সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১ |   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌডুবীর জাহাজমারা

প্রকাশিত: ৩ এপ্রিল ২০২২ ১৬ ০৪ ০২  

সৌন্দর্যের-লীলাভূমি-মৌডুবীর-জাহাজমারা

সৌন্দর্যের-লীলাভূমি-মৌডুবীর-জাহাজমারা

চারদিকে সমুদ্রের জলরাশি। ঢেউয়ের তালে ছোট প্রজাতির মাছেদের দল ছোটাছুটি করে। পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয় গোটা এলাকা। বালুতে দেখা যায় লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি। ভাটার জল নামতে শুরু করলে লাল কাঁকড়ারা ছুটে চলে পুরো সৈকতজুড়ে। সকালে পূর্বাকাশে সমুদ্রের বুক চিরে লাল সূর্যের জেগে ওঠা, আর সাঁঝবেলায় পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার মতো দৃশ্য যেকোনো জায়গায় দাঁড়ালেই উপভোগ করা যায়।

এই স্থানের নাম জাহাজমারা। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে সমুদ্রের বুকে জেগে ওঠা একটি দ্বীপ। পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলায় মৌডুবী ইউনিয়নে সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাহাজমারা সৈকত এখন সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র।

আগে জাহাজমারা এলাকার নাম ছিল চরবগলা। বঙ্গোপসাগরের এই জাহাজমারা এলাকাটি ছিল আন্তর্জাতিক নৌরুট। ব্রিটিশ আমলে একটি বিদেশি জাহাজ ওই চ্যানেলে আটকা পড়ে এবং আস্তে আস্তে পলি পড়ে ডুবে যেতে থাকে। স্বাধীনতা–পরবর্তীও সেই জাহাজটি চ্যানেলে দেখা গেছে। তখন থেকেই আশপাশের লোকজন জাহাজটি দেখতে ওই এলাকায় যেতে থাকে। বিদেশি জাহাজ মার খাওয়া থেকেই নামকরণ হয়ে যায় জাহাজমারা।

সাঁঝবেলায় পশ্চিম আকাশে হেলে পড়া সূর্য। ছবি : সংগৃহীত

পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ জাহাজমারা সৈকতকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি করতে রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রশাসন ও মৌডুবী ইউপি কার্যালয় থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাহাজমারা সৈকতটি দেখতে কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা যান। এখানে সমুদ্রতীরে দীর্ঘ সৈকতের পাশে রয়েছে বন বিভাগের ঘন বনাঞ্চল। বন বিভাগ রাঙ্গাবালী রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজমারা সৈকতের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে এক কিলোমিটারের বেশি সংরক্ষিত বন রয়েছে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই সংরক্ষিত বনে কেওড়া, ছৈইলা, বাইন, নিম, খৈয়াবাবলা, বাবলা বলইসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছিল। বর্তমানে সংরক্ষিত জাহাজমারা বনে বিভিন্ন প্রজাতির পাঁচ লক্ষাধিক গাছ রয়েছে।

জাহাজমারা সৈকত পর্যটকদের কাছে পরিচিতি পাচ্ছে এবং পর্যটকদের আগমন ঘটছে, তাই বন বিভাগ থেকে সৈকতকে আরো আকর্ষণীয় করতে ঝাউবাগান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যটকেরা এই ঝাউবাগানের ছায়ায় বসে একটু বিশ্রামসহ নির্মল বাতাস নিতে পারবেন।

নয়নাভিরাম এই সৈকতে পর্যটন মৌসুম এলেই কিছু ট্রলার পর্যটকদের নিয়ে জাহাজমারায় যাতায়াত করে। কুয়াকাটা থেকে কিংবা রাঙ্গাবালী থেকে ট্রলার ও মোটরসাইকেল যাতায়াত বেড়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে পর্যটকেরা এসব স্থানে ছুটে আসছেন। তবে পর্যটকদের নদী ও সড়কপথে সহজ যোগাযোগের পথ সৃষ্টি হলে জাহাজমারা পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।

যাতায়াত

জাহাজমারা যাতায়াতের একাধিক পথ রয়েছে। ঢাকার সদরঘাট থেকে বিকেল ৫টায় একটি লঞ্চ রাঙ্গাবালীর উদ্দেশে ছেড়ে যায়। পরদিন ভোরে রাঙ্গাবালীর কোড়ালিয়া লঞ্চঘাট পৌঁছে যাবে। লঞ্চের ডেকের ভাড়া ৪৫০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ১ হাজার ৪৫০ টাকা এবং ডাবল কেবিন ভাড়া ২ হাজার ৮০০ টাকা। কোড়ালিয়া ঘাট থেকে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে ২০ মিনিটেই রাঙ্গাবালী খালগোড়া বাজার খেয়াঘাট পৌঁছে যাবেন। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা উপজেলা সদর রাঙ্গাবালীতে আবাসিক হোটেল রয়েছে এবং সঙ্গে খাওয়ার ব্যবস্থা। এখান থেকে সকালে জাহাজমারা গিয়ে সারা দিন কাটিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসা যায় উপজেলা সদরে।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর