মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১ |   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সহবাসের সময় যন্ত্রণা হলে সাবধান! এটি ডিসপারেউনিয়ার লক্ষণ

প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২ ১২ ০২  

সহবাসের-সময়-যন্ত্রণা-হলে-সাবধান-এটি-ডিসপারেউনিয়ার-লক্ষণ

সহবাসের-সময়-যন্ত্রণা-হলে-সাবধান-এটি-ডিসপারেউনিয়ার-লক্ষণ

কেউ বলে নিছক জৈবিক প্রক্রিয়া, আবার কারো মতে নতুন প্রজন্ম উৎপাদনের পদ্ধতি। কিন্তু সহবাস যে মূলত শারীরিক এবং মানসিক সুখের একটি উপায় তা মুখে না হলেও মনে মনে অস্বীকার করেন না কেউই। সে যাই হোক, বিশ্বের আদি এবং অকৃত্রিম এই জৈবিক প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে এবং আগামীতেও থাকবে। 

অনেকেই যৌনতা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনায় অস্বস্তি বোধ করেন। এমনকী যৌনরোগ নিয়েও লুকোছাপা করতে পিছপা হন না। ফলে যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় বহু মানুষকে। এবং যৌনতা নিয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকায় বিনা চিকিৎসায় অস্বাস্থ্যকর যৌনজীবন কাটাতে গিয়ে কঠিন রোগ, এমনকী মৃত্যুর মুখোমুখিও হন অনেকে। ডাক্তারের পরামর্শের পরিবর্তে বন্ধুবান্ধব, কিংবা ঘনিষ্ঠ লোকদের মুখে শোনা অবৈজ্ঞানিক কথাতে বিশ্বাস করতে গিয়ে বিপদ আরো বাড়ে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যৌনতা নিয়ে আলোচনায় অস্বস্তি থাকলেও রোগ হলে চিকিৎসককে এড়িয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথমবার যৌনমিলনের সময় নারীদের ক্ষেত্রে যোনিদ্বারে ব্যথা হওয়াটা স্বাভাবিক। ক্রমে তা নিজে থেকেই দূর হয়ে যায়। কিন্তু এই ব্যথা যদি দীর্ঘদিন ধরে চলে তখন তা চিন্তার বিষয়! যন্ত্রণাদায়ক যৌনসঙ্গম ডিসপারেউনিয়া রোগের লক্ষণ এবং এই অসুখের কারণে যন্ত্রণাদায়ক যৌনমিলন ঘটে। ফলে যৌনতায় আগ্রহ কমতে থাকে এবং এর প্রভাব পড়ে দাম্পত্য জীবনে। এই রোগ শুধু  নারীরাই নয়, পুরুষেরও হতে পারে। সহবাসের আগে, সহবাসের সময় এবং সহবাসের পরে এই যন্ত্রণা শুরু হতে পারে। লুব্রিকেশনের অভাব, ত্বকের সংক্রমণ, অসুস্থতা, কোনো অপারেশন, মানসিক চাপ, উদ্বেগ, অবসাদ ইত্যাদির কারণে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ডিসপারেউনিয়ার প্রকারভেদ
>>যন্ত্রণার স্থান বিভেদে সাধারণত ডিসপারেউনিয়া দুই প্রকারের হয়। প্রবেশের সময় ব্যথা এবং অতিরিক্ত ব্যথা।
>>প্রবেশের সময় ব্যথা হলে তাকে বলা হয় সুপারফিশিয়াল ডিসপারেউনিয়া। এক্ষেত্রে পেনিট্রেশনের সময় যোনিতে ব্যথা হয়। সাধারণত লুব্রিকেশনের অভাব, আঘাত বা সংক্রমণের কারণে এই ব্যথা হয়ে থাকে।
>>অতিরিক্ত যন্ত্রণার অপর নাম কোলিশন ডিসপারিউনিয়া। এই ব্যথা সাধারণত হয়ে থাকে গভীরভাবে পেনিট্রেশনের সময়। এক্ষেত্রে তলপেটে ব্যথা হয়। সহবাসের নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা কোনো অপারেশনের পর সহবাসের করার কারণে এই ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ব্যথার কারণ
যোনিতে লুব্রিকেশনের অভাবকেই ডিসপারিউনিয়ার প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হলেও যন্ত্রণার একাধিক কারণ হতে পারে। লুব্রিকেশনের সমস্যা সাময়িক। কিন্তু বাকি সমস্যাগুলিকে এড়িয়ে গেলে অসুস্থতা আরও বাড়তে পারে। যেমন-
>>যৌনরোগ বা সংক্রমণ যেমন গনোরিয়া, ক্ল্যামিডিয়া, হারপিস ইত্যাদির কারণে ব্যথা হতে পারে।
>>মেনোপজের কারণেও যোনিদ্বারে ব্যথা হতে পারে। মেনোপজের সময় শরীরের হরমোনের নানা পরিবর্তন হয় এবং যোনিতে লুব্রিকেশনের অভাব দেখা দেয়। ফলে সেই সময় সহবাসের করলে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক।
>>যৌন উত্তেজনা কমে গেলে সহবাসের সময় যন্ত্রণা হতে পারে এবং এটি হতে পারে যে কোনো বয়সেই।
>>স্ত্রীদেহে যোনির পেশি অতিরিক্ত কঠিন হলেও সহবাসের সময় যন্ত্রণা হতে পারে।
>>বংশগত কারণে কোনো অসুস্থতা বা অ্যালার্জি থাকলে সহবাসের সময় যন্ত্রণা হতে পারে।
>>নির্দিষ্ট কনডম, সাবান, শ্যাম্পু ইত্যাদির কারণে সংক্রমণ হয়েও ব্যথা হতে পারে।
>>পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌনরোগ ছাড়াও, যৌনাঙ্গের পেশির কাঠিন্যের কারণে যন্ত্রণা হতে পারে।
>>কোনো কারণে যৌনাঙ্গে আঘাত লাগলে ব্যথা হতে পারে।
>>প্রস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ বেড়ে গেলে ব্যথা হতে পারে।
>>যৌন উত্তেজনা বা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ইজ্যাক্যুলেশন না হলেও যন্ত্রণা হতে পারে।

রোগের লক্ষণ
>>ডিসপারেউনিয়ার প্রধান লক্ষণ সহবাসের সময় যন্ত্রণা। ব্যথা হতে পারে যোনিতে, পুরুষাঙ্গে কিংবা তলপেটে। ব্যথার পাশাপাশি হতে পারে জ্বালাভাব, অস্বস্তি, চুলকানি ইত্যাদি।
>>যৌনসঙ্গমের পর যৌনাঙ্গ সংকুচিত হয়ে যেতে পারে।
>>যৌনসঙ্গমের সময় অসহ্য যন্ত্রণা হতে পারে।
>>গভীরভাবে পেনিট্রেশনের সময় যন্ত্রণা হতে পারে।

চিকিৎসা
যৌনরোগ বা তার উপসর্গ সারানোর কোনো ঘরোয়া টোটকা হয় না। এর জন্য ডাক্তারের পরামর্শই একমাত্র দাওয়াই। সমস্যা হলে লজ্জা না পেয়ে চিকিৎসকের কাছে যান। তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক ওষুধ নেয়ার পরামর্শ দেবেন। তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন।
ডিসপারেউনিয়ার চিকিৎসা হয় রোগের লক্ষণ এবং কারণ অনুযায়ী। অনেক সময় শারীরিক কারণে এই অসুখ হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওষুধেই কাজ হয়ে যায়। কিন্তু মানসিক সমস্যার কারণে রোগ হলে তার জন্য আলাদা চিকিৎসা করা দরকার।
পেশির কোনো সমস্যা থাকলে যোগাসনের মাধ্যমে তা ঠিক হতে পারে। সেটিও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে করতে হবে।
আর বাড়িতে বসে সুস্থ হতে চাইলে মানসিক চাপকে কাছে ঘেঁষতে দেবেন না। লুব্রিকেশনের সমস্যা হলে ওয়াটার বেস বা সিলিকন বেস লুব্রিকেটর ব্যবহার করুন। সহবাসের পর স্থানটি বরফ বা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন।

ডিসপারিউনিয়া ধরা পরার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করানো হলে তা তাড়াতাড়ি সেরে যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রোগ চেপে রাখলে তার ফল মারাত্মক হতে পারে।

সূত্র: এই সময়

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী