সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১ |   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কেরালা : যেন এক ভিন্ন ভারত

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২২ ১৮ ০৬ ০১  

কেরালাযেন-এক-ভিন্ন-ভারত

কেরালাযেন-এক-ভিন্ন-ভারত

কেরালায় কয়েকদিন বেড়িয়ে আসলে আপনার মনে হবে, এ যেন এক ভিন্ন ভারত। ভারতের অন্য প্রদেশের সঙ্গে কেরালার তেমন কোনো মিল নেই। মানুষ থেকে শুরু করে, তাদের ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, আর পুরো পরিবেশেই লুকিয়ে আছে পার্থক্য। যা ভারত থেকে পুরোপুরি আলাদা করে ফেলেছে কেরালাকে।

দেখবেন, থাকবেন, খাবেন, ঘুরবেন আর ভাববেন এ কোন ভারত ? এক কোন জগৎ? এ কোন পরিবেশ?

কেরালা স্টেশনে নেমেই একরাশ মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হতে হবে। ঝকঝকে স্টেশন, স্টেশনে যাত্রীদের জন্য অল্প খরচে দারুণ আরামদায়ক এসি বিশ্রাম কক্ষ আর পরিচ্ছন্ন বাথরুমের ব্যবস্থা। টিকেট থাকা সাপেক্ষে প্রতি ঘণ্টায় মাত্র ২৫ রুপির বিনিময়ে গোসলের সুব্যবস্থাও রয়েছে।

কেরালায় কয়েকদিন বেড়িয়ে আসলে আপনার মনে হবে, এ যেন এক ভিন্ন ভারত।

অবাক করার মতো আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে এখানকার খাবার। ওখানে সবজি, ডিম বেশ সস্তা। হোটেলগুলোতে প্রায় সব রকম খাবার পাওয়া যায়। সবজি আর মাছ থেকে শুরু করে সব রকম মাংস, এমনকি গরুর মাংস পর্যন্ত আছে। রান্না বা কাবাব। আর সব খাবারের দামও সাধ্যের চেয়েও তুলনামুলক কম।

তবে সবচেয়ে মুশকিলের ব্যাপার হলো ওদের ভাষা। ওরা ভারতীয় হলে কি হবে? না জানে হিন্দি না তেমন ইংরেজি। ওরা শুধু ওদের তামিল ভাষা ছাড়া তেমন কিছুই জানে না। অধিকাংশই এমন। যে কারণে সকালে নাস্তা খেতে হোটেলে গিয়ে ডিম পোঁচ নাকি ভাজি খাবেন সেটা বোঝাতেই ৩০ মিনিট লাগতে পারে। হিন্দি, বাংলা ইংরেজির পাশাপাশি তামিল ভাষা  বোঝে এমন একজনকে খুঁজে নিয়ে আসার পরে তাদের বোঝানো জাবে।

কেরালার  অবর্ণনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ছবি : সংগৃহীত

কেরালা প্রদেশের মূল যে শহরটি, সেটির নাম ইরনাকুলাম। আর কেরালার এই শহরটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। ইরনাকুলাম যেটা আধুনিক কেরালা। একদম ঝকঝকে, তকতকে, আধুনিক, আর ব্যস্ততম এক শহর। যে শহরের রাত আর দিনকে আলাদা করা মুশকিল। যে শহরের কিছু কিছু জায়গা তো এমন যে, গাড়ির শোরুম, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, ব্যস্ততা আর অতি আধুনিক ছেলেমেয়েদের দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটা ভারত নাকি পশ্চিমা কোনো দেশ।

অথচ মাত্র কয়েক কিলোমিটার পশ্চিমে গেলেই চোখে পড়বে পুরোনে, নিরব, নির্জন শহরের অন্য এক কেরালার। যেখানে আলো আছে কিন্তু ঝলমলে নয়, শপিংয়ের জায়গা আছে কিন্তু অতি আধুনিক নয়, রেস্তোরাঁ আছে কিন্তু অভিজাত নয়, মানুষ আছে কিন্তু ব্যস্ততা নেই, ছেলেমেয়েদের আড্ডা আছে, কিন্তু সাধারণ মানের। এখানে সবকিছু পুরোনো, বনেদী, ধীরস্থির আর ঐতিহাসিক। কোচিন শহর তার সবটুকু পুরোনো ঐতিহ্য যেন ধরে রেখেছে।

কেরালার নৌকা। ছবি : সংগৃহীত

কোচিনের সরু রাস্তাঘাট, খোলা ময়দান, পুরোনো ঘরবাড়ি, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, দুর্গ, বিমানবন্দর, সমুদ্রতীর, খোলা প্রান্তর, সাগরের সঙ্গে লাগোয়া গভীর নদী, পুরোনো সেতু, জেটি, ডক ইয়ার্ড, নোঙ্গর, ফেরিঘাট, হোটেল ইত্যাদি সবকিছুই যেন ঐতিহ্য আর ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে তেমনই রয়ে গেছে বা রাখা হয়েছে।

কেরালার আরেকটি আকর্ষণ হলো ঐতিহ্যবাহী আর বিখ্যাত কাঞ্চিভরন এবং সিল্ক শাড়ি। এই শাড়ি এমনি এক শাড়ি যে নারী কেন,  যেকোনো পুরুষ মানুষই এই শাড়ির দোকানে ঢুকলে তার মাথা ঠিক রাখতে পারবে না। কী রঙের, কী ধরনের, কেমন দামের, কোন ডিজাইনের, কোন ধরনের মানুষের জন্য কেমন শাড়ি আপনি চান? আছে সব। এসব শাড়ির কোনো একটা দোকানে ঢুকে পড়লে আপনি কোনোভাবেই ভাগ্যের হাত থেকে বাঁচতে পারবেন না।

কেরালার চা বাগান। ছবি : সংগৃহীত

মোট কথা এই শাড়ির দোকানে একবার ঢুকতে পারলে আপনি কোনোভাবেই ভাগ্যের কাছে জয়ী হয়ে খুশি মনে ফিরতে পারবেন না। ভাগ্য এখানে আপনাকে পরাজিত করবেই। সেটা যেভাবেই হোক।

কেরালার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অবর্ণনীয়। পাহাড়-সমতল সমুদ্র-অরণ্য-নদী-ঝরনা-চা বাগান, জলপ্রপাত সবই আছে এখানে। সবই পেতে পারেন দুই থেকে চার ঘণ্টার দূরত্বের মধ্যেই। একই সঙ্গে এমন সব রকম প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ভারতের আর কোনো প্রদেশেই নেই

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর