বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১ |   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত ৬০, আতঙ্কে গ্রামবাসী

প্রকাশিত: ৭ অক্টোবর ২০২২ ১৬ ০৪ ০১  

অজানা-ভাইরাসে-আক্রান্ত-৬০-আতঙ্কে-গ্রামবাসী

অজানা-ভাইরাসে-আক্রান্ত-৬০-আতঙ্কে-গ্রামবাসী

নাটোরের গুরুদাসপুরে ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন একই গ্রামের প্রায় ৬০ জন মানুষ। দেড় বছর যাবত বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে গিয়েও রোগের কোনো প্রতিকার না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা।

শুক্রবার উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের পাবনাপাড়া মহল্লায় গিয়ে দেখা যায় এই চিত্র। চিকিৎসকরা বলছেন, এটি ভাইরাসজনিত রোগ। চর্ম রোগের লক্ষণ।

জানা যায়, গত দেড় বছর আগে পাবনাপাড়া মহল্লার সুলতানের স্ত্রী লিমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘামাচির মতো বের হয়। পরে ব্যাপক চুলকানোর কারণে লাল হয়ে যায়। তার তিনদিন পরে তার মেয়ের শরীরেও ওই লক্ষণ দেখা দেয়। প্রথমে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা সেবা নেন তারা। কিন্তু চুলকানি আরও বেশি হতে থাকে। একপর্যায়ে নাটোর শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ একজন চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেন; কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি।

লিমার পর তার মেয়ে এরপর প্রতিবেশীদের শরীরেও দেখা দেয় ওই রোগের লক্ষণ। ধীরে ধীরে ভাইরাসজনিত এই রোগটি ছড়িয়ে পড়ে মহল্লাব্যাপী। বর্তমানে ওই মহল্লায় নারী-পুরুষ শিশুসহ প্রায় ৬০ জন ওই রোগে আক্রান্ত। আক্রান্ত রোগীদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘামাচির মতো লাল ও গুটি গুটি হয়ে পড়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেছেন কিন্তু কেউ প্রতিকার পাননি। এমনকি রোগের সঠিক নির্ণয়ও করতে সক্ষম হয়নি কেউ।

সাইমা খাতুন জানান, দেড় বছর আগে হঠাৎ করেই আমার শরীরে ঘামাচির মতো বের হয়ে চুলকানো শুরু করে। ব্যাপক যন্ত্রণায় না থাকতে পেরে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। এছাড়া যখন শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলকানি বেশি হতে লাগলো তখন নাটোর শহরের একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন করি। তিনিও বলেছেন এটি চর্মরোগ। ওষুধ সেবনের পরেও কোনো কাজ হয় না। পরবর্তীতে চর্ম ও মেডিসিন রোগ বিশেষজ্ঞ প্রায় ৭ জন ডাক্তার দেখিয়েছি; কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাইনি। এমনকি এই রোগের নাম কী তাও কেউ সঠিকভাবে বলতে পারেননি।

আক্রান্ত নূরজাহান, ফাইমা, বৃষ্টি খাতুন, হাজেরা, রিমা, রবিউল, সুলতান, মেহেদী, কালুসহ প্রায় ১৫ জন জানান, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলকায়। এমনকি অনেক সময় আক্রান্ত স্থানে চুলকানোর কারণে রক্ত বের হয়। ফুলে লাল হয়ে যায়। অনেক ওষুধ খেয়েছি কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। সরকারিভাবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখালে মনে হয় ভালো হতে পারে বলেও জানান তারা।

ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীর শরীরের একটি অংশআক্রান্ত শিশু সুয়াইবার মা জানান, আমার ছোট্ট শিশু চুলকাতে না পেরে চিৎকার করে। শিশু বিশেষজ্ঞ, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। এখনো রোগ থেকে মুক্তি পাইনি। শিশু সন্তানকে নিয়ে অনেক সমস্যায় আছি।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান জানান, এরমধ্যে ওই গ্রামের ৫০-৬০ জন চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন যা গ্রামটির জনসংখ্যার প্রায় ২৫ ভাগ। এ নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ জরুরি নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে আহ্বান জানান।

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আক্রান্ত রোগীরা কখনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেনি। তাদের হাসপাতালে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত রোগী ও আক্রান্তের স্থান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী