রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১ |   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নেশাখোরকে কামড়ে মরতে হলো সাপকেই!

প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ০২ ০২ ০৪  

নেশাখোরকে-কামড়ে-মরতে-হলো-সাপকেই

নেশাখোরকে-কামড়ে-মরতে-হলো-সাপকেই

এতদিন আমরা জেনে এসেছি গোখরা সাপ কামড়ালে মানুষের বাচার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। কিন্তু এ ধারণাকে একেবারে ভুল প্রমাণ করেছেন ভারতের বিহার প্রদেশের এক তুখোর নেশাখোর। গোখরার মরণাত্মক বিষের ছোবলে মৃত্যুর পরিবর্তে একধরনের নেশার আমেজ জমত তার শরীরে। আর সে জন্যই গোখরা সাপটির ছোবল খাওয়ার আশায় সেটিকে গোপনে লালনপালন করত সে। জানা গেছে, কিছুদিন আগে বিহারে মদ নিষিদ্ধ করেছে দেশটির সরকার। যাদের পকেটের জোর আছে, সেই নেশারুরা চোরা পথে কয়েকগুণ বেশি দাম দিয়ে মদের বন্দোবস্ত করেন। কিন্তু যাদের সেই উপায়, নেই তারা বাধ্য হয়েই বিকল্প নেশার ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। সেরকমই এক ‘হতভাগ্য’ সুরাপ্রেমী বিহারের সমস্তিপুরের বাসিন্দা রানা তপেশ্বর সিংহ ওরফে লালন সিংহ। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, লালন সিংহ নামে এ ব্যক্তি মদ নিষিদ্ধ হওয়ার পরে প্রায় দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন। নেশার তাগিদে কয়েকদিন বিশেষ একটি ট্যাবলেট খান তিনি। তার পরে নিজের দু’একজন পরিচিত নেশাড়ুর পরামর্শে একটি গোখরো সাপ জোগাড় করেন। বাড়ির কাছেই একটি ঝোপের আড়ালে প্লাস্টিকের বড় কৌটোয় সেই সাপটিকে রেখে দিতেন লালন। হাতের কাছে মদ নেই, তাই যখনই নেশা করার ইচ্ছে হত, তখনই ওই কৌটোর মধ্যে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে দিতেন লালন। সঙ্গে সঙ্গে সাপটি আঙুলে কামড়ে দিত। লালনের কথায়, গোখরোর ছোট্ট এক ছোবলেই যেন এক বোতল বিদেশি মদের নেশা হয়ে যেত তার। যার জের থাকত প্রায় দু’দিন। প্রায় নিখরচায় এমন নেশা করে দিন বেশ ভালই কাটছিল লালনের। খাওয়ার জন্য গোখরোটিকে কৌটোয় দু’-একদিন অন্তর ব্যাঙ ছেড়ে দিতেন লালন। গোখরোও ছোট ছোট ছোবল মেরে লালনের নেশা চড়িয়ে দিত। বাড়ির লোকজন ভাবতেন, লুকিয়ে-চুরিয়ে লালন মদ খেয়ে বেহুঁশ হয়ে আছে। সবই ঠিক চলছিল, কিন্তু গোখরোর মেজাজ বিগড়ে গিয়েই বিপত্তি বাধল। গত ৬ আগস্ট আবার ছোবল খাওয়ার জন্য গোখরোর সামনে আঙুল দেন লালন। কিন্তু ব্যাঙ না পেলে গোখরোই বা এমনি এমনি বিষ খরচা করবে কেন! জানা গিয়েছে, কয়েকদনি ধরে সাপটিকে ব্যাঙ খেতে দেননি লালন। ফলে, খিদের পেটে গোখরোর মেজাজ বেজায় বিগড়ে ছিল। মুখের সামনে লালনের আঙুল পেয়ে ব্যাঙ ভেবে কি না জানা নেই, সেদিন একেবারে আঙুল ধরে জোর কামড় দেয় সাপটি। বিপত্তি যে কিছু একটা হয়েছে নেশার ঘোরে লালনও তা বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু একটু বেশি খেয়ে নেয়ার মতো বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি তিনি। বরং নেশা কমাতে সঙ্গে সঙ্গে গোসল করে নেন লালন। তারপরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরিবারের লোকজন প্রথমে ভেবেছিলেন অন্যান্য দিনের মতো নেশা করে এসেছেন লালন। কিন্তু শারীরিক লক্ষণ ভালো না ঠেকায় লালনকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা দেখে চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়, লালনকে সাপে কামড়েছে। এর পরে বারো ঘণ্টা ধরে প্রায় আঠারোটি অ্যান্টি ভেনম ইঞ্জেকশন দিয়ে লালনের প্রাণ বাঁচান চিকিৎসকরা। জ্ঞান ফেরার পরে নিজেই চিকিৎসক এবং পরিবারের লোকজনকে গোটা ঘটনার কথা বলেন লালন। পরিবারের লোকজন তো বটেই, লালনের কীর্তি শুনে চিকিৎসকদের চোখ কপালে ওঠার অবস্থা। গোখরোর এক ছোবল খেয়েই যেখানে অনেক সময়ে মৃত্যু হয় মানুষের, সেখানে দিনের পর দিন লালন কীভাবে ছোবলের পরে ছোবল হজম করলেন, সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না চিকিৎসকরা। যদিও, লালনের পরিবারের লোকজন আর কোনো ঝুঁকি নেননি। হাসপাতাল থেকে ফিরেই সাপটিকে মেরে ফেলেন তারা। লালনের প্রাণঘাতী নেশার ঠেলায় শেষ পর্যন্ত গোখরোটিকেই বেঘোরে মরতে হলো।
Provaati
    দৈনিক প্রভাতী