সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১ |   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অরণ্য জনপদ: যেখানে রাত্রি নামে সন্ধ্যার আগে

প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০২১ ১৮ ০৬ ০১  

অরণ্য-জনপদ-যেখানে-রাত্রি-নামে-সন্ধ্যার-আগে

অরণ্য-জনপদ-যেখানে-রাত্রি-নামে-সন্ধ্যার-আগে

সন্ধ্যা নামার তখনও ঢের বাকি। খোশগল্প আর আড্ডা জমেছে বেশ। একই সঙ্গে চলছে বাগানের নির্ভেজাল চায়ের কাপে দেদারসে চুমুক। বলা নেই কওয়া নেই-সময়ের অনেক আগে হঠাৎ রাত্রির অন্ধকার নেমে আসলো। ঘড়ি দেখলাম, না সময় তো ঠিকই আছে। অরণ্যে ঘেরা পাহাড়ের উপরের সেমি পাকা আসাম’ স্থাপত্যের বাংলোকে যেন ঘিরে ধরল নিকষ কালো অন্ধকার। বিস্মিত হয়ে জানতে চাইলাম, কী ব্যাপার! ’বনের কাজ কারবার আলাদা, এখানে রাত্রি নামে সন্ধ্যার আগে। আবার দিনের আগেই ফুটে উঠে সূর্যের আলো’ জানতে পারলাম প্রতিত্তোরে। প্রকৃতির বিচিত্র এ লীলাখেলায় সত্যিই অভিভূত হলাম। 

চারিদিকে দুঃসংবাদ আর লকডাউনের বন্দীদশায় মনটা কেমন যেন বিষিয়ে উঠেছিল। ভাবলাম, মনটাকে একটু রিফ্রেশ করা দরকার। সিদ্ধান্ত নিলাম, দু’একটা দিন কোথাও বনবাসে যাব। যেখানে বিষাদের সাইরেন আর সংক্রমণের কোন ভীতি থাকবে না। সে ভাবনা থেকেই চলে গেলাম সুহৃদ সায়েমের নির্জন চা বাগানে। সে ওখানকার ব্যবস্থাপক। বিবি-বাচ্চাকে শহরে রেখে একাই থাকে বিশাল এ বাংলোতে। বড়সাহেবের প্রতি পাইক-পেয়াদা, আর্দালিদের খেদমত দেখে জমিদারদের কথা স্মরণে আসলো। একদিন একরাত থেকে মনটা চাঙা করেই তবেই ফিরে এলাম আপন কর্মস্থলে। সঙ্গী হলেন কলেজ শিক্ষক মাহবুব। প্রাণখোলা আড্ডাবাজ মানুষটি পুরো সফরকে সত্যিই বৈচিত্র্যময় করে তুলেছিল। একইসাথে সঙ্গী করে নিয়ে আসলাম অরণ্যের এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।   

যাইহোক, বাংলোর জমিদারী ধাঁচের বিশাল নির্জন ঘরে আড্ডা চলল গভীর রাত পর্যন্ত। খাওয়া-দাওয়া, আনন্দ-ফুর্তিতে কখন যে ঘুমনোর সময় হল বুঝতেই পারলাম না। কিন্তু প্রকৃতির এরকম মৌনতায় যান্ত্রিক মানুষদের কী ঘুম আসে! বাংলোর নিয়ম-মাফিক ঘণ্টা বাজলো। কান পেতে শুনলাম, কত বিচিত্র প্রাণীর অদ্ভুত সব ডাক। বনমোরগ, পেঁচা, শেয়াল, বনবিড়াল আর কত্ত জাতের নাম না জানা প্রাণীর রাত জাগা আওয়াজ। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ’আরণ্যক’ এ হারিয়ে গেলাম। এরইমাঝে কখন যে ঘুমের ঘোরে চলে গেলাম, বুঝতে পারলাম না। 

অরণ্যের সূর্যোদয় দেখার পরিকল্পনা থেকে সেই সাত সকালেই ঘুম থেকে উঠে পরলাম। শীতল কোমল সূর্য বনের ঝোপ-ঝাড় ভেদ করে ঠিক সময়েই জেগে উঠলো। সে সময়য়ের দৃশ্য কেবল অনুভব করা যায়, প্রকাশ করা যায় না। রাতের প্রাণীরা চলে যাচ্ছে নিরাপদ আবাসে, দিনের পাখ-পাখালী কলতান করে বেরিয়ে পড়ছে। স্নিগ্ধ-কোমল বনের বাতাস যেন সমস্ত ক্লান্তি আর বিষণ্ণতাকে নিয়ে গেল। খানিকটা পরে চা পান করেই বেরিয়ে পড়লাম প্রকৃতির রাজ্যে।

বাগানের চা গাছগুলো টিলার উপর ভদ্র ছেলের মতো দাঁড়িয়ে আছে। টিলার বালুময় রাস্তা দিয়ে আমরা হেঁটে চলছি। চারিদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। শতবর্ষী বাগানটির বেশিরভাগ গাছই অনেক পৌঢ়। অনেক ঘটনার সাক্ষী গাছগুলো কেবল দিয়েই যাচ্ছে। একেকটা গাছ কত্ত না লম্বা হওয়ার কথা। কিন্তু মানুষের ছলকৌশলে গাছগুলো চিরকালের বামুন দশা নিয়েই টিকে আছে। ছায়াবৃক্ষ দিয়ে পৃথিবীর আলো থেকে তাদের দূরে রাখা হয়েছে। দেখলাম, বাগানের শ্রমিক মেয়েগুলো থলে হাতে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসছে। খেয়াল করলাম, মানুষগুলোর চেহারায় বেদনা ভরা এক অদ্ভুত মায়া। নিজভূমি থেকে ব্রিটিশরা তাদেরকে এদেশে এনেছিল কত রঙ্গিন স্বপ্ন দেখিয়ে! 

মুল্লুকে চলো আওয়াজ তুলে তাদের কতজনকে না প্রাণ দিতে হয়েছে। মুল্লুকে ফিরতে ব্যর্থ মানুষগুলো নিয়তির জালে বন্দি হয়ে চা বাগানেই জীবনটাকে কাটিয়ে দিচ্ছে। বাগানে

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর