বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১ |   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মগভর্তি অ্যাসিড দিয়ে কামাল বলেছিলেন ‘তোর জন্য চা এনেছি, চা খা’

প্রকাশিত: ১ অক্টোবর ২০২২ ১৯ ০৭ ০২  

মগভর্তি-অ্যাসিড-দিয়ে-কামাল-বলেছিলেন-তোর-জন্য-চা-এনেছি-চা-খা

মগভর্তি-অ্যাসিড-দিয়ে-কামাল-বলেছিলেন-তোর-জন্য-চা-এনেছি-চা-খা

চট্টগ্রামে সহকর্মীকে অ্যাসিড নিক্ষেপের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মো. কামাল হোসেন ওরফে বালু কামালকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। 

শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত অভিযান পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ।

এর আগে, শুক্রবার দুপুরে চাঁদপুরের শাহরাস্থি উপজেলার মেহের স্টেশন রোড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার কামাল হোসেন একই জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার কাউনিয়া এলাকার রসুল করিমের ছেলে।

র‍্যাব জানায়, ভুক্তভোগী জাকারিয়া একজন কোরআনের হাফেজ। তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকায় দূর সম্পর্কের আত্মীয় মো. রফিকের ফ্রিজ মেরামতের দোকানে কাজ করতেন। এছাড়াও রফিকের ছেলে-মেয়েসহ এলাকার অসংখ্য বাচ্চাদের কোরআন ও ধর্মীয় শিক্ষা দিতেন। রফিকের দোকানে কাজ করতেন তারই বন্ধু ও দোকানের অংশীদার শাহজাহানের ছোট ভাই কামাল হোসেন।

একপর্যায়ে রফিক দোকান বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন জাকারিয়া। এ নিয়ে অহেতুক তার সঙ্গে ঝগড়া করতেন আরেক কর্মচারী কামাল। ঘটনার আগের দিনও উভয়ের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক ও ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে কামাল দোকান থেকে বেরিয়ে চলে যান।

১৯৯৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর হরতাল থাকায় দোকান বন্ধ ছিল। সেদিন জরুরি কথা আছে জানিয়ে জাকারিয়াকে দোকানে ডেকে নেন কামাল। এরপর মগে করে অ্যাসিড নিয়ে জাকারিয়ার সামনে দিয়ে বলেন ‘তোর জন্য চা এনেছি, চা খা’। কিন্তু বিষয়টি বুঝতে পেরে খেতে রাজি হননি জাকারিয়া। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অ্যাসিডগুলো তার মুখে ছুঁড়ে মারেন কামাল। ফলে জাকারিয়ার চোখ, মুখ, বুক, হাত ঝলসে যায়। এতেও ক্ষান্ত হননি কামাল। অ্যাসিড নিক্ষেপের পরও মৃত্যু না হওয়ায় জাকারিয়ার গায়ে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যান তিনি।

গুরুতর আহত জাকারিয়ার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে জড়ো হন। এরপর খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে নেয় পুলিশ। টানা চারদিন সেখানে চিকিৎসা নেয়ার পর জ্ঞান ফিরে জাকারিয়ার। পরে চোখ ও শরীর অ্যাসিডে ঝলসানোর ভয়াবহতা দেখে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

সেখানে জাকারিয়া সর্বপ্রথম আয়নায় নিজের বীভৎস চেহারা দেখে অজ্ঞান হয়ে যান এবং ৩০ দিন কোমায় থাকেন। পরবর্তীতে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। অ্যাসিডে জাকারিয়ার এক চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়, চোখের পাপড়ি ঝলসে যায় এবং মুখ, বুক ও হাত ঝলসে যায়। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর মোটামুটি সুস্থ হলে সৌদি আরব চলে যান তিনি। 

এদিকে, ঘটনার পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর নগরের ডবলমুরিং থানায় মামলা করেন জাকারিয়ার বাবা মোহাম্মদ ইউনুস মিয়া। কিন্তু ঘটনার পর থেকে আত্মগোপন করেন কামাল। মামলাটির তদন্ত শেষে ২০০৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল কামালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো দুই বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি কামাল হোসেনকে ধরতে নজরদারি অব্যাহত রাখে র‍্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার দুপুরে চাঁদপুরের শাহরাস্থি উপজেলার মেহের স্টেশন রোড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। 

ঘটনার পর থেকে কিছুদিন পলাতক থাকার পর একসময় নিজ এলাকা চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে চলে যান কামাল। এলাকায়ও বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন তিনি। সেখানে ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত স্টুডিও কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। এরপর ২০০৩ সাল পর্যন্ত করেন কৃষিকাজ। একপর্যায়ে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার একটি ডাকাতির মামলায় চলে যান জেলে। ২০০৭ সালে জেল থেকে বেরিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ির কাঁচামালের আড়তে শুরু করেন সবজির ব্যবসা।

২০১০ সালের পর ডাকাতির মামলায় ফের চলে যান জেলে। ২০১৩ সালে জেল বেরিয়ে আবারো শুরু করেন কৃষিকাজ। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে নিজ এলাকা ফরিদগঞ্জ ছেড়ে শাহরাস্থি চলে যান। সেখানে শুরু করেন বালুর ব্যবসা। ওই এলাকায় স্থানীয় হিসেবে বসবাস শুরু করেন।

র‍্যাব কর্মকর্তা এমএ ইউসুফ আরো বলেন, কামালের বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানার অ্যাসিড নিক্ষেপের মামলা ছাড়াও চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানায় ছয়টি ও লক্ষ্মীপুরের রায়গঞ্জ থানায় একটি মামলা রয়েছে। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নিতে তাকে ডবলমুরিং থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী