রাজনীতির মাঠে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি থাকলে অশান্তির অবসান হবে না: ইনু

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, বাঙালি-বাংলা-বাংলাদেশ-মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যতদিন রাজনীতির মাঠে থাকবে, ততদিন দেশের রাজনীতির মাঠে অস্থিরতা-সংঘর্ষ-সংঘাত-অশান্তির অবসান হবে না।

তিনি বলেন, বাংলা-বাঙালি-বাংলাদেশ-মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতার বিপক্ষের অপশক্তি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চিরশত্রুদের রাজনৈতিকভাবে পরাজিত-দমন-ধ্বংস করেই রাজনীতি ও সমাজে স্থায়ী শান্তি অর্জন করতে হবে।

হাসানুল হক ইনু শনিবার ফেনীর গ্র্যান্ড সুলতান কনভেনশন হলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ-এর ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আয়োজিত জাসদ চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি।

দেশের রাজনীতির বর্তমান অস্থিরতা, সংঘাত ও সংঘর্ষ নতুন নয়, এটা  ’৫২, ’৭১ ও ’৭৫-এর পুরাতন বিরোধের বহিঃপ্রকাশ উল্লেখ করে  জাসদ সভাপতি বলেন, ’৫২ ও ’৭১-এ মীমাংসিত বিষয়গুলোকে অমীমাংসিত করা ও ঐতিহাসিক সত্যকে অস্বীকার করার রাজনীতির মাধ্যমে পরাজিত শক্তি এ বিরোধ জাগিয়ে তুলেছে। ১৯৭৫ সাল থেকে মুশতাক-জিয়া এই  ’৫২ ও ’৭১ বিরোধী, বাংলা-বাঙালি-বাংলাদেশ-স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী পাকিস্তানপন্থার রাজনীতি রাষ্ট্র-রাজনীতি-সমাজে চাপিয়ে দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করে বিরোধের রাজনীতিকে স্থায়ী রূপ দিয়েছে। বিএনপি-জামাতসহ  ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক, জঙ্গীবাদী, উগ্রবাদী শক্তিগুলো এই বিরোধের রাজনীতির ধারক ও বাহক।

তিনি বলেন, এরা বাঙালির আত্মপরিচয়, ভাষা, সংস্কৃতি, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধান মানে না। এরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহনীর গণহত্যার পক্ষে, রাজাকার-আলবদর-যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পক্ষে সাফাই গায়। এরা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক ধারাকে নিশ্চিহ্ন করতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, কর্নেল তাহেরকে হত্যা করেছে ও শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে।

হাসানুল হক ইনু বলেন, এসব শেখ হাসিনার একার ক্ষমতায় থাকার বিষয় নয়, শেখ হাসিনার একার লড়াই না। বরং সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়েই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চিরশত্রু পাকিস্তানপন্থার রাজনীতির ধারক-বাহক বিএনপি-জামাতসহ ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িক-জঙ্গীবাদী-উগ্রবাদী শক্তিকে বর্জন ও ধ্বংস করার দায়িত্ব নিতে হবে। সমগ্র জাতিকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশ আফিগানিস্তান-পাকিস্তানের মতো তালেবানি পথে যাবে, নাকি ধর্মের নামে সংঘাত-সংঘর্ষ-অশান্তি-খুনাখুনি-রক্তারক্তির পথে যাবে, নাকি শান্তি-স্থিতিশীলতা-উন্নয়নের পথে যাবে?  

শিরীন আখতার বলেন, দেশ ও জাতির চিরশত্রু এবং নারীর চিরশত্রু ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িক-উগ্রবাদী-জঙ্গীবাদী অপশক্তি মোকাবিলার ঐক্য ও জোটের রাজনীতির পাশাপাশি জাসদের নিজস্ব একটি সুনির্দিষ্ট রাজনীতি আছে। জাসদের রাজনীতি হচ্ছে বৈষম্যের অবসান করা এবং দেশ ও বাজেটের সম্পদ সমাবেশ ও বিলিবন্টনে বঞ্চিত-অসহায়-নিরুপায়-কর্মহীন-আয়হীন নারী পুরুষকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

ফেনী জেলা জাসদের সভাপতি নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে এবং জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নইমুল আহসান জুয়েলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ প্রতিনিধি সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জাসদ স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন, মীর হোসাইন আখতার, সহ-সভাপতি নুরুল আকতার, বীরমুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী, আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম, মো. মোহসীন প্রমুখ।