বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১ |   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজশাহীতে আনন্দ-অশ্রুতে সিক্ত হয়ে দেবীর বিদায়

প্রকাশিত: ৫ অক্টোবর ২০২২ ২২ ১০ ০২  

রাজশাহীতে-আনন্দ-অশ্রুতে-সিক্ত-হয়ে-দেবীর-বিদায়

রাজশাহীতে-আনন্দ-অশ্রুতে-সিক্ত-হয়ে-দেবীর-বিদায়

রাজশাহীতে নিশ্ছিদ্র পুলিশি নিরাপত্তা ও ভক্তদের আনন্দ-অশ্রুতে সিক্ত হয়ে এবারের মতো বিদায় নিলেন দেবী দুর্গা। ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবী দুর্গার ঘুম ভাঙানোর বন্দনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল, তা শেষ হলো আজ বিজয়া দশমীতে।

বাবার বাড়ি বেড়ানো শেষে কৈলাসে দেবালয়ে ফেরার সময় হলো আনন্দময়ী দেবী দুর্গার। আর তাই তো ভক্তকূলকে অশ্রুসিক্ত বিদায় জানিয়ে ফিরলেন অসুর দোলনী দেবী দুর্গা। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে ফিরলেন দেবী। বছর ঘুরে আবারও তার ভক্তদের মাঝে পিতৃগৃহে ফিরবেন বলে আশা ভক্তদের।

বুধবার সকাল থেকেই বিহিত পূজার পর ভক্তের প্রার্থনা, ঢাক, ঢোল, কাঁসার ঘণ্টা, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি আর শঙ্খনিনাদে হিন্দু রমণীদের পরম কাঙ্খিত সিঁদুর খেলায় মুখরিত হয়ে ওঠে মণ্ডপগুলো। একদিকে বিদায়ের সুর আর অন্যদিকে উৎসবের আমেজ সব মিলিয়ে নতুন মাত্রা পায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রাণের এই উৎসবটি।

ভক্তরা বলছেন, অসুর শক্তি বিনাশকারী দেবী বিদায় নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে সব অপশক্তির বিনাশ হয়। পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের দশমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে দশমীর বিহীত পূজার মধ্য দিয়ে ঘটে সমাপ্তি।

নিয়মানুসারে ঢাকের তালে তালে দেবী দুর্গাসহ কার্তিক, গণেশ, স্বরস্বতীসহ অন্যান্য দেব-দেবীর প্রতিমাগুলো সাত পাক ঘুরিয়ে নৌকায় তোলা হয়। কিছুক্ষণ নৌভ্রমণের পর মাঝ পদ্মায় বিসর্জন দেওয়া হয় দেবী দূর্গাকে। সবশেষে বিকেল থেকে শুরু হয় বিসর্জনের মূল আয়োজন।

তথ্যমতে, এ বছর রাজশাহী জেলায় সর্বমোট ৪৫৬টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তন্মধ্যে মহানগর এলাকার ৭৫টি ও জেলার ৯ উপজেলায় ৪৫১টি মণ্ডপে উদযাপিত হলো দুর্গোৎসব। নগরীর ৭৬টি মন্ডপের প্রায় সবগুলো প্রতিমাই বিসর্জন দেওয়া হয় পদ্মার নদীর বিভিন্ন ঘাটে। আর জেলাপর্যায়ের মণ্ডপ বিসর্জন দেওয়া হয় স্থানীয় নদী কিংবা জলাধারে।

দুর্গোৎসব উদযাপনের অনুভূতির সম্পর্কে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ রাজশাহী মহানগরের দফতর সম্পাদক অরবিন্দ দত্ত বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আমরা অত্যন্ত ভক্তি আর শ্রদ্ধার শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করছি৷ এবারেও রাজশাহীতে অনেক সুন্দর মণ্ডপ তৈরি করে দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়েছে। তবে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা পালনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে পুলিশ প্রশাসন। 

এখন পর্যন্ত (বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৮টা পর্যন্ত) প্রায় ৩০-৪০টি মণ্ডপের প্রতিমা পদ্মা নদীর মুন্নুজান ঘাটে বিসর্জন দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। নগরীর প্রায় সবগুলো প্রতিমা মুন্নুজান ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে আরএমপি মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রফিকুল আলম দৈনিক প্রভাতীকে বলেন, নগরীর ৯৫টি মণ্ডপে অনেকটা আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে নগরীতে পূজা উদযাপিত হচ্ছে। নির্বিঘ্নে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে ২৭টি পুলিশের ও দুটি গোয়েন্দা পুলিশেরসহ মোট ২৯টি মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। প্রতি ৩/৪টি মণ্ডপে একটি করে মোবাইল টিম নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে কাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, পূজাকে ঘিরে সিটিএসবি, ডিবি, নৌ-পুলিশ ও সিআরটি সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে। পূজা মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি নগরীজুড়েও ৫০০ সিসিটিভি ক্যামেরা চলমান রয়েছে, যেগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।

প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে বিসর্জন স্থলের আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। খুবই সুন্দর পরিবেশে পূজা উদযাপন হচ্ছে। পুরো নগরীকে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী