মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শীতে ঘুরে আসুন ‘মধুটিলা ইকো পার্কে’

প্রকাশিত : ০২:৫৫ পিএম, ২ জানুয়ারি ২০২১ শনিবার

শীতে-ঘুরে-আসুন-মধুটিলা-ইকো-পার্কে

শীতে-ঘুরে-আসুন-মধুটিলা-ইকো-পার্কে

করোনাভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে পুরোনো রূপে ফিরেছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ‘মধুটিলা ইকো পার্ক’। এবারের শীতে ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত গোটা পার্ক এলাকা। উঁচু-নিচু টিলা, কৃত্রিম লেক আর সবুজের সমারোহে হারিয়ে যেতে প্রতিদিনই সীমান্তবর্তী এ পার্কে আসে হাজারো মানুষ।

‘মধুটিলা ইকো পার্কে’ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক বনভোজন, শিক্ষা সফর। নগর জীবনের কোলাহল-কর্মক্লান্তি ভুলে একদিনের জন্য আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্কের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়ে সারি সারি গাছ। সড়কের দুই পাশে খোলা প্রান্তর আর রকমারি পণ্যের দোকান। সামনে পাহাড়ি ঢালু রাস্তা। এরপরই দেখে মেলে মাটি দিয়ে তৈরি হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্য কন্যা, মাছ ও পাখির। আঁকাবাঁকা এ পথ চলে গেছে লেকের দিকে। কৃত্রিম লেকের উপর রয়েছে স্টার ব্রিজ। লেকে নৌকায় চরে ঘোরাফেরা শেষে দর্শনার্থীরা বিশ্রাম নেন স্টার ব্রিজে অথবা পাহাড়সবুজ বন পর্যবেক্ষণের জন্য ওঠেন কৃত্রিম টাওয়ারে।

‘মধুটিলা ইকো পার্কের’ ইজারাদার রহমান ট্রেডার্সের প্রতিনিধি হামিদুর রহমান জানান, পার্কে ঢুকতে জনপ্রতি ১০ টাকা, বড় বাস ৬০০ টাকা, মিনিবাস ৪০০ টাকা, মাইক্রোবাস ২০০ টাকা, মোটরসাইকেল ৩০ টাকায় টিকেটের ব্যবস্থা রয়েছে। প্যাডেল বোট, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, শিশু পার্কের জন্যও রয়েছে আলাদা ফি। শুধুমাত্র দিনের বেলা ব্যবহারের জন্য পাহাড়ের চূড়ায় বানানো হয়েছে চার কক্ষবিশিষ্ট, শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত ও সুসজ্জিত মহুয়া রেষ্ট হাউজ রয়েছে। এ রেষ্ট হাউজ ব্যবহার করতে চাইলে মধুটিলা রেঞ্জ অফিস, ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগ অফিসে বুকিং দিতে হয়। প্রতিদিনের ভাড়া ৪ হাজার ৭০২ টাকা। এছাড়া এখানে রয়েছে জীবন্ত হরিণ, সৌন্দর্যবর্ধক ফুলের বাগান।

মধুটিলা ইকো পার্ক থেকে সীমান্তবর্তী পাহাড়গুলোতে বসবাসকারী গারো সম্প্রদায়ের জীবনধারা ও সংস্কৃতি দেখার সুযোগ রয়েছেমধুটিলা ইকো পার্ক থেকে সীমান্তবর্তী পাহাড়গুলোতে বসবাসকারী গারো সম্প্রদায়ের জীবনধারা ও সংস্কৃতি দেখার সুযোগ রয়েছে

‘মধুটিলা ইকো পার্কের’ ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন পার্কটি বন্ধ ছিল। এখন সরকারি সিদ্ধান্তে খুলে দেয়া হয়েছে। শীতের শুরু থেকেই এখানে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন। আমরা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উৎসাহিত করছি।

তিনি আরো বলেন, ইকো পার্কটি সীমান্তবর্তী। এখানকার পাহাড়গুলোতে গারো সম্প্রদায়ের বসবাস থাকায় এখান থেকে সহজেই গারোদের জীবনধারা ও সংস্কৃতি দেখার সুযোগ রয়েছে।

ঢাকা থেকে ‘মধুটিলা ইকো পার্কের’ দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর যেতে হবে। শেরপুর জেলা শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার ও নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ‘মধুটিলা ইকো পার্ক’। শেরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী বাজার পর্যন্ত লোকাল বাস সার্ভিস রয়েছে। এছাড়া শেরপুর থেকে ভাড়ায় সিএনজি অথব মোটরসাইকেল নিয়ে ‘মধুটিলা ইকো পার্কে’ যাওয়া যায়। এছাড়া নিজস্ব গাড়ি নিয়েও সরাসরি ঢাকা থেকে এ পার্কে যাওয়া যায়।

২০০০ সালে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জের সমশ্চুড়া বনবিটের আওতায় গারো পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে ৩৮০ একর বনভূমিতে নির্মিত হয় এ পর্যটনকেন্দ্র। সেই থেকে প্রতি বছর শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসেন এখানে। শীত ছাড়াও সম্ভাবনাময় এ ইকো পার্কে সারাবছরই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে।