সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১ |   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মিশ্রীপাড়ার বৌদ্ধ বিহার: রাখাইন ঐতিহ্যের প্রাচীন নিদর্শন

প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২২ ১৯ ০৭ ০২  

মিশ্রীপাড়ার-বৌদ্ধ-বিহার-রাখাইন-ঐতিহ্যের-প্রাচীন-নিদর্শন

মিশ্রীপাড়ার-বৌদ্ধ-বিহার-রাখাইন-ঐতিহ্যের-প্রাচীন-নিদর্শন

কুয়াকাটা সৈকত থেকে ১০ কি.মি. পূর্ব দিকে মিশ্রীপাড়া গ্রাম। সেখানে আছে একটি বৌদ্ধ বিহার। বাংলাদেশে বসবাসরত রাখাইনদের একটি মূল্যবান উপাসনালয় এটি। শুধু উপাসনালয় নয়, এটি আজ তাদের ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতীকও। তাইতো যুগ যুগ ধরে এটিকে আগলে রেখেছেন এ দেশের রাখাইনরা। বলছিলাম, সীমা বৌদ্ধ বিহারের কথা।

পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলি ইউনিয়নের অবস্থিত এই সীমা বৌদ্ধ বিহারটি। রাখাইন ঐতিহ্যের প্রাচীন নিদর্শন এই মন্দিরে রয়েছে গৌতম বুদ্ধের প্রতিমার পাশাপাশি ২০০ বছরের পুরানো একটি কূপও। বলা হচ্ছে, এই মূর্তিটি এই উপমহাদেশের বৃহত্তম বুদ্ধ মূর্তি। 

বিহারে বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন মূর্তির উচ্চতা ৩৬ ফুট। চারপাশে গাছে ঘেরা খোলা মাঠ। থাকে থাকে সাজানো টিনের চাল ক্রমেই সরু হয়ে মিশেছে উচ্চতার গন্তব্যে। ভেতরের মূল বিহারেও রং-তুলির মমতার পরশ লেগেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাজারো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এখানে আসেন। এই বৌদ্ধ বিহারে তারা উপাসনা করে। অনেকের বিশ্বাস, এখানে প্রার্থনা করলে পূর্ণতা লাভ করা যায়। 

সীমা বৌদ্ধ বিহার। ছবি : সংগৃহীত

মন্দিরটি একটি লাল ও সাদা রঙের টিনশেড ছাদযুক্ত বিল্ডিং। যা শীর্ষে একটি পাতার মতো করে কোণে মিলিত হয়েছে। এ ছাড়াও এখানে বৌদ্ধ ও প্রাণীর অন্যান্য আটটি মূর্তি রয়েছে। বিহারের পাশেই রয়েছে রাখাইন পল্লী এবং রাখাইনদের আয়ের অন্যতম মাধ্যম তাঁত শিল্প।

বৌদ্ধ বিহারটি ভক্তদের কাছে একটি পবিত্র গন্তব্য। রাস পূর্ণিমা এবং মাঘী পূর্ণিমা উৎসব উপলক্ষে এখানে অনেক ভক্ত আসেন। এই দুটি অনুষ্ঠানে ভক্তরা পবিত্র স্নান করেন এবং ঐতিহ্যবাহী মেলায় যোগদান করেন। মেলায় অলঙ্কার, প্রাচীন জিনিসপত্র, রাখাইন সংস্কৃতির কাপড় ছাড়াও অনেক কিছুই কিনতে পারবে যে কেউ। শত বছরের পুরনো বৌদ্ধ মন্দিরটি রাখাইনদের প্রাচীন ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতীক।

শিশুদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে বৌদ্ধ বিহারে বিনা খরচে লেখাপড়ার দায়িত্ব হাতে নিয়েছেন মিশ্রিপাড়ার সীমা বৌদ্ধ বিহারের দায়িত্বরতরা। সীমা বৌদ্ধ বিহারের সীমানার ভেতরেই লোকাসুখ বৌদ্ধ বিহার দরিদ্র ছাত্র উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামে একটি স্কুলে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কুয়াকাটার মিশ্রিপাড়ার সীমা বৌদ্ধ বিহারের প্রধান উত্তম ভিক্ষু। পাশাপাশি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন চানাফ্রু নামে একজন রাখাইন শিক্ষক।

সীমা বৌদ্ধ বিহার। ছবি : সংগৃহীত

শিক্ষক চানাফ্রু জানান, এ স্কুলটিতে বর্তমানে ৩৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যারা দিনের বেলায় এ স্কুলে প্রথম শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠগ্রহণ করে।

উত্তম ভিক্ষু জানান, কোনো সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াই স্কুলটি চলছে। কেউ যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন তবে এটি আরো ভালোভাবে চালানো সম্ভব হতো।

মিশ্রিপাড়ার সীমা বৌদ্ধ বিহারের তাৎপর্য তুলে ধরে তিনি বলেন, শত বছরের পুরনো এখানকার বৌদ্ধমূর্তিটি গৌতম বুদ্ধের আসন আবক্ষের মূর্তি এটি। এ মূর্তিটি উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধমূর্তি।

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ কুয়াকাটা। কুয়াকাটা নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাখাইনদের ইতিহাস। এখানে যেমন রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, তেমনই রয়েছে ইতিহাস ঐতিহ্যের নিদর্শন। সেই ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন এই বিহার। উপাসনার জন্য সুদূর প্রাচীনকালে রাখাইনরা স্থাপন করে এই বিহারটি। কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে আজ অন্যতম আকর্ষণীয় যায়গা হয়ে উঠেছে এটি।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর