শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১ |   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূলীয় সৌন্দর্যের লীলাভূমি ‘তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকত’

প্রকাশিত: ৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬ ০৪ ০১  

উপকূলীয়-সৌন্দর্যের-লীলাভূমি-তাড়ুয়া-সমুদ্র-সৈকত

উপকূলীয়-সৌন্দর্যের-লীলাভূমি-তাড়ুয়া-সমুদ্র-সৈকত

উপকূলীয় জেলা ভোলার মূল ভূখণ্ড থেকে একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের নাম ‘ঢালচর’। এ দ্বীপের দক্ষিণ পাশেই অবস্থান একটি সৈকতের। দীর্ঘ মেঘনা নদী এখানে পেয়েছে সমুদ্রের দেখা। সেখানেই গড়ে উঠেছে অপরুপ বাংলাদেশের এক লীলাভূমি।যার নাম ‘তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকত’।

ভোলা জেলা সদর থেকে দেড়শ কিলোমিটার দূরে তারুয়া সমুদ্র সৈকতের অবস্থান। ১৩৫ কিলোমিটার পাকা সড়কের পর পনের কিলোমিটার নৌ-পথ পেরিয়ে সেখানে যেতে হয়।

তাড়ুয়ায় সকালের সূর্যটা যেমন হাসতে হাসতে ওঠে, তেমনি সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে মুখ লুকায়। এখানে এলেই বোঝা যাবে, কতটা সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে প্রকৃতিতে।

সৌন্দর্যের লীলাভূমি তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকত। ছবি : সংগৃহীত

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নের দক্ষিণ প্রান্তেই বঙ্গোপসাগরের মোহনায় তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকত অবস্থিত। এখানে রয়েছে প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, লাল কাঁকড়া, ২৩০ ফুট লম্বা কাঠের তৈরি ল্যান্ডিং স্টেশন, বিশাল কেওড়াও তাড়ুয়ার বন। রয়েছে গড়ান, রেইনট্রি, গেওয়াসহ নানা ধরনের গাছ। শীত এলেই দ্বীপে বসে অতিথি পাখির মিলনমেলা।

এ দ্বীপে ভয়ংকর প্রাণী না থাকলেও রয়েছে শেয়াল, বন বিড়াল, সাপসহ নানা প্রজাতির প্রাণী। সৈকতের সাদা বালিয়ারিতে পর্যটকদের জন্য রয়েছে ছাতা ও চেয়ার। লাল কাঁকড়ারা ছোট ছোট পা দিয়ে দৌড়ে চলে বালিয়ারিতে। তবে মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই ওরা গর্তে লুকায়।

সৌন্দর্যের লীলাভূমি তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকত। ছবি : সংগৃহীত

তারুয়া সমুদ্র সৈকতে পর্যটকরা একসঙ্গে উপভোগ করতে পারেন বিশাল সমুদ্রের বিস্তীর্ণ জলরাশি, নানা ধরনের পাখিদের কল-কাকলি, বালুকাময় মরুপথ আর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ছায়াঘন মনকাড়া নিবিঢ় পরিবেশে সময় কাটানোর সুযোগ, বৈচিত্রময় প্রাণী আর সাগরের উত্তাল গর্জন। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে দ্বীপটিকে সাজিয়ে তুলেছে। বর্তমানে তারুয়া দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

ব্যস্তময় জীবনের একঘেয়েমি থেকে অবকাশ যাপনের ইচ্ছায় ঘুরে আসার মতো একটি স্থান তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকত। উত্তাল ঢেউয়ের গর্জন, কেওড়ার শ্বাসমূল, নির্মল বাতাস, সমুদ্রের তাজা মাছ দেখে যেকেউ প্রেমে পড়ে যাবে। প্রকৃতিপ্রেমিরা ঘুরে এলেও মন রয়ে যাবে সেখানেই।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে প্রতিদিন একাধিক লঞ্চ চরফ্যাশনের বেতুয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। লঞ্চগুলো ভোরবেলায় ঘাটে পৌঁছায়। লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। ডেক ভাড়া জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। চরফ্যাশনের বেতুয়া ঘাটে নেমে ইজিবাইকে করে ২০ টাকা দিয়ে চরফ্যাশন বাজারে যেতে হবে। সেখান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে কচ্ছপিয়া অবধি বোরাক ভাড়া ৪৫ টাকা। এসব জায়গায় মোটরসাইকেলও চলে, তবে সেক্ষেত্রে ভাড়া গুনতে হবে দ্বিগুণ। কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে (ভাড়া ১০০ টাকা) ঢালচর যেতে হবে। ঢালচর লঞ্চঘাট থেকে সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার পথ দুটি। এর মধ্যে একটি উপায় বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায়। তবে এ ক্ষেত্রে অনেক কষ্ট হবে। কারণ সেখানে কোনো মসৃণ রাস্তা নেই। বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে কেওড়া বাগান। নতুন কারও পক্ষে হাঁটা অতটা সহজ নয়। অপরদিকে ট্রলার দিয়েও তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকতে যেতে পারবেন। এই একই ভ্রমণে পর্যটকরা চর কুকরি-মুকরি ইকোপার্কও ঘুরে আসতে পারবে।

সৌন্দর্যের লীলাভূমি তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকত। ছবি : সংগৃহীত

যেখানে থাকবেন

এ সমুদ্র সৈকতে থাকার কোনো আবাসিক হোটেল বা ডাকবাংলো নেই। তবে এখানে বেশ কিছু বাসায় থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এসব ঘরে জনপ্রতি ২০০-২৫০ টাকায় থাকা যায়। আর খোলা আকাশের নিচে তাবু করে থাকাটা উত্তম। স্থানীয়দের কাছ থেকেও তাবু ভাড়া নিয়ে এখানে থাকা যাবে। ক্যাম্পিংয়ের জন্য আদর্শ জায়গা বলা যেতে পারে এ সমুদ্র সৈকতকে।

যা খাবেন
এই দ্বীপে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এ ছাড়া নদী ও সাগরের নানা প্রজাতির সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায়। তবে এখানকার হাঁসের মাংস ভুনা, মহিষের দুধের দই খুবই জনপ্রিয়।

সৌন্দর্যের লীলাভূমি তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকত। ছবি : সংগৃহীত

কোথায় খাবেন
এখানে কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্ট নেই। তবে স্থানীয়দের সহায়তায় ইচ্ছেমতো রান্না করিয়ে খেতে পারবেন। অথব

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর