শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১ |   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রধান শিক্ষক-সভাপতির দ্বন্দ্বে বিদ্যালয়ের অচলাবস্থা

প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮ ০৬ ০২  

প্রধান-শিক্ষক-সভাপতির-দ্বন্দ্বে-বিদ্যালয়ের-অচলাবস্থা

প্রধান-শিক্ষক-সভাপতির-দ্বন্দ্বে-বিদ্যালয়ের-অচলাবস্থা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার দক্ষিণধুরু উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতির বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে উভয়পক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছেন। এরই মধ্যে অনিয়মের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক আবু তাহেরকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়া।

এদিকে প্রধান শিক্ষকও অনিয়মের অভিযোগ তুলে সভাপতির বিরুদ্ধে শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ও শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

এমপিওভুক্ত এই বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪৫০। শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা ১৫।

জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যালয়টির একটি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচিত প্রার্থীদের চূড়ান্তভাবে চাকরি না দেওয়া নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। চলতি মাসে প্রধান শিক্ষক আবু তাহের ও বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়ার সেই দ্বন্দ্ব একপর্যায়ে চরমে পৌঁছায়।

এর আগে ২৮ জুলাই প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়মের জবাব চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় পরিচালনা কমিটি। এর জবাব না দিয়ে গত ২৩ আগস্ট বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে একটি লিখিত অভিযোগ দেন প্রধান শিক্ষক। ১২ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক আবু তাহেরকে সাময়িক বরখাস্ত করেন সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়া। 

ম্যানেজিং কমিটির নোটিশে প্রধান শিক্ষক আবু তাহেরের বিরুদ্ধে শিক্ষক ও কমিটির সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিদ্যালয়ে না এসেই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, বর্তমান কমিটি নির্বাচিত হওয়ার পর বারবার আমন্ত্রণ পাওয়ার পরও সভায় উপস্থিত না হওয়া, বিদ্যালয়ের ল্যাপটপ-মুঠোফোনসহ বিভিন্ন জিনিস ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, বিদ্যালয়ের নোটিশ খাতা বাসায় নিয়ে যাওয়া, বিদ্যালয়ের তাহবিল থেকে দীর্ঘদিন আগে ৩৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়া, সভাপতির সঙ্গে অশালীন আচরণ করা, নবনির্মিত ভবন থেকে বেআইনিভাবে কমিশন নেওয়া, ঈদুল আজহার সময় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস না দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

অপরদিকে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব না দিয়ে প্রধান শিক্ষক আবু তাহের গত ২৩ আগস্ট বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। 

এতে অভিযোগে উল্লেখ করা হয় সভাপতি হওয়ার তিন মাসের মধ্যে কমিটির প্রথম সভা না করা, নোটিশ খাতা ও রেজ্যুলেশন খাতা ব্যক্তিগতভাবে কিনে তাতে বাসায় বসে কমিটির কিছুসংখ্যক সদস্যের স্বাক্ষর রাখা, বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ঠিকাদারের কাছ থেকে উন্নয়নের জন্য পাওয়া ৭০ হাজার টাকা সাধারণ তহবিলে জমা না দিয়ে মাত্র ১০ হাজার টাকার মাটি ভরাট করে বাকি ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা, আজীবন দাতা সদস্য হিসেবে এককালীন ১৫ হাজার টাকা জমা না দেওয়া, কিছু শিক্ষককে নিয়ে গ্রুপিং করা ও বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করা।

বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. বাহাউদ্দীন ভূঞা বলেন, প্রধান শিক্ষক আবু তাহের অনেকটা স্বৈরাচারী মনোভাব পোষণ করেন। তিনি বর্তমান পরিচালনা কমিটিকে মানেন না। তিনি সবসময় কমিটিকে ডিঙিয়ে সব কাজ একাই করতেন। কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের মধ্যে সমন্বয়হীনতার জন্যই বিদ্যালয়টিতে আজ এই অবস্থা।

শিক্ষার্থীরা জানায়, সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চরমভাবে। ঠিকমতো চলছে না শ্রেণির কার্যক্রম, কারণে অকারণে বন্ধ থাকছে প্রতিষ্ঠান। 

এ বিষয়ে সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়া বলেন, প্রধান শিক্ষক কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কোনো কাজ করেন না এবং মিটিংয়েও আসেন না। তার আচরণে কমিটি ও অন্য শিক্ষকেরা অতিষ্ঠ। অফিসে কোনো কাজ করেন না। রেজ্যুলেশন ও নোটিশ বই বাড়িতে নিয়ে কাজ করেন। এসব অনিয়মের প্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ তিনবার দেওয়া হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি । এসব কারণে কমিটি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। 

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আবু তাহের বলেন, সভাপতির বিরুদ্ধে আমি শিক্ষা বোর্ডে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এই অভিযোগের তদন্ত চলাকালে তিনি আমাকে কোনোভাবে সাময়িক বরখাস্ত বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না। আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। আমাকে দায়িত্ব থেকে সরানোর জন্যই তারা এসব অভিযোগ করেছেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মতিউর রহমান জানান, প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির দ্বন্দ্বে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সভাপতির বিরুদ্ধে বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের দেওয়া একটি অভিযোগের তদন্ত চলছে। প্রধান শিক্ষককে নোটিশের বিষয়ে তিনি জেনেছেন। তবে সাময়িক বরখাস্তের ব্যাপারে কিছু জানেন না।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী