সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১ |   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাঙ গিলে খাচ্ছিল সাপকে, সেখানেই নাটোরের রাজবাড়ি

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২২ ১৭ ০৫ ০১  

ব্যাঙ-গিলে-খাচ্ছিল-সাপকে-সেখানেই-নাটোরের-রাজবাড়ি

ব্যাঙ-গিলে-খাচ্ছিল-সাপকে-সেখানেই-নাটোরের-রাজবাড়ি

সম্পর্কিত খবর মহানবীর মদিনায় যাওয়ার পথ ধরে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা ফেব্রুয়ারি থেকে কোয়ারেন্টাইন ছাড়া থাইল্যান্ড ভ্রমণের সুযোগ সদ্য জমিদারি পাওয়া রাজা রামজীবন আর রঘুনন্দনকে তাদের মা আদেশ দিয়েছিলেন নিজেদের জন্মভূমির কোনো একটা জায়গায় রাজধানী প্রতিষ্ঠা করতে। তাই বর্ষার এক দিনে তারা বেড়িয়েছেন। যেখানে নৌকোয় যাতায়াতের সুবিধে বেশি, সেখানেই তৈরি হবে রাজধানী। সঙ্গে রয়েছেন পণ্ডিতের দল। ঘুরতে ঘুরতে তারা এলেন ভাতঝাড়া বিলে। বিলের মধ্যে একটা জায়গায় তারা দেখলেন, দুটো সাপ বিল পাড় হচ্ছে সাঁতরে। আর একটা ব্যাঙ গিলে খাচ্ছে ছোট একটি সাপকে। এসব দেখে পণ্ডিতরা জানালেন, রাজধানী প্রতিষ্ঠা করতে হবে এই বিলের ওপরই।

নাটোর শহরের গড়ে ওঠা নিয়ে এই গল্প প্রচলিত আছে মানুষের মুখে মুখে। সাপ আর ব্যাঙ নিয়ে গল্পকথার ঐতিহাসিক সত্যতা বিচার করা সম্ভব হয়নি, তবে ইতিহাস এটুকু বলে যে ভাতঝাড়ার বিল ছিল পুঠিয়ার রাজা দর্পনারায়ণের সম্পত্তি। রঘুনন্দন আর রামজীবন রাজা দর্পনারায়ণের কাছে এই বিল রায়তি স্বত্বে পত্তনির আবেদন করেন। নতুন রাজাকে রাজা দর্পনারায়ণ জমিটি দান করেন। রামজীবন সেখানেই তৈরি করান তার রাজবাড়ি। জায়গাটার নামকরণ করেন ‘নাট্যপুর’ অর্থাৎ আজকের নাটোর।  

১৭০৬-১৭১০ সাল নাগাদ বানানো হয়েছিল নাটোরের রাজবাড়ি। বাড়িটির ডাক নাম ছিল ‘পাগলা রাজার প্রাসাদ’। ১৭৩৪ সালে মারা যান রামজীবন। তার আগেই রাজা রামজীবনের দত্তক ছেলে রামকান্তের বিয়ে হয়েছিল রানি ভবানীর সঙ্গে। রাজা রামজীবনের মৃত্যুর পরে রামকান্ত নাটোরের রাজা হন। ১৭৪৮ সালে রাজা রামকান্ত মারা গেলে নবাব আলিবর্দি খাঁ জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব দেন রানি ভবানীর ওপর। রানি ভবানীর রাজত্বকালে তার জমিদারি এখনকার রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, রংপুর, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদহ জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

নাটোরের রাজবাড়ি। ছবি : সংগৃহীত

প্রায় ৫৪ বছরের শাসনে (১৭৪৮-১৮০২) তিনি নাটোরের রাজ পরিবারকে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য উচ্চতায়। অর্ধেক বাংলায় রাজত্ব করতেন বলে তাকে ‘অর্ধবঙ্গেশ্বরী’ বলে ডাকা হতো। রানির মৃত্যু হলে জমিদারির দায়িত্ব পান তার দত্তক ছেলে রামকৃষ্ণ। রামকৃষ্ণের পর তার দুই ছেলে শিবনাথ এবং বিশ্বনাথ ১৭৭৮ সালে নাটোর জমিদারবাড়ির যৌথ মালিক হন। পুরো জমিদার বাড়ি তাদের তাদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। তখন থেকে রাজবাড়িতে বড়ো ছেলের অংশকে বলা হতো ‘বড়ো তরফ’ আর ছোটো ছেলের অংশকে ‘ছোট তরফ’ বলা হতো।

আরো পড়ুন : চলুন যাই লক্ষ্মীচরণ সাহার জমিদার বাড়ি

রাজবাড়ির চারদিক ছিল পরিখায় ঘেরা। বড় তরফের প্রাসাদ, ছোট তরফের প্রাসাদ, বড় তরফের কাছারি ও প্রহরীর ঘর, ছোট তরফের কাছারি, রানি ভবনের মতো নয়টি ভবন ছিল গোটা রাজবাড়িতে। এখন গোটা প্রাসাদ এলাকায় মোট পাঁচটি বড় আকারের পুকুর আছে। রাজবাড়ির ভেতরে আছে চারটি মন্দির। আনন্দময়ী কালীবাড়ি, শ্যামসুন্দর মন্দির, সর্বমঙ্গলা মন্দির আর তারকেশ্বর শিব মন্দির। আর রয়েছে বেশ কিছু পুরোনো গাছ।

নাটোরের রাজবাড়ি যেতে হলে নাটোর শহর থেকে সরাসরি রিকশা বা টেম্পো নিতে হবে। ঢাকা থেকে ট্রেন এবং বাস – দুটোতেই পৌঁছনো যায় নাটোর।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর