সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১ |   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সীতাকুণ্ডের ঝরঝরি ঝর্ণার উদ্দেশ্যে

প্রকাশিত: ২৩ জুলাই ২০২২ ১৭ ০৫ ০২  

সীতাকুণ্ডের-ঝরঝরি-ঝর্ণার-উদ্দেশ্যে

সীতাকুণ্ডের-ঝরঝরি-ঝর্ণার-উদ্দেশ্যে

বাংলাদেশের সমতলের বাসিন্দাদের কাছে পাহাড়, ঝর্ণা সব সময় এক আকর্ষণের নাম। সময় এবং সুযোগ পেলে সবাই পাহাড় আর ঝর্ণার খোঁজে বেড়িয়ে পড়ে। গত ১২ জুলাই লক্ষ্মীপুর থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া পনেরো জন শিক্ষার্থীও বেড়িয়েছিলাম পাহাড় আর ঝর্ণার খোঁজে। 

ছবি : দৈনিক প্রভাতীভোর ছয়টায় সীতাকুণ্ডের পন্থিশীলা বাজারে পৌঁছায়। পন্থিশীলা বাজারে সকালের নাস্তা সেরে মিনিট দশেক হেঁটে আমরা পাড় হই বাজারের রেললাইন। আমরা যখন রেললাইনের পাশ দিয়ে সমতল ভূমিতে হাঁটতে শুরু করি, সূর্য তখন পাহাড়ের কোল ঘেঁষে পূর্বাকাশে থেকে উঠতে শুরু করেছে, সকালের মিষ্টি রোদ পরশ বোলাচ্ছে শিশিরস্নাত দুর্বাঘাসের মাঝে । সমতল ভূমিতে মিনিট পনেরো হাঁটার পর দেখা মেলে পাই ‘ঝিরি পথের’। এই পথের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট ছোট পাহাড়ি খাল। সকালের মিষ্টি আলো পানির উপর এসে রূপালি এক আভা তৈরি করে আর সেটি পানির নিচে থাকা ছোট ছোট পাথরগুলোর সৌন্দর্য যেন বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে। 

ছবি : দৈনিক প্রভাতীদুপাশে উঁচু উঁচু পাহাড় আর মাঝ দিয়ে ঝিরি পথ, কিছুক্ষণ পর-পর পাখির কিচির মিচির ডাক শোনা যায়। এভাবে ঝিরিপথে মিনিট বিশেক হাটার পর পাহাড়ি রাস্তা খুঁজে পাই। এই রাস্তাটি বেশ খাঁড়া হওয়াতে ক্লান্তি এসে যায় কিন্তু সকালের নির্মল বাতাস সেটি স্থায়ী হতে দেয়নি। এরপর আবার নামতে শুরু করেছি। 

এভাবে পাহাড়ে উঠছি আর নামছি কিন্তু ঝর্ণা কোথায় সেটা খুঁজে পাচ্ছিনা। একটা সময় মনে হয়েছে এত দূর পথ পাড়ি দেওয়ার পরও যখন ঝর্ণা পাচ্ছিনা তখন ফিরে যাওয়াই ভালো। ঝর্ণা খুঁজে পাওয়ার অন্য কোন রাস্তাও আমাদের হাতে ছিল না। আমরা কোন গাইড নেইনি। ভোরে জনমানবশূন্য এই পাহাড়ে কাউকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভবনা একেবারে ক্ষীণ, তার ওপর মোবাইলের নেটওয়ার্ক নাই। তবে হাল ছেড়ে দেইনি কেউ। মিনিট পাঁচেক হাঁটার পরই শোনা গেলো পানির ঝর ঝর শব্দ। সবাই তখন আনন্দে আত্মহারা। অবশেষে আমাদের কাঙ্ক্ষিত ঝরঝরি ঝর্ণা! 

ছবি : দৈনিক প্রভাতীআমাদের গন্তব্য ছিলো চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড-মীরসরাই রেঞ্জে অবস্থিত ঝরঝরি ঝর্ণা। সীতাকুণ্ড-মিরসরাই রেঞ্জে অনেকগুলো ঝর্ণার মধ্যে ঝরঝরি ঝর্ণা অন্যতম হলেও ভ্রমণপিয়াসুদের কাছে এটি এখনো মোটামুটি অজানাই। যার কারণে এখানকার সৌন্দর্য নিজেদের মধ্যে বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করা যায়।

ঝর্ণার পানিতে যখন হাত পা ছেড়ে দিই তখন সব ক্লান্তি উড়ে ছাই। পাহাড়ের উপর থেকে পানি গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য কী যে সুন্দর! সময়ক্ষেপণ না করে কেউ কেউ চোখ ভরে ঝর্ণার দৃশ্য দেখতে শুরু করেছে, কেউ কেউ নিজেকে ঝর্ণার পাশে ফ্রেমবন্দি করে নিচ্ছে, কেউ কেউ ঝর্ণার পানিতে ভিজতে শুরু করেছে।

 ঝরঝরি ঝর্ণার দৃশ্য উপভোগ করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই।  ভেবেছি ঝরঝরি ঝর্ণাই সবচেয়ে সুন্দর কিন্তু সামনে যে আরও সুন্দর কিছু অপেক্ষা করছে সেটা জানা ছিল না। ঝরঝরি ঝর্ণা থেকে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলে অনেকগুলো ক্যাসকেড আছে। খাঁজ কাটা এই পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়েছে স্বর্গের কোন রাস্তা ধরে হাঁটছি।

ছবি : দৈনিক প্রভাতীঅনেকগুলো ঝর্ণা দেখার পর আমরা পৌঁছে যাই মূর্তি ঝর্ণার সামনে। পথে পিচ্ছিল পাথর আর দুর্গম পাহাড়ি পথ তার উপর জোঁকের ভয়। পুরো পথ পাড়ি দিতে অনেক কষ্ট হয়েছে। মূর্তি ঝর্ণার পানি অনেক গতি নিয়ে উপর থেকে পড়ে, দূর থেকে মনে হয় ঝড় হচ্ছে। ঠাণ্ডা পানির স্পর্শ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অন্তর জুড়িয়েছে।

অপূর্ব এক দৃশ্য। বাংলার এই প্রকৃতি সৃষ্টিকর্তা যেন নিজ হাতে গড়েছেন। দু নয়নে দেখতে শুরু করি সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি! ঘর থেকে বের না হলে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির এ সৌন্দর্য উপভোগ করা যেত না।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর