বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১ |   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপেক্ষা আরো এক বিস্ময়ের

প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭ ০৫ ০১  

অপেক্ষা-আরো-এক-বিস্ময়ের

অপেক্ষা-আরো-এক-বিস্ময়ের

সম্পর্কিত খবর বঙ্গবন্ধু টানেলে থাকছে বিশ্বমানের অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা পদ্মাসেতুর পর আরো একটি বিস্ময়ের অপেক্ষায় দেশবাসী। সেই বিস্ময়ের নাম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ টানেলের ৯০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই টানেলটি উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, উদ্বোধন না হলেও চালুর প্রস্তুতি হিসেবে টানেলের ভেতর দিয়ে চলাচল করছে নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্ট যানবাহন। এরই মধ্যে দুই টিউব বিশিষ্ট মূল টানেল প্রায় প্রস্তুত। চলছে নিরাপত্তামূলক ফায়ার প্লেট, লাইটিং ও ডেকোরেশন প্লেট বসানোর কাজ। এক টানেল থেকে আরেক টানেলে যাওয়ার প্যাসেজ তৈরির কাজও প্রায় শেষের দিকে। এর আগে টানেলের সঙ্গে দুই প্রান্তের ছয় কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়। এখন চলছে আনোয়ারা প্রান্তের ওয়াই জংশন পর্যন্ত ছয় লেন সড়কের কাজ।

উদ্বোধনের অপেক্ষা

চীনের সাংহাই শহরের আদলে বন্দরনগর চট্টগ্রাম শহরকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নগরের পতেঙ্গা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। পরে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানেলটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প ঋণ হিসেবে পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। এছাড়া বাকি অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি)। টানেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের জটিল কাজ শেষ। এখন কিছু টেকনিক্যাল কাজ চলছে। টানেলটির দৈর্ঘ্য তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেলের প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য দুই দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দুই সুড়ঙ্গে দুটি করে থাকছে মোট চারটি লেন। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্বে পাঁচ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ উড়ালসেতু।

প্রথম টানেল খননে সময় লেগেছিল ১৭ মাস। আর মাত্র ১০ মাসেই নির্মাণ হয় দ্বিতীয় সুড়ঙ্গ। ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় তৈরি করা হয়েছে দুটি টানেল। প্রতিটি ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার। টানেলটির নির্মাণকাজ প্রায় পুরোটাই যন্ত্র নির্ভর হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হচ্ছে কাজ।

চলছে কর্মযজ্ঞ

টানেলের একপ্রান্ত আনোয়ারায় সিইউএফএল, কাফকো, কোরিয়ান ইপিজেড, প্রস্তাবিত চায়না ইপিজেড, পারকি সমুদ্র সৈকত। আনোয়ারা দিয়েই বাঁশখালী, কক্সবাজার, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল এবং মীরসরাই ও ফেনীর সোনাগাজীর বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সঙ্গে যোগাযোগের লক্ষ্যেই নেয়া হয় এ টানেল প্রকল্প।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এটি চালু হলে ত্বরান্বিত হবে কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন। পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর-বিমানবন্দরের সঙ্গেও স্থাপিত হবে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। কমে যাবে ভ্রমণের সময় ও খরচ।

এছাড়া পূর্বপ্রান্তের শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুত করা মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দরসহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে বিকশিত হবে পর্যটনশিল্প।

প্রকল্প পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, টানেলের এখন পর্যন্ত ৯১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ডিসেম্বর মাসেই টানেল চালুর প্রস্তুতি রয়েছে। এখন টানেলের ভেতর ফায়ার ফাইটিং ও কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা তৈরি এবং লাইটিংয়ের কাজ চলছে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস্ বলেন, ডিসেম্বরে টানেলটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে। এটি চালু হলে নগরীতে যানবাহনের চাপ আরো বাড়বে। শুধুমাত্র টানেলের কথা মাথায় রেখে নগরীর সড়ক নেটওয়ার্কে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিশেষ করে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখানে যানবাহন ওঠা-নামার জন্য ইউলুপ ও আন্ডারপাস বাড়ানো হচ্ছে।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী