি করা যায়। তাদের ব্যাগের রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম এবং ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বেশ চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও এখানকার কেউ অর্ডার দিলেও তাঁরা ব্যাগ তৈরি করে দেন।

এদিকে ই-কমার্সের মাধ্যমে রাঙ্গামাটির বেতের ঝুড়িব্যাগের ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিন অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে এই ব্যাগ। এছাড়াও রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে এই ঝুড়ি ব্যাগ। পর্যটকরাও এখান থেকে ব্যাগ হাতে করে নিয়ে যান। 

রাঙ্গামাটি জেলা বিসিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, রাঙ্গামাটিতে বেতের ঝুড়ি ব্যাগ তৈরি উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতেই তারা স্বাবলম্বীও হচ্ছে। তাদের ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলায় মেলার আয়োজন করা হলে তাদের তৈরি পণ্য মেলায় বিক্রি বা প্রদর্শিত করা সুযোগ দিয়ে থাকি। এতে করে তারাই নিজেদের ক্রেতা খোঁজে নেয়।

রাঙ্গামাটির সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের বড়াদম এলাকায় প্লাস্টিকের বেত দিয়ে ঝুড়ি ব্যাগ তৈরি করেছেন দুই পাহাড়ি নারী। 

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী