সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১ |   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এ যেন বাংলার তাজমহল

প্রকাশিত: ৭ জুন ২০২২ ১৮ ০৬ ০২  

এ-যেন-বাংলার-তাজমহল

এ-যেন-বাংলার-তাজমহল

বাংলাদেশ থেকে ভারতের আগ্রার তাজমহলের দূরত্ব বেশ অনেকটা। এছাড়াও দুটি আলাদা দেশ, মাঝখানে সীমান্ত, কাঁটাতার। তাজমহল দেখতে পাসপোর্ট, ভিসা করিয়ে বাংলাদেশ থেকে আগ্রা যাওয়াও বেশ ঝক্কি-ঝামেলার। এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও আছে এক তাজমহল। 

ভারতে অবস্থিত আগ্রার তাজমহল দেখার ইচ্চা অনেকের থাকলেও সবার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হয় না। তবে আগ্রার তাজমহল আপনি কিন্তু বাংলাদেশে দেখতে পারেন। ভ্রমণপিপাসু মানুষের দৃষ্টির পরিতৃপ্তির জন্য বাংলার ইতিহাসের প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁয়ের নির্মিত হয়েছে ভারতের আগ্রার তাজমহলের আদলে বাংলার তাজমহল। আগ্রার বিখ্যাত মুঘল স্থাপত্যের এক রেপ্লিকাও বলা যেতে পারে এই সৌধটিকে।

বাংলাদেশের শিল্পপতি, চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং পরিচালক আহসানউল্লাহ্ মনি এই তাজমহলের উদ্যোক্তা। আহসানউল্লাহ্ তাজমহলের প্রেমে পড়েছিলেন ১৯৮০ সালে, যখন তিনি গিয়েছিলেন আগ্রা দেখতে। এরপর বারবার তিনি তাজমহল দেখেছেন। 

আহসানউল্লাহ্ চেয়েছিলেন, তার দেশের যেসব গরিব মানুষের ভারতে গিয়ে আসল তাজমহল দেখার সামর্থ্য নেই, তারা যেন নিজের দেশেই তাজমহল দেখার স্বপ্ন খানিকটা মিটিয়ে নিতে পারেন। তবে শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, তার বাইরে অন্যান্য দেশের ভ্রমণার্থীরাও এই তাজমহল দেখতে যাবেন, সেটাই ছিল তার ইচ্ছে।

বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে বারবার উঠে এসেছে সোনারগাঁওয়ের নাম। এখানেই ২০০৩ সালে তাজমহলের রেপ্লিকা বানানোর কাজ শুরু হয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বেশ ঘটা করে তার উদ্বোধন করা হয়। এই স্থাপত্য পরিচিত হয়ে ওঠে বাংলাদেশের তাজমহল নামে। আসল তাজমহলের মতোই এটির চার কোণে রয়েছে চারটে মিনার। মাঝখানের মূল ভবনটি টাইলস করা আর দারুণ সব পাথর দিয়ে মোড়ানো। এই ভবনে আহসানউল্লাহ্ এবং তার স্ত্রী রাজিয়ার জন্য কবরের স্থান সংরক্ষিত করা হয়েছে। সামনের ১০টা চমৎকার ফোয়ারা মুগ্ধ করে দর্শকদের। চারদিকে ফুলের বাগান, দু’পাশে ভ্রমণার্থীদের জন্য বসার জায়গাগুলোও বেশ মনোরম।

এখানে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রাজমনি ফিল্ম সিটি রেস্তোরাঁ। পিকনিকের জন্য খুব উপযুক্ত জায়গা। এছাড়া রাজমনি ফিল্ম সিটি স্টুডিওতে যে কোনো দর্শনার্থী ইচ্ছে করলে ছবি তুলতে পারেন। 

‘বাংলার তাজমহল’কে ঘিরে বাইরে গড়ে উঠেছে মাটির গয়না, নানা রকমের হস্তশিল্প, জামদানি শাড়ি এবং আরো অনেক জিনিসপত্রের দোকান। কাছেই রয়েছে মিশরের পিরামিডের আদলে বানানো রেপ্লিকা। আছে শুটিং স্পট এবং সিনেমা হল। তাজমহলের অনুকরণে এই স্থাপত্য নির্মাণকে ভারত সরকার খুব একটা ভালোভাবে নেয়নি। 

বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস থেকে আহসানউল্লাহ্-র বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। তবে সে সব মিটেও গেছে। বরং ভারত-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মিলনের প্রতীক হয়ে বাংলার তাজমহল এখনও পর্যটকদের মনোরঞ্জন করে চলেছে।

যেভাবে যাবেন বাংলার তাজমহল: 

ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। আপনাকে যেতে হবে সোনারগাঁয়ের পেরাবো গ্রামে। সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে অথবা গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জের সর্বত্র যাতায়াতের জন্য লোকাল ও স্পেশাল বাস আছে। ভাড়া বিশ থেকে ত্রিশ টাকা। প্রথমে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড হয়ে নারায়ণগঞ্জ যেতে হবে। এরপর নারায়ণগঞ্জ থেকে পেরাবো গ্রামে যেতে হবে।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর