নীল সাগরের দেশ সেন্টমার্টিন
প্রকাশিত : ০৬:৫৫ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০২০ রোববার
নীল-সাগরের-দেশ-সেন্টমার্টিন
দুই ঘণ্টা বাসভ্রমণ শেষে টেকনাফ জেটি ঘাট সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডে নামলাম। তড়িঘড়ি করে সকালের খাবার খেয়ে সবাই আবার জাহাজের দিকে রওনা দিলাম। উদ্দেশ্য একটাই, ভালো সিট।
জাহাজ ছাড়ার পরের সময়টুকু স্বপ্নের। দল বেধে আড্ডা দেয়া, গানের সুরে নীল জলরাশির সৌন্দর্য উপভোগ করা। এর সবটাই যেন স্বপ্নময়। কয়েক কিলোমিটার পর জাহাজটি যখন বঙ্গোপসাগরে পৌঁছে তখন চারদিকে অথৈ নীল স্বচ্ছ পানি আর পানি। বড় বড় ঢেউগুলো আঁছড়ে পড়ছে। ঢেউয়ের তালে তালে জাহাজটি মৃদু দুলছে। এরমধ্যেই কেউ কেউ সীগালের দিকে খাবার ছুড়ে দিয়ে খেলা করছে কেউবা আবার সেই মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দি করে রাখতে চাইছে। সে এক কত শত ব্যস্ততা।
একসময় জাহাজ সেন্টমার্টিন জেটিবন্দরে পৌঁছালো। সবাই ক্ষুধার্ত তাই রিসোর্টে এসে প্রথম কাজ খাবারের সন্ধানে বের হওয়া। সেন্টমার্টিনের হোটেলগুলোতে পর্যটকদের জন্য হরেক প্রজাতির দেশি ও সামুদ্রিক মাছ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এখানকার তাজা রুপচাঁদা মাছের ফ্রাই যে কারোর জিভেই জল আনবে।
ক্ষুধা নিবারণের কাজ শেষ, ভ্রমণের ক্লান্তিও খানিকটা কমে এসেছে৷ ঠিক করলাম, দলবেধে সৈকতে ফুটবল খেলতে যাবো। দুইটি দলে ভাগ করা হলো- টিম মামুন স্যার. টিম শরীফ স্যার। বেশ উপভোগ্য খেলা হলেও হার-জিত থাকেই। টিম শরীফ স্যার জয় পেলো। তবে, বন্ধু রমজানের দিকে বাড়ানো আতিকের বা পায়ের জোরালো শটটি আজীবন চোখে লেগে থাকবে।
খেলা শেষে রিসোর্টে ফিরে এলাম। এবারে রিসোর্টে ঢোকার সময়ে রিসোর্টের নামটা চোখে পড়লো- ‘স্বপ্নবিলাশ’। সত্যি তাই, নীলসাগরের দ্বীপকে ঘিরে বহুদিন ধরে লালিত স্বপ্নেরই যেন বিকাশ ঘটছে চোখের সামনে। এসব ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে এলো।
যখন ঘুম ভাঙলো তখন প্রায় সন্ধ্যা। সাগরের সুনীল জলরাশি আর অসংখ্য নারিকেল গাছ, কেয়া গুল্ম আর সবুজ বনানী এই দ্বীপকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। একটি সাইকেল ভাড়া নিয়ে সাগরতীরে বেড়িয়ে পড়লাম। ঘোর লাগা মুগ্ধতার হাত ধরে সমুদ্রের ধার থেকে চলতে থাকলো ঘোরাঘুরি। বারবার মনে পড়ছিলো লাকি আখন্দের গান- ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’।
রাতের জোৎসনা এসে যখন চিকচিকে বালুর বুকে লুটোপুটি খায়, নীল আকাশ তখন আরও নীলাভ হয়। ঢেউয়ের আঁছড়ে পড়া গর্জন বুকে অনুভূতি জোগায়। পরদিন একটু বেলা করে ঘুম ভাঙলো। সমুদ্রস্নান আর আড্ডার তালে অচিরে সন্ধ্যেও নেমে আসে। রাখাইন বাজারে একবার ঢুঁ মারি।
ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা কেনাকাটায় বরাবরই এগিয়ে থাকলেও এখানে সমান তালে কেনাকাটা চলতে থাকলো। রাতে শুরু হলো বারবিকিউ পার্টি। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে শুরু হলো র্যাফেল ড্র, যার যার বেছে নেয়া কাগজে যা থাকবে, তাই তাকে করে দেখাতে হবে৷ র্যাফেল ড্রর সৌজন্যে সবার গান, অভিনয় আর নাচের প্রতিভা আরেকবার দেখতে পাই।
এদিন সকালে ছেঁড়াদ্বীপ যেতে হবে, তাই একটু ভোরেই উঠতে হলো। একদল সাইকেলে চড়ে, আরেকদল ট্রলারে চেপে ছেঁড়াদ্বীপের উদ্দেশে রওনা হলাম। দুইভাগে আলাদা সময়ে গেলেও কাকতালীয়ভাবে প্রায় একই সময়ে গিয়ে পৌঁছেছিলাম। ছেড়াদ্বীপের ডাবের স্বাদ জিভে লেগে থাকার মতো। সহপাঠী, স্যারেরা সবাই মিলে কয়েকটি গ্রুপ ছবি তুলে নিলাম।
রিসোর্টে চলে এলাম। এবারে ফেরার পালা। সকালের নাস্তা করে ফেরার পথে পা বাড়াই। স্বপ্ন যাত্রা শেষের দিকে, শুধুই কি স্বপ্ন যাত্রা? বছর ঘুরলেই আমাদের স্নাতকের পাঠ সমাপ্ত হবে। তারপর তো চাকরির জন্য হাপিত্যেশ আর ক্ষয়ে যাওয়া জুতার সোল হয়ে উঠবে নিত্যসঙ্গী। কথায় আছে, ‘এভরি গুড থিং কামস টু এন অ্যান্ড’। সেই নিয়মেই ট্যুরও শেষ হচ্ছে। ক্যামেরায় দিকে তাকাই। সব ফুরিয়ে গেলেও, আমার এই যন্ত্রটির চোখ দিয়ে মুহূর্ত বন্দি করে যে স্মৃতির আ্যলবাম বানিয়েছি তা ঠিকই থেকে যাবে।