রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দোষারোপের খেলায় মত্ত বিএনপি-জামায়াত

দৈনিক প্রভাতী

প্রকাশিত : ০৯:৪৩ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর দোষারোপের খেলায় মত্ত হয়েছে জামায়াত ও বিএনপি। এমন প্রেক্ষাপটে রাজনীতির মাঠে ফিরে আসার বদলে বিএনপি ও জামায়াত নেতারা কাদা ছোড়াছুড়ি করে নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন কার্যক্রমকে আরো তরান্বিত করছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দোষারোপের রাজনীতির কারণে জোটের দুটি দল নিজেদের অজান্তেই নিজেদের কবর খুঁড়ছে বলেও অভিমত তাদের।

বিএনপি-জামায়াতের অন্তঃকোন্দলকে রাজনৈতিক ভুলের মাসুল হিসেবে বর্ণনা করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক এ আরাফাত বলেন, বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশের উন্নয়নমুখী রাজনীতির অন্তরায় বলা যায়। বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াত উন্নয়নকে স্থবির করে দেশকে দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল। বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতির কারণে দেশের তরুণ সমাজ রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়েছিল একটা সময়ে। বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রতিটি নির্বাচনে বিপর্যস্ত হয়ে অবিশ্বাস দানা বাঁধছে বিএনপি জামায়াতে বন্ধুত্বে। অস্তিত্ব বাঁচাতে এখন বিএনপি নাকি জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছে। অনেক পরে হলেও বিএনপির সুবুদ্ধির উদয় হতে চলেছে। যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় ভাড়া দিয়ে বিএনপি নিজের বড় ক্ষতি করে ফেলেছে।

তিনি আরো বলেন, এখন শুনছি বিএনপি-জামায়াত একে অপরকে পরিত্যাগ করার পরিকল্পনা করেছে। লুটপাটের সময় একে অপরকে সহ্য করলেও বিপদের দিনে তারা এখন গোপন শত্রুতে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি হাস্যকর। জামায়াতকে সঙ্গে নেয়ায় লাভের চেয়ে ক্ষতির পাল্লা ভারি হয়েছে বিএনপির। দল দুটি কাদা ছোড়াছুড়ি করে নিজেদেরকে বিতর্কিত করে হাসির পাত্রে পরিণত হচ্ছে। জামায়াতকে পাশে নিয়ে ঐতিহাসিক ভুল করেছে বিএনপি। এই ভুলের জন্য বিএনপিকে দীর্ঘমেয়াদে ভুগতে হবে।

জামায়াতের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ বলেন, জামায়াতের বিষয়ে প্রথম থেকেই আমি বিএনপিকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেছি। জামায়াত শেকড়বিহীন ভাসমান আগাছার মতো। জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা কম থাকা সত্ত্বেও জামায়াত দেশ-শাসনের স্বপ্ন দেখত। তাদের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। কৌশলী জামায়াতের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে প্রতিবার পা দিয়ে সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপি। জামায়াতকে তালাক দেয়ার ব্যাপারে একাধিকবার অভিমত দিলেও আমাকে বরং চক্রান্তকারী ও জোটের জন্য ক্ষতিকারক হিসেবে তিরস্কার করা হয়েছে। আমার অনুমান আজকে সত্যি হচ্ছে। জামায়াতের কারণে বিএনপি দেশে ও বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, জামায়াত বিএনপিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হিংসা ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল। অথচ নিজেদের পাপের প্রায়শ্চিত্তে জামায়াতের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। আরো বড় ক্ষতি করার আগে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা বিএনপির জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে। জামায়াত বিএনপির জন্য অভিশাপ মাত্র। বিএনপি থেকে জামায়াত বেরিয়ে গেলে দলটি এক বছরের মাথায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

বিষয়টিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে জামায়াতের নায়েবে আমীর মিয়া গোলাম পরোয়ার বলেন, বিএনপির সৌভাগ্য যে জামায়াত এতদিন তাদের পাশে ছিল। যে দল নয়াপল্টনের দেয়ালে আবদ্ধ ছিল, সেই দলকে রাজপথে ফিরিয়ে এনেছে জামায়াত। আজকে যখন রাজনীতিতে বিএনপি মুখ থুবড়ে পড়েছে, তখন সব দোষ আমাদের ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, বিএনপির সঙ্গ ছাড়বে জামায়াত। এতদিন জামায়াত প্রিয় মিত্র ছিল বিএনপির, আর এখন বিদেশিদের প্ররোচনায় পড়ে সরকার নয়, জামায়াতকে শত্রুর চোখে দেখছে বিএনপি। এটি জামায়াতের জন্য অবমাননাকর। রাজনীতির কঠিন পথে হাঁটতে কারো সাহায্য নেবে না জামায়াত।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, বিএনপির এখন নতুন নতুন সঙ্গী জুটেছে, তাই পুরাতনদের সহ্য হচ্ছে না। জামায়াতে ভাঙনের পেছনে বিএনপির একাধিক নেতার ইন্ধনের ব্যাপারেও আমরা খবর পেয়েছি। বিএনপির নেতারা যে কি পরিমাণ ভীতু এবং পরনির্ভরশীল তা আমরা প্রমাণ পেয়েছি সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে। বিএনপি গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি দিচ্ছে। বিএনপি একই সাথে সাপের মুখেও চুমু দিচ্ছে, আবার ব্যাঙের মুখেও চুমু দিচ্ছে। সাপের লেজ নিয়ে খেলা করার ফলাফল যে ভালো হয় না সেটি হয়ত বিএনপির নেতারা ভুলে গেছেন। জামায়াত বিএনপিকে ত্যাগ করলে আগামী দেড়-দু’বছরের মধ্যেই বিএনপির রাজনীতির ইতি ঘটতে পারে।