শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১ |   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঘুমন্ত শিশুকন্যাকে পুকুরে ছুড়ে ফেলেন বাবা

প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৩ ০১ ০২  

ঘুমন্ত-শিশুকন্যাকে-পুকুরে-ছুড়ে-ফেলেন-বাবা

ঘুমন্ত-শিশুকন্যাকে-পুকুরে-ছুড়ে-ফেলেন-বাবা

সম্পর্কিত খবর হবিগঞ্জে ঘুমন্ত শিশুকে পানিতে ফেলে হত্যা, মামির দায় স্বীকার বিয়ের এক বছরের মাথায় একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। এরপর প্রত্যাশা ছিল ছেলে সন্তানের। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তানও মেয়ে হয়। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো প্রায়। কিন্তু এরইমধ্যে ঘটে অমানবিক ঘটনা। মধ্যরাতে ঘুমন্ত অবস্থায় হুমায়রা খাতুন নামে ১৪ মাস বয়সী শিশুটিকে পুকুরে ফেলে হত্যা করেছেন বাবা জাকির হোসেন। 

সোমবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউপির উঁচুলবাড়িয়া গ্রামে। মঙ্গলবার ভোররাতে জাকির হোসেন দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওই পুকুর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এ সময় জাকির হোসেনকে আটক পুলিশে থবর দেয় স্থানীয়রা। পরে শিশুটির লাশ উদ্ধার এবং পাষণ্ড বাবা জাকিরকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। 


জানা যায়, সাত বছর আগে জাকিরের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউপির নামা সিংড়াপাড়া গ্রামের রমজান আলীর মেয়ে রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ভালোই চলছিল তাদের সংসার। এক বছরের মাথায় একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম মোছা. জান্নাতি খাতুন। বর্তমানে বয়স ছয় বছর। এরপর বাবা জাকিরের প্রত্যাশা ছিল ছেলে সন্তানের। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তানও মেয়ে হয়। তার নাম রাখা মোছা. হুমায়রা খাতুন।

কিন্তু দ্বিতীয়বারও মেয়ে হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন জাকির। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়। এ কারণে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। এরই জেরে সোমবার সন্ধ্যায় তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে রাতের কোনো এক সময় ঘুমন্ত শিশুটিকে পুকুরে ফেলে দেন জাকির।

হুমায়রার মা রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে দেখি আমার মেয়ে খাটের ওপর নাই। পরিবারের সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে বিষয়টি জানাই। একইসঙ্গে আমার বোন-দুলাই ভাইকে খবর দেই। প্রতিবেশীদেরও জানানো হয়। সবাই এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। সন্তানকে না পেয়ে একাধিকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। একপর্যায়ে আমার স্বামীকে চাপ দেন তারা। পরে আমার মেয়েটিকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।’

জাকিরের ভায়রা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ভোরে পুকুরে নেমে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় শিশুটিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করি। এরপর জাকিরকে আটক করে থানায় খবর দেই।

শেরপুর থানার ওসি আতাউর রহমান খন্দকার বলেন, খবর পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসানকে ঘটনাস্থলে পাঠাই। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তাকে নির্দেশনা দিয়েছি।’

পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসান বলেন, শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ঘুমন্ত শিশুটিকে পুকুরে ফেলে হত্যার কথা স্বীকার করায় ঘাতক জাকিরকে আটব করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন।

তিনি আরো বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জাকির জানান- হঠাৎ মাথা গরম হয়ে যাওয়ায় এমন কাজটি করেছেন। ঘটনার পর এখন নিজের ভুল বুঝতে পারছেন। এজন্য তিনি অনুতপ্ত। সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি জানান, তার মতো এ ধরনের কাজ যেন আর কেউ না করেন।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী