রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১ |   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ছুটির দিনের গন্তব্য ‘সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক’

প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৫ ০৩ ০২  

ছুটির-দিনের-গন্তব্য-সীতাকুণ্ড-ইকোপার্ক

ছুটির-দিনের-গন্তব্য-সীতাকুণ্ড-ইকোপার্ক

সীতাকুণ্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। প্রায় দুই যুগ আগে ১৯৯৮ সালে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ৮০০ হেক্টর জমি নিয়ে এ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি গঠিত। যার এক হাজার ৯৯৬ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। 

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এবং পর্যটকদের বিনোদনের জন্য বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা পার্কটিতে রয়েছে বিরল প্রজাতির গাছপালা, হাজার রকমের নজরকাড়া ফুলের গাছ, কৃত্রিম লেক ও নানা প্রজাতির জীববৈচিত্র্য। 

এছাড়া রয়েছে সুপ্তধারা ও সহস্রধারা ঝরনাসহ ঝিরিপথের ছোট-বড় বেশ কয়েকটি ঝরনা, পিকনিক স্পট, বিশ্রামের ছাউনি।

ঐতিহাসিক চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে বাংলাদেশের প্রথম এবং এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম এ ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের অবস্থান। এটির মূল ফটক পেরিয়ে একটু সামনে এগোলেই রয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিস্তম্ভ। পাহাড়ের এ জনপদে এসেছিলেন কবি নজরুল। স্তম্ভের পাশে সাঁটানো সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে সেই তথ্য। এর কিছুদূর এগোলে মানচিত্রে নির্দেশিত রয়েছে পার্কটির দর্শনীয় স্থান।

সেখানে নির্দেশিত পথ ধরে দেড় কিলোমিটার এগোলে সুপ্তধারা ঝরনার সাইনবোর্ড। সেখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পেরিয়ে গেলে দেখা মেলে সুপ্তধারা ঝরনার। আরো এক কিলোমিটার পথ গেলে সহস্রধারা ঝরনার সাইনবোর্ড। এই এক কিলোমিটার পথেই রয়েছে পিকনিক স্পট, ওয়াচ টাওয়ার, হিম চত্বর। যেখান থেকে উপভোগ করা যায় দূর সমুদ্রের সৌন্দর্য। আবার সহস্র ধারা ও সুপ্তধারা ঝরনা থেকে বহমান জলকে কৃত্রিম বাঁধ তৈরির মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে কৃত্রিম হ্রদ।

ইকোপার্ক ছাড়াও চন্দ্রনাথ পাহাড়ে আরো রয়েছে- চন্দ্রনাথ মন্দির, শ্রী শ্রী সীতা মন্দির, উল্টা পাতালকালী মন্দির, ক্রমধেশ্বরী কালী মন্দির, ভোলানন্দগিরি সেবাশ্রম, কাছারি বাড়ি, শনি ঠাকুর বাড়ী, প্রেমতলা, শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী সেবাশ্রম, শ্রী রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, গিরিশ ধর্মশালা, দোল চত্বর, ননী গোপাল সাহা তীর্থযাত্রী নিবাস, তীর্থ গুরু মোহন্ত আস্তানা, বিবেকানন্দ স্মৃতি পঞ্চবটি, জগন্নাথ আশ্রম, শ্রীকৃষ্ণ মন্দির, শংকরমঠ ও আশ্রম, বিশ্বনাথ মন্দির, মহাশ্মশানভবানী মন্দির, স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির, গয়াক্ষেত্র, জগন্নাথ মন্দির, বিরুপাক্ষ মন্দির, পাতালপুরী, অন্নপূর্ণা মন্দিরসহ বিভিন্ন সনাতনী স্থাপনা।

চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার উত্তরে ও সীতাকুণ্ড বাজার থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের অবস্থান। সাপ্তাহিক ছুটি ও অন্যান্য ছুটির দিনগুলোতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয় ইকোপার্কটিতে। ইকোপার্কের জনপ্রতি প্রবেশ ফি ৫০ টাকা। গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করলে সেক্ষেত্রে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। 

সীতাকুণ্ড ইকোপার্কে যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক দেখতে হলে প্রথমে যেতে হবে সীতাকুণ্ড বাজার। সেখান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে গেলে পড়বে ফকিরহাট বাজার। সেই বাজারের দেড় কিলোমিটার পূর্বে সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের অবস্থান। চট্টগ্রাম থেকে যেতে হলে সীতাকুণ্ড বাজারের দুই কিলোমিটার আগে অর্থাৎ ফকিরহাট বাজারে নেমে গেলেই যাওয়া যাবে খুব সহজে।

চট্টগ্রাম শহর থেকে সীতাকুণ্ড: সীতাকুণ্ড এলাকাটি মহাসড়কের আওতাধীন হওয়ায় সেখানে অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে নগরীর অলংকার মোড় কিংবা একেখান মোড় থেকে লোকাল বাসে যাওয়া যাবে সীতাকুণ্ড। এছাড়া কদমতলী থেকেও বাসে যাওয়া যাবে সীতাকুণ্ড।

ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড: ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, আরামবাগ, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চট্টগ্রামগামী এসি-ননএসি বাস পাওয়া যায়। এসব বাসে খুব সহজেই যাওয়া যাবে সীতাকুণ্ড। 

এছাড়া ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেনে গিয়ে নামতে হবে ফেনী রেলস্টেশনে। এরপর রিকশা কিংবা অটোরিকশায় যেতে হবে মহিপাল বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে চট্টগ্রামগামী বাসে যাওয়া যাবে সীতাকুণ্ড। 

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে নামলে সেখান থেকেও বাসে যাওয়া যাবে সীতাকুণ্ড। তবে দূরত্ব ও সময় বিবেচনায় ফেনী রেলস্টেশনে নেমে যাওয়া ভালো।

কোথায় থাকবেন
সীতাকুণ্ড সদরে রাত্রিযাপনের জন্য একাধিক মাঝারি মানের হোটেল রয়েছে। এছাড়া উন্নতমানের হোটেলে থাকতে চাইলে যেতে হবে চট্টগ্রাম শহরের অলংকার কিংবা আগ্রাবাদ এলাকায়। এছাড়াও জিইসির মোড়, স্টেশন রোড ও নিউমার্কেট এলাকায় একাধিক উন্নতমানের হোটেল রয়েছে।

কোথায় খাবেন
দুপুরের খাবার ও রাতের খাবারের জন্য সীতাকুণ্ডেই একাধিক মাঝারি মানের খাবারের হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে আল-আমিন নামে একটি রেস্টুরেন্টের বেশ সুনাম রয়েছে।  

আরো যা দেখতে পারেন
সীতাকুণ্ডের পর্যটন এলাকাগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে- গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, আকিলপুর সমুদ্র সৈকত, কুমিরা-সন্দ্বীপ ফেরীঘাট, খৈয়াছড়া ঝরনা, নাপিত্তাছড়া ঝরনা ইত্যাদি।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর