মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাল শাপলার রাজ্য সিলেটের আন্দু লেক

প্রকাশিত : ০৭:৫৫ এএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ সোমবার

লাল-শাপলার-রাজ্য-সিলেটের-আন্দু-লেক

লাল-শাপলার-রাজ্য-সিলেটের-আন্দু-লেক

আন্দু নদী এক সময় সিলেটের সুরমা নদীর শাখা ছিল। উৎস কানাইঘাট উপজেলার জয়পুরে। সেখান থেকে ছুটে হাওরে মিশেছে। উৎস মুখ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বদ্ধ জলাশয়ে রূপ নেয় এক সময়ের খরস্রোতা নদী আন্দু। স্থানীয়দের কাছে এখন এটি আন্দু গাঙ বা আন্দু লেক নামে পরিচিত।

আন্দু লেক এখন লাল শাপলার দখলে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এ লেকে ফুটে থাকা অসংখ্য লাল শাপলা ভ্রমণ পিপাসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। শিশির ভেজা ভোরে পাপড়ি মেলা লাল শাপলা মুগ্ধ করছে পর্যটকদের। লেকের স্বচ্ছ পানিতে ফুটে ওঠা শাপলার রাজ্য দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে এসে ভীড় করেন পর্যটকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুরমা নদীর শাখা থাকাকালীন কানাইঘাট উপজেলার ১ নম্বর লক্ষীপ্রসাদ, ৩ নম্বর দিঘীর পার পূর্ব ও ৪ নম্বর সাতঁবাক ইউনিয়নকে বিভক্ত করে রেখেছিল নদীটি। পরে এ এলাকাকে নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে ও নদীর গতিপথ সোজা করতে নদীটির উৎসমুখ ভরাট করে দেয়। এরপর থেকে স্থানীয়দের কাছে এটি পুরাতন সুরমা বা আন্দু গাঙ বলে পরিচিত।

স্বচ্ছ পানির এই আন্দু লেক এখন লাল শাপলার রাজ্যস্বচ্ছ পানির এই আন্দু লেক এখন লাল শাপলার রাজ্য

সরেজমিনে দেখা গেছে, সময়ের পরিক্রমায় আন্দু লেকের দুই পাশে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য বাড়ি। পুকুর না থাকায় অনেকেই এ লেকের স্বচ্ছ পানি দিয়ে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটায়। স্থানীয়দের মাছের চাহিদাও পূরণ করছে আন্দু লেক। স্বচ্ছ পানির এই আন্দু লেক এখন লাল শাপলার রাজ্য। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ডিবির হাওরের মত এটিও একটি সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র। স্থানীয়রা ছাড়াও সিলেটের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ছুটে আসে অনেক পর্যটক। সকাল-সন্ধ্যা লেকের পাড়ে বসে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখতে ভিড় জমায় বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

আন্দু লেককে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে স্থানীয় যুবকরা। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সহযোগিতায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে তারা। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে ৩৯ সদস্যের আন্দু লেক ট্যুরিস্ট ক্লাব। লেক ঘুরে দেখতে ক্লাবের পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য ফ্রি নৌকা ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সহজে লেকে আসতে বিভিন্ন স্থানে ব্যানার, ফেস্টুন ও পথ নির্দেশক চিহ্ন সম্বলিত প্ল্যাকার্ডও টাঙিয়ে রেখেছেন ক্লাবের সদস্যরা।

পরিবার নিয়ে আন্দু লেক দেখতে আসা স্কুলশিক্ষিকা নাজিয়া আক্তার লাকি দৈনিক প্রভাতীকে বলেন, সিলেটের অনেক পর্যটন স্পট ঘুরেছি কিন্তু বাড়ির পাশে এমন মনোমুগ্ধকর স্থান রয়েছে জানতাম না। লেকের জলে নৌকায় বসে সূর্যোদয়ের দৃশ্যটি যে কাউকে পুলকিত করবে।

লেকে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য বিনামূল্যে নৌকা ও খাবারের ব্যবস্থা রেখেছে আন্দু লেক ট্যুরিস্ট ক্লাবলেকে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য বিনামূল্যে নৌকা ও খাবারের ব্যবস্থা রেখেছে আন্দু লেক ট্যুরিস্ট ক্লাব

কলেজছাত্র শোয়াইবুর রহমান বলেন, জৈন্তাপুরের ডিবির হাওরের চেয়ে এই লেকের সৌন্দর্য দিগুণ। দুই পাশে গ্রামীণ জনপদ মাঝখানে স্বচ্ছ পানির লেক। সব মিলিয়ে এটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট।

আন্দু লেক ট্যুরিস্ট ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমদ জানান, আন্দু লেককে আরো আকর্ষণীয় করতে আমরা কাজ করছি। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সার্বিক সহযোগিতায় আমাদের বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দফতরের সহযোগিতা পেলে অচিরেই আমরা আন্দু লেককে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে রূপ দিতে পারব।

ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শিপুল আমীন চৌধুরী জানান, আমরা ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে চারটি নৌকা ফ্রি সার্ভিসের জন্য রেখেছি। এছাড়া লেকে ঘুরতে আসা পর্যটকদের হালকা নাস্তারও ব্যবস্থা আছে। একটি ভাসমান রেস্টুরেন্ট চালু করারও উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। পর্যটকদের সুবিধায় বাংলাবাজার থেকে লেক পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে দিক-নির্দেশনামূলক ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড লাগানো রয়েছে।

যেভাবে যাবেন লাল শাপলার আন্দু লেকে
সিলেট থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে সিলেট জকিগঞ্জ রোডের বাংলাবাজার নামক স্থানে নেমে জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়ায় সিএনজি অটোরিকশায় করে ভবানীগঞ্জ বাজারে যেতে হবে। ভবানীগঞ্জ বাজারের পাশেই অন্দু লেক। এছাড়া সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের জুলাইর ব্রিজ বা ধনমাইরমাটি গ্রামের রাস্তায় নেমে হেঁটে কিংবা সড়কের বাজার নেমে ১০ টাকা ভাড়ায় লেগুনা বা সিএনজি অটোরিকশা ধরে লন্তির মাটি স্ট্যান্ডে যেতে পারেন। স্ট্যান্ডের পাশেই আন্দু লেক।