সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১ |   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাকি রইলো ৫০

প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২১ ১৫ ০৩ ০২  

বাকি-রইলো-৫০

বাকি-রইলো-৫০

বাংলাদেশের বিজয়ের ৫০তম বছরে ১৫০টি দেশ ভ্রমণের ব্যক্তিগত মাইলফলক স্পর্শ করা লক্ষ্য ছিল নাজমুন নাহারের। করোনার এই বৈশ্বিক বিপর্যয়ের মধ্যেও সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছেন বাংলাদেশি এই পরিব্রাজক । তার কাছে এটি শুধু ভ্রমণ নয়—দেশকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা, বাঙালি সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম। তাকে বলা যায়, লাল-সবুজের পাতাকার অন্যত বাহক।

অসংখ্য দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়েছে নাজমুন নাহারকে। মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছেন অনেকবার। আঘাত পেতে পেতে উঠে দাঁড়িয়েছন, রক্তাক্ত হয়েছেন। বহমান নদীর স্রোতের সঙ্গে তার যে লড়াই, তা বিয়ার গ্রিলসের চেয়ে কম কিসের! আফ্রিকার জঙ্গলের ভেতর ঘুটঘুটে অন্ধকারে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়েছেন। তিনি নারী হয়েও নির্ভয়ে ঘাসের উপর ঘুমিয়ে রাত পার করেছেন। খাবারের যন্ত্রণা তো আছেই, পুড়তে হয়েছে মরুভূমির প্রচন্ড তাপমাত্রায়ও।

এত কিছুর পরও নাজমুন নাহার থামেননি। বিচক্ষণ পরিকল্পনার ম্যাপ সাজিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশ থেকে দেশান্তরে। তার এ যাত্রার খবরে অনেক পুরুষেরই মনে প্রশ্ন জানে, ছুটছেন তিনি কেমন করে? নাজমুন নাহার বলেন, এ যাত্রা কতটা বিপদসংকুল ছিল তা বলে বুঝানো যাবে না। তবে আমি মনে করি, পৃথিবীতে যা কঠিন তা সুন্দর। পশ্চিম আফ্রিকা ভ্রমণের সময়ও আমি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। মৃত্যুকে জয় করে আমি বাকি সব দেশ ভ্রমণের স্বপ্ন দেখছি এখনও। দুরহ পথ সাধ্য করেছি। বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা আমার কাছে সবচেয়ে বড় শক্তি।

লাল সবুজের পতাকা নাজমুনের সবচেয়ে বড় শক্তি। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশি এই পরিব্রাজক শততম দেশ ভ্রমণ করেছিলেন ২০১৮ সালের জুনে। শততম দেশ হিসেবে আফ্রিকার জিম্বাবুয়েকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি।  ১৫০তম দেশ হিসেবে ঘুরেছেন আফ্রিকার আরেক দেশ সাও টোমে ও প্রিন্সিপ। দুটি মাইলফলকই আফ্রিকায় কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমুন নাহার বলেন, আফ্রিকার দেশগুলোতে অনেক অদেখা প্রকৃতি লুকিয়ে আছে। সেটা আমাকে মুগ্ধ করেছে। ১৫০তম দেশ হিসেবে সাও টোমে ও প্রিন্সিপে বেছে নিয়েছি দেশটির ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে। বিশ্বের ঠিক মাঝামাঝি বিষুবরেখার মধ্যে দেশটির অবস্থান। আফ্রিকার ক্ষুদ্রতম দেশ, সমুদ্রের মাঝখানে। এসে মনে হচ্ছে ‘অদেখা স্বর্গ’।

নাজমুন নাহার এই পর্বের অভিযাত্রা শুরু করেছেন গত ৬ আগস্ট। এরপর একে একে তিনি বুরুন্ডি, ডি আর কঙ্গো, সাউথ সুদান, নামিবিয়া সফর করেন। ১৩ সেপ্টেম্বর পৌঁছেছেন অ্যাঙ্গোলার মাটিতে। ওনদিবা, হুমবে, বালানগানগা, মনগুয়া, চাহামা, লুবানগো, বেনগুয়েলা, লবিতো, পোর্তো এমবোইম, কালামবা, বারা ডো কুয়ানজা হয়ে সড়ক-মহাসড়ক বন জঙ্গল সমুদ্র পার হয়ে পৌঁছেন রাজধানী লুয়ান্ডার শহরে। এই অভিজ্ঞতা নতুন নয়। এভাবে বিশ্বের অনেক দেশ তাকে ভ্রমণ করতে হয়েছে।

২৪ সেপ্টেম্বর অ্যাঙ্গোলান সরকারের ডেপুটি মিনিস্টার এলসা বারবের নাজমুন নাহারকে অভিনন্দন জানান। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তিনি নাজমুন নাহারকে শান্তির ব্যাজ পরিয়ে দেন। দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতীয় পত্রিকা ‘জার্নাল দ্য অ্যাঙ্গোলা’য় নাজমুনকে নিয়ে এক বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়।

অ্যাঙ্গোলান সরকারের ডেপুটি মিনিস্টার এলসা বারবের সঙ্গে নাজমুন নাহার। ছবি: সংগৃহীত

অনেকের কাছে আফ্রিকা ভয়ের নাম হলেও, নামজুনের কাছে অনেক কঠিন সীমান্ত থেকেও কঠিনতর সীমান্ত এলাকা ছিল এই ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো। সড়ক পথের অবস্থা ভালো থাকলেও ছিনতাই, খুন, কিডন্যাপ, মাদক চালান হওয়ার কারণে সেখানকার দেশগুলো সফর অতটা সহজ ছিল না। গুয়াতেমালার শহরে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে এসেছেন তিনি।

মহাপর্বত, মহাপ্রলয়, মহাসমুদ্রের বাঁধা; নগর-বন্দর-শহরের দীর্ঘপথ আর মানবসৃষ্ট অনেক

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর