সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১ |   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিঘিতে মিলত সোনা-রুপার থালা, চুরিতেই শেষ হলো ভেসে ওঠার পালা

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২২ ১৫ ০৩ ০১  

দিঘিতে-মিলত-সোনা-রুপার-থালা-চুরিতেই-শেষ-হলো-ভেসে-ওঠার-পালা

দিঘিতে-মিলত-সোনা-রুপার-থালা-চুরিতেই-শেষ-হলো-ভেসে-ওঠার-পালা

সম্পর্কিত খবর ভ্রমণ ফিচার লেখার কিছু টিপস ফেনী জেলায় ঐতিহাসিক স্থান অনেকগুলো। যেমন, পাগলা বাবার মাজার, শতবর্ষী চাঁদগাজী ভুঞাঁ মসজিদ, প্রাচীর সুড়ঙ্গ মঠ, বিলোনিয়া সীমান্ত পোস্ট, বিলোনিয়া পুরোনো রেল স্টেশন ইত্যাদি। এখানকার আরেকটি ঐতিহাসিক জায়গা বিজয় সিংহ দিঘি।

ফেনী নদীর নামানুসারে জায়গার নামও ফেনী। ওই নামেরই জেলা, উপজেলা এবং শহর। ফেনী জেলাটি রয়েছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে। উত্তরে কুমিল্লা জেলা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে চট্টগ্রাম জেলা ও বঙ্গোপসাগর, পূর্ব দিকে চট্টগ্রাম ও ত্রিপুরা, পশ্চিমে নোয়াখালি।

ইতিহাস যেন একাকার হয়েছে এই বিশাল জলাশয়ে। ফেনী শহর থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার পশ্চিমে বিজয় সিংহ গ্রামে ফেনী সার্কিট হাউজের সামনে দিঘিটি অবস্থিত।

বিজয় সিংহ দিঘি। ছবি: সংগৃহীত

লোকমুখে প্রচলিত আছে, এই দিঘি খনন করিয়েছিলেন সেন বংশের রাজা বিজয় সেন। অনেকে মনে করেন, সেন রাজারা এসেছিলেন দক্ষিণ ভারত থেকে। আবার কেউ কেউ বলেন, সেন বংশের সদস্যরা আগে পাল সম্রাটদের অধীনে উচ্চ রাজপদে কর্মরত ছিলেন। পাল বংশের শাসকরা দুর্বল হতে থাকলে, সেনরা বাংলায় স্বাধীন শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলেন।

হেমন্ত সেনের ছেলে বিজয় সেনই বাংলায় স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। তিনি গৌড়, কামরূপ, কলিঙ্গর রাজাদের যুদ্ধে হারিয়েছিলেন। গৌড়ের শাসক তখন ছিলেন সম্ভবত মদনপাল। বিজয় সেন পরাজিত করেছিলেন দোরপবর্ধন, বীরগুণ, নানাদেব, রাঘব প্রভৃতি রাজাদেরও। কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে, কামরূপের রাজা বাংলা আক্রমণ করলে বিজয় সেন তাকে সফলভাবে প্রতিহত করেন। খ্রিস্টাব্দ ১০৯৬ থেকে ১১৫৮, দীর্ঘ ৬২ বছর তিনি রাজত্ব করেছিলেন।

জনশ্রুতি রয়েছে, ত্রিপুরার এক রাজকন্যার অন্ধত্ব দূর করার জন্য নাকি এই দিঘি খনন করা হয়েছিল। তাই একে রাজাঝির দিঘিও বলা হয়।

বিজয় সিংহ দিঘি। ছবি: সংগৃহীত

তবে দিঘিটির ইতিহাস নিয়ে বিতর্কের অবসান এখনো হয়নি। অনেকে দাবি করেন, সেন বংশের কোনো নৃপতি নয়, স্থানীয় এক রাজা বিজয় সিংহ নিজের মাকে খুশি করতে খনন করিয়েছিলেন এই দিঘি। এক সময়ে নাকি এই বিশাল জলাশয় থেকে সোনা-রুপার থালা ভেসে উঠত। তবে সেসব থালা যে কেউ চাইলেই ব্যবহার করতে পারত না। দিঘির কাছে করজোরে মিনতির পর দিঘিই মানুষকে এই সম্পদ দান করতেন। শুধু সোনা-রুপোর থালাই নয়, যে কোনো আয়োজনে দিঘির কাছে বাসন-পাতিল মিনতি করলে দিঘি তাও দিত। এক ভিখারিনি একবার একটি থালা চুরি করে। এরপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় থালা ভেসে ওঠা।

এসবের কোনো প্রমাণিক ভিত্তি নেই, কেবল মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত গল্পকথা হয়ে আছে আজও।

তবে স্থানীয় মানুষরা এটাও বলেন যে, আগে বিজয় সিংহ দিঘি থেকে বেশ বড় বড় মাছ পাওয়া যেত। যার ওজন ৮০ থেকে ১০০ কেজি। বিশাল এই দিঘির আয়তন ৩৭ দশমিক ৫৭ একর। চারদিক গাছে সাজানো, মনোরম পরিবেশ। বাংলাদেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রচুর মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর