শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১ |   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুলমতির সব স্বপ্নই ভেসে গেলো করতোয়ার স্রোতে

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭ ০৫ ০১  

ফুলমতির-সব-স্বপ্নই-ভেসে-গেলো-করতোয়ার-স্রোতে

ফুলমতির-সব-স্বপ্নই-ভেসে-গেলো-করতোয়ার-স্রোতে

স্ত্রী-সন্তান আর বৃদ্ধ মাসহ ৫ সদস্যের পরিবার জগদীশের। অভাবের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। জীবিকার তাগিদে দিনমুজুরের কাজ করলেও তার স্বপ্ন ছিলো অসম। সামনের শারদীয় দূর্গোৎসব উদযাপন নিয়েও ছিলো নানা পরিকল্পনা। কিন্তু সব স্বপ্নই ভেসে গেলো করতোয়ার স্রোতে।

মহালয়া উপলক্ষে আয়োজিত ধর্মসভায় যোগ দিতে অন্যদের মত জগদীশও যাচ্ছিলেন বড়শশী ইউপির বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে গেলে গত রোববার দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া আউলিয়া ঘাটে করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে নিহত হন তিনি। 

জানা গেছে, মৃত জগদীশ জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউপির বটতলী এলাকার মৃত প্রবিন্দ্রনাথের ছেলে। বটতলির এই জগদীশ ছিলেন তার পরিবারের বটবৃক্ষ। 

 স্বজনদের হারিয়ে আহাজারি

এদিকে, স্বামীকে হারিয়ে ছেলে কৌশিক রায় (৭) এবং ১৯ মাস বয়সি শিশু রাধিকা রানীকে নিয়ে দিশেহারা ফুলমতি রানী। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। একমাত্র আশ্রয়স্থল ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক জগদীশের মা ষাটোর্ধ্ব নুনী বালা।

নুনী বালা বলেন, মা হয়ে ছেলেকে চিতায় পাঠানোর কষ্ট কিভাবে সহ্য করবো। আমাদেরকে এখন কে আগলে রাখবে। খুব কষ্ট করে ছেলেটাকে বড় করছি, তার এমন মৃত্যু মানতে পারছি না। 

জগদীশের স্ত্রী ফুলমতি রানী বিলাপ করে বলেন, মন্দিরে আমিও যেতে চাইছিলাম, আমাকে না নিয়ে একাই গেলো। আর ফিরে এলো লাশ হয়ে। আমি এই ছোট ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে কিভাবে বাঁচবো।

জানা গেছে, রোববার দুপুরে শতাধিক যাত্রী নিয়ে করতোয়া নদীতে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৮ জনের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায়। 

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অপরপাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। রোববার দুপুরের দিকে মূলত ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে সনাতন ধর্মালম্বীরা নৌকা যোগে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে ৫০ থেকে ৬০ জনের ধারণ ক্ষমতার নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝপথে নৌকাটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতার জানায় তীরে আসতে পারলেও নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়। মনে করা হচ্ছে স্রোতের কারণে অনেক মরদেহ পানিতে ভেসে যেতে পারে।

এদিকে, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া নিহত প্রত্যেক পরিবারকে মরদেহ সৎকারের জন্য ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী