মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঘুমন্ত জোছনার শরীরে বাবা-ছেলের হাত, গৃহকর্তী বললো ‘চুপ থাক’

প্রকাশিত : ১২:০০ এএম, ৯ জানুয়ারি ২০২১ শনিবার

ঘুমন্ত-জোছনার-শরীরে-বাবা-ছেলের-হাত-গৃহকর্তী-বললো-চুপ-থাক

ঘুমন্ত-জোছনার-শরীরে-বাবা-ছেলের-হাত-গৃহকর্তী-বললো-চুপ-থাক

সম্পর্কিত খবর স্ত্রীর মাথা ন্যাড়া করে ১৫ দিন আটকে রেখে নির্যাতন দিন নেই, রাত নেই; ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করতে হয় জোছনা বেগমকে। তাই গভীর রাতে ঘুমাতে হয় তাকে। কিন্তু মাঝে মাঝেই ঘুমন্ত জোছনার স্পর্শকাতর অঙ্গ স্পর্শ করে কিছু ‘দানব হাত’। চোখ খুলতেই আঁতকে উঠেন।

জোছনা একটি ছদ্মনাম। তবে চরিত্রটি সত্য। জোছনা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন বিদেশের মাটিতে। ঘটনাটি ঘটে সৌদি আরবের রিয়াদে। এক আরব ব্যবসায়ীর বাসায়।

জোছনা বলেন, রাত হলেই বাড়ির গৃহকর্তা ঝাপটে ধরেন। শরীরের সব শক্তি দিয়ে বাধা দেন যেন কিছু না বলতে পারি। উল্টো ধমক দেন আমাকে। জানিয়ে দেন, এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলা যাবে না। তারপর থেকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও গৃহকর্তার যৌন নির্যাতন মেনে নেন জোছনা।

আরো পড়ুন: ‘লাইক’ বাটন সরিয়ে দিচ্ছে ফেসবুক

বরিশালের মেয়ে জোছনা অনেক স্বপ্ন নিয়ে সৌদিতে পা রাখেন। বয়স্ক মা-বাবা, ছোট দুই বোন ও এক ভাইকে রেখে এসেছেন তিনি। বড় সন্তান হিসেবে পরিবারের জন্য কিছু করতেই প্রতিবেশী রফিক মিয়ার মাধ্যমে সৌদিতে এসেছেন। রফিককে এজন্য অর্ধলক্ষ টাকা দিতে হয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত জেনেছেন নারী শ্রমিকদের জন্য ভিসা ফ্রি।

সৌদি আসার আগে একটু আধটু আরবি ভাষা আয়ত্ব করেছিলেন জোছনা। তা দিয়েই বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেন গৃহকর্ত্রীকে। তারপরও কোনো লাভ হয়নি, বরং বললো ‘চুপ থাক’! এরপর গৃহকর্তা কর্তৃক অত্যাচার আরো বাড়ে। তাই জোছনাও মেনে নেন। প্রায় রাতই কাটছিলো এভাবেই।

আরো পড়ুন: ৫ দিনের শিশুর আকিকায় স্বজনদের লাশের সারি

শুধু গৃহকর্তার অত্যাচারই শেষ ছিল না। হঠাৎ এক রাতে গৃহকর্তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেজো ছেলেও দস্যুর মতো দুটি হাত বাড়িয়ে দেয় জোছনার ঘুমন্ত শরীরে। পিতার মতোই এই যুবক তাকে ঝাপটে ধরেন। সেই রাতে সাহস করে চিৎকার করেন জোছনা।  

চিৎকার শুনে এগিয়ে যান গৃহকর্ত্রী। জোছনার চোখে জল। কাঁদতে কাঁদতে জানান তার সঙ্গে কী ঘটেছে। এবারও অভিন্ন রূপে গৃহকর্ত্রী। নিজ ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কারণে উল্টো ধমক দেন জোছনাকে। পরে যুবক তাকে মারধর করেন। বাধ্য হয়েই মেনে নেন বাপ-ছেলের যৌন নির্যাতন। এভাবে কয়েক মাস চলে নির্যাতন।

নির্যাতন সহ্য করতে পারছিলেন না কিছুতেই। তাই পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এক রাতে ওই বাসা থেকে পালিয়ে যান জোছনা। বাইরের কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের সহযোগিতায় পৌঁছে যান সেইফ হোমে। তারপর ২০১৯ সালে দেশে ফিরেন তিনি। এখন পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন ঢাকার মিরপুরে একটি কারখানায়।

আরো পড়ুন: বিয়ের আড়াই মাসেই মা হলেন নববধূ, হাসপাতালেই তালাক দিলেন স্বামী

করোনাকালে দেশে ফিরেছেন ৪৬ হাজারের বেশি প্রবাসী নারী কর্মী। তাদের অনেকে নির্যাতিত হয়ে, জেল খেটে ও মানসিক অসুস্থতা নিয়ে ফিরেছেন।

নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, বিদেশে যাওয়া নারী কর্মীদের একটা বড় অংশ তালাক পেয়েছেন। দেশে ফিরে এখন কোনো কাজ পাচ্ছেন না।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি বলছে, নিপীড়িত অনেক নারী মানসিক অসুস্থতা নিয়ে ফিরছেন। গত দুই বছরে মানসিক অসুস্থ হয়ে দেশে ফেরা ৬৩ কর্মীকে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ৫৮ জন নারী কর্মী।