সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১ |   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শীতে ভ্রমণ হোক রাঙামাটিতে

প্রকাশিত: ৪ জানুয়ারি ২০২২ ১৫ ০৩ ০২  

শীতে-ভ্রমণ-হোক-রাঙামাটিতে

শীতে-ভ্রমণ-হোক-রাঙামাটিতে

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার একটি রাঙামাটি। চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করলে ৭৭ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে আপনি পৌঁছে যাবেন রাঙামাটিতে। চলুন, একনজরে দেখে নেওয়া যাক রাঙামাটির আকর্ষণীয় কিছু পর্যটন কেন্দ্র।

কাপ্তাই লেক

কাপ্তাই লেকে কায়াকিং অথবা নৌকা ভ্রমণ আপনাকে দেবে অন্যরকম রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। স্বর্গীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রায় সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে সমতলভূমি আর পাহাড়ি বনে ঘেরা মানবসৃষ্ট কাপ্তাই লেকে। জলপথে ভ্রমণের মাধ্যমে ঘুরে দেখতে পারবেন কাপ্তাই বাঁধ, রাঙামাটি শহর, রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু, নৌবাহিনী একাডেমি, শুভলং ঝর্ণা, কর্ণফুলী নদী, শেখ ইকোপার্কসহ মনোরম সব পর্যটন কেন্দ্র।

ঢাকার সায়েদাবাদ অথবা কমলাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি যেতে পারবেন কাপ্তাইয়ে। সময় লাগবে সাত থেকে আট ঘণ্টা। এ ছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকেও কাপ্তাই যেতে পারবেন।

স্পিডবোটের মাধ্যমে কাপ্তাই লেক ভ্রমণের মধ্য দিয়ে আপনি এই জায়গাটি ঘুরে দেখতে পারেন। রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার বা পর্যটন কমপ্লেক্স থেকে আপনি স্পিডবোট ভাড়া করতে পারবেন। ধারণক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে এর ভাড়া পড়বে এক হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। রিজার্ভ অথবা অন্যদের সঙ্গে শেয়ারেও ভাড়া নিতে পারেন নৌকা।
 

রাজবন বিহার

রাঙামাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই আপনি এখানকার প্রকৃতির পবিত্রতা অনুভব করতে পারবেন, যা আপনার মনের সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করতে সাহায্য করবে। মনকে আরো প্রশান্তি দিতে ঘুরে আসতে পারেন রাঙামাটির অন্যতম প্রাচীন বৌদ্ধবিহার রাজবন বিহার থেকে।

রাঙামাটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিহারটি অবস্থিত হলেও শহরের যান্ত্রিক কোলাহল এখানে অনুপস্থিত। কাপ্তাই লেক আর পাহাড়ের সবুজ বনানীর ছায়ায় ঘেরা রাজবন বিহার। রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার থেকে জলপথে বা স্টেডিয়ামের পার্শ্ববর্তী সড়কপথে অল্প সময়েই যাওয়া যায় রাজবন বিহারে।

শুভলং ঝর্ণা

রাঙামাটি শহর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে শুভলং বাজারের পাশেই শুভলং ঝর্ণার অবস্থান। রাঙামাটি থেকে শুভলং পৌঁছাতে সাধারণত দেড় ঘণ্টা মতো সময় লাগে। শুকনো মৌসুমে পানি কম থাকলেও বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু শুভলং ঝর্ণা থেকে বিপুল জলধারা আছড়ে পড়ে কাপ্তাই লেকে। এ ছাড়া শুভলং ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার পথে এর আশপাশের সৌন্দর্যও বিমোহিত করবে আপনাকে। শুভলং ঝর্ণার কাছেই রয়েছে সুউচ্চ শুভলং পাহাড়।

ঝুলন্ত সেতু

রাঙামাটি শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো ঝুলন্ত সেতু। শহরের শেষ প্রান্তে কাপ্তাই লেকের একাংশে ৩৩৫ ফুট লম্বা এই ব্রিজটি পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এই সেতুকে ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ বলা হয়ে থাকে। দৃষ্টিনন্দন এই সেতু দুটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের মধ্যে গড়ে দিয়েছে আত্মিক সম্পর্ক। এই ঝুলন্ত সেতুর ওপর থেকেই অবলোকন করা যায় কাপ্তাই লেকের অপরূপ সৌন্দর্য।

রাঙামাটি শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরেই এই ঝুলন্ত সেতুর অবস্থান। সিএনজি অটোরিকশা বা প্রাইভেট জিপ ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে।

কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান

রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক পাঁচ হাজার ৪৬৪ হেক্টর জায়গাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই উদ্যানে বৃক্ষায়ন করা হয়েছিল ১৮৭৩, ১৮৭৮ ও ১৮৭৯ সালে। এর ফলে এখানে গড়ে উঠেছিল ক্রান্তীয় বর্ষাবন বা রেইন ফরেস্ট। কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে হরিণ, হাতি, বনবিড়াল, মেঘলা চিতা, বানরসহ নানা রকমের প্রাণীবৈচিত্র্য রয়েছে। বিপন্ন প্রজাতির বেশ কিছু পাখির সন্ধানও পাওয়া যায় এখানে। রিকশায় করেই রাঙামাটি শহর থেকে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে যাওয়া যায়।

রাঙামাটি মানেই অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রাজ্য। পাহাড়িকন্যা রাঙামাটির সৌন্দর্য পাখির ডানার মতই পেখম মেলে সব মৌসুমে। প্রকৃতির নিবিড় আলিঙ্গনে বাঁধা রূপের রানি রাঙামাটির পরতে পরতে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। রাঙামাটির গহিন অরণ্য, পাহাড়ি প্রকৃতির অমোঘ রূপের আকর্ষণ তাই পর্যটকদের কাছে অফুরন্ত।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর