শনিবার   ১৮ মে ২০২৪ |  জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১ |   ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

সীতাকুণ্ড যাবেন আর ‘সীতার কুণ্ড’ দেখবেন না, তা কী হয়?

প্রকাশিত: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০ ১০ ০১  

সীতাকুণ্ড-যাবেন-আর-সীতার-কুণ্ড-দেখবেন-না-তা-কী-হয়

সীতাকুণ্ড-যাবেন-আর-সীতার-কুণ্ড-দেখবেন-না-তা-কী-হয়

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম সীতাকুণ্ড। ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ৪৮৩ দশমিক ৯৭ বর্গ কিলোমিটারের এ উপজেলায় রয়েছে ২০টির বেশি পর্যটন স্পট। তাছাড়া উপজেলাটির ‘সীতাকুণ্ড’ নামকরণ নিয়েও রয়েছে নানা তথ্য।

সীতা মন্দির। ছবি: দৈনিক প্রভাতীহিন্দু সম্প্রদায়ের মতে, রামায়ণে বর্ণিত সীতা ওই এলাকায় আগমন করেন এবং একটি কুণ্ডে স্নান করেন। সেখান থেকেই ‘সীতাকুণ্ড’ নামের উৎপত্তি। আবার কারো মতে, দক্ষ রাজার মহাযজ্ঞের সময় শিব তার স্ত্রী সতীর শবদেহ খণ্ড-বিখণ্ড করেন। তার নামানুসারে সীতার কুণ্ড কালের বির্বতনে বিকৃত হয়ে সীতাকুণ্ড নাম ধারণ করে। কুণ্ড শব্দের অর্থ কূপ বা পুকুর।

সীতার কুণ্ড কালের বির্বতনে বিকৃত হয়ে সীতাকুণ্ড নাম ধারণ করে। ছবি: দৈনিক প্রভাতীপ্রাচীন ধর্মগ্রন্থ ও ইতিহাস বলছে, এলাকাটিতে মহামুনি ভার্গব বসবাস করতেন। অযোদ্ধার রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র তার বনবাসের সময় সেখানে এসেছিলেন। তারা আসবেন জানতে পেরে মহামুনি ভার্গব সেখানে স্নানের জন্য তিনটি কুণ্ড সৃষ্টি করেন। এর মধ্যে একটিতে রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতা স্নান করেন। এরপর থেকেই স্থানটির নামকরণ করা হয় সীতাকুণ্ড। যেটিতে রাম স্নান করেছিলেন, সেটি হয় রামকুণ্ড। তবে বর্তমানে কুণ্ডগুলো শুকিয়ে গেছে। ইটের দেয়াল দিয়ে স্থানগুলোকে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। বর্তমানে সংস্কার করে সেখানে লাগানো হয়েছে টাইলস। আর টাইলসের গায়ে থাকা নামফলকে লেখা রয়েছে সীতাকুণ্ড নামকরণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।  

সীতার কুণ্ড’র পাশে রয়েছে সীতা মন্দির। ছবি: দৈনিক প্রভাতীএছাড়া একই এলাকায় রয়েছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বিখ্যাত শক্তিপীঠ চন্দ্রনাথ মন্দির। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় এটি অবস্থিত। এ মন্দিরের পাদদেশে রয়েছে উল্টা পাতালকালী মন্দির, ক্রমধেশ্বরী কালী মন্দির ও ভোলানন্দগিরি সেবাশ্রম। 

আরো রয়েছে- কাছারি বাড়ি, শনি ঠাকুর বাড়ী, প্রেমতলা, শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী সেবাশ্রম, শ্রী রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, গিরিশ ধর্মশালা, দোল চত্বর, ননী গোপাল সাহা তীর্থযাত্রী নিবাস, তীর্থ গুরু মোহন্ত আস্তানা, বিবেকানন্দ স্মৃতি পঞ্চবটি, জগন্নাথ আশ্রম, শ্রীকৃষ্ণ মন্দির, শংকরমঠ ও আশ্রম, বিশ্বনাথ মন্দির, মহাশ্মশানভবানী মন্দির, স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির, গয়াক্ষেত্র, জগন্নাথ মন্দির, বিরুপাক্ষ মন্দির, পাতালপুরী, অন্নপূর্ণা মন্দিরসহ বিভিন্ন সনাতনী স্থাপনা। সব মিলিয়ে এলাকাটিকে হিন্দুদের বড় তীর্থস্থানও বলা চলে।

চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার উত্তরে ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার পূর্বে সীতার কুণ্ড’র অবস্থান। 

এ মন্দিরের পাদদেশে রয়েছে উল্টা পাতালকালী মন্দির। ছবি: দৈনিক প্রভাতীসীতা মন্দিরসহ অন্যান্য মন্দির ও চন্দ্রনাথ পাহাড় দেখতে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে সেখানে ছুটে যান পর্যটকরা। চন্দ্রনাথ মন্দিরে প্রতি বছর শিবরাত্রি তথা শিবচতুর্দশী তিথিতে বিশেষ পূজা হয়। পূজাকে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ডে বিশাল মেলা হয়। যেটি শিবচতুর্দশী মেলা নামে পরিচিত। এ মেলায় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য সাধু ও নারী-পুরুষ অংশ নেন। মেলাটি দোলপূর্ণিমা পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। প্রতি বছর এলাকাটিতে ১০ লাখের বেশি তীর্থযাত্রীর পদচারণা ঘটে।

সীতার কুণ্ড দেখতে যেভাবে যাবেন : চট্টগ্রাম শহর কিংবা ঢাকা থেকে সীতার কুণ্ড দেখতে হলে প্রথমে যেতে হবে সীতাকুণ্ড বাজার। সেখান থেকে রয়েছে অটোরিকশা।

চট্টগ্রাম শহর থেকে সীতাকুণ্ড: সীতাকুণ্ড এলাকাটি মহাসড়কের আওতাধীন হওয়ায় সেখানে অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে নগরীর অলংকার মোড় কিংবা একেখান মোড় থেকে লোকাল বাসে যাওয়া যাবে সীতাকুণ্ড। এছাড়া কদমতলী থেকেও বাসে যাওয়া যাবে সীতাকুণ্ড।

সীতার কুণ্ড। ছবি: দৈনিক প্রভাতী

ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড: ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, আরামবাগ, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চট্টগ্রামগামী এসি-ননএসি বাস পাওয়া যায়। এসব বাসে খুব সহজেই যাওয়া যাবে সীতাকুণ্ড। 

এছাড়া ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেনে গিয়ে নামতে হবে ফেনী রেলস্টেশনে। এরপর রিকশা কিংবা অটোরিকশায় যেতে হবে মহিপাল বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে চট্টগ্রামগামী বাসে যাওয়া যাবে সীতাকুণ্ড। 

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে নামলে সেখান থেকেও বাসে যাওয়া যাবে সীতাকুণ্ড। তবে দূরত্ব ও সময় বিবেচনায় ফেনী রেলস্টেশনে নেমে যাওয়া ভালো।

কোথায় থাকবেন
সীতাকুণ্ড সদরে রাত্রিযাপনের জন্য একাধিক মাঝারি মানের হোটেল রয়েছে। এছাড়া উন্নতমানের হোটেলে থাকতে চাইলে যেতে হবে চট্টগ্রাম শহরের অলংকার কিংবা আগ্রাবাদ এলাকায়। এছাড়াও জিইসির মোড়, স্টেশন রোড ও নিউমার্কেট এলাকায় একাধিক উন্নতমানের হোটেল রয়েছে।

কা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার পূর্বে সীতার কুণ্ড। ছবি: দৈনিক প্রভাতীকোথায় খাবেন
দুপুরের খাবার ও রাতের খাবারের জন্য সীতাকুণ্ডেই একাধিক মাঝারি মানের খাবারের হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে আল-আমিন নামে একটি রেস্টুরেন্টের বেশ সুনাম রয়েছে।  

আরো যা দেখতে পারেন
সীতাকুণ্ডের পর্যটন এলাকাগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে- উপকূলীয় বনাঞ্চল, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক, সহস্রধারা ঝরনা, সুপ্তধারা ঝরনা, খৈয়াছড়া ঝরনা, নাপিত্তাছড়া ঝরনা ইত্যাদি।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর