শুক্রবার   ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আশ্বিন ৪ ১৪৩১   ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিশ্বকাপ আসরের ম্যাচ পরিচালনায় ছিলেন যারা

প্রকাশিত : ১২:৩০ এএম, ১৫ জুলাই ২০১৯ সোমবার

বিশ্বকাপ-আসরের-ম্যাচ-পরিচালনায়-ছিলেন-যারা

বিশ্বকাপ-আসরের-ম্যাচ-পরিচালনায়-ছিলেন-যারা

হাটি হাটি পা পা করে শেষের পথে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসর। ১০ দেশের ২২ গজের লড়াই শেষে দুই ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড ‘হোম অব ক্রিকেট’  লর্ডসে মুখোমুখি হয় শিরোপা জেতার লড়াইয়ে। 

ক্রিকেটে মাঠের লড়াইয়ে খেলেন ২২ জন প্লেয়ার। তাদের সঙ্গে থাকেন আরো ৪ জন। তারা হলেন আম্পায়ার। মাঠের লড়াইয়ে দু’দলের মধ্যে পুরো খেলা তাদের দ্বারাই সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়। 

শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ আসরের পরিচালনায় ছিলেন মোট ১৫ জন আম্পায়ার। যারা নিজেদের দক্ষতা দিয়ে পুরো আসরকে শেষের দিয়ে নিয়ে এসেছেন। তাদের মধ্যে কারো আবার এটাই শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। 

দৈনিক প্রভাতীের পাঠকদের জন্য এবার আইসিসির এলিট প্যানেলের এই আম্পায়ারদের কয়েকজনের আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হলো।  আজ এর দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব।   

পল রাইফেল


বিশ্বকাপ জয়ী দ্বিতীয় ক্রিকেটার যিনি ২০১৯ বিশ্বকাপে আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৬৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেয়া পল রাইফেলের ক্রিকেটার হিসেবে ছিল ব্যাপক সুনাম। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৯৯৯ বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তিনি। সেই জয়ের পরই ক্রিকেটকে বিদায় জানান। 

ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর মনোযোগ দেন আম্পায়ারিংয়ে। ২০০৪/০৫ মৌসুমে তার অভিষেক হয় প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে আম্পায়ারিংয়ের মাধ্যমে। এর আগে ২০০২ সালে মেলবোর্ন গ্রেডের আম্পায়ারদের তালিকাভুক্ত হন তিনি। ২০০৫/০৬ সালে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আম্পায়ার প্যানেলে যুক্ত হন। প্রথম সাবেক অজি ক্রিকেটার হিসেবে ২০০৮ সালে তিনি আইসিসির আন্তর্জাতিক আম্পায়ার প্যানেলের সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ওয়ানডে ম্যাচের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পন করেন রাইফেল। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম নিউজিল্যান্ডের টেস্ট সিরিজের মধ্য দিয়ে তার টেস্টেও পদচারণা শুরু হয়। 

২০১৩ সালে আইসিসির আম্পায়ারদের এলিট প্যানেলে যোগ দেন রাইফেল। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে অনেকগুলো ম্যাচে আম্পায়ারের ভূমিকায় ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপেও ১৫ সদস্যের আম্পায়ার প্যানেলে তিনি রয়েছেন অবধারিতভাবেই।

পল উইলসন 

   
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার পল উইলসনের জন্ম ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে। জাতীয় দলের হয়ে খেলার আগে তিনি খেলেছিলেন দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া ও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। 

১৯৯৮ সালে গ্লেন ম্যাকগ্রার ইনজুরির কারণে হঠাৎ করেই অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলে ডাক পান উইলসন। টেস্ট ১টি খেললেও ওয়ানডে খেলেছেন ১১টি। যেখানে উইকেট নিয়েছেন ১৩টি। ২০০৩/০৪ মৌসুমে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নারীদের জাতীয় লিগের দল ওয়েস্টার্ন ফিউরির কোচ হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপরেই তিনি চলে আসেন মূলত আম্পায়ারিংয়ে। 

২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের হয়ে টেস্ট খেলেছে ৪৪৩ জন। আম্পায়ার হিসেবে ছিল ৯১। এই দুইটাই করেছে এমন মানুষের সংখ্যা মাত্র ৫ জন।  পোস্ট ওয়ার এরাতে এমন মানুষের সংখ্যা মাত্র ১ জন। আর সেটি হলেন পল রাইফেল। পল উইলসনই একদিন সেই রাইফেলের সঙ্গে জুটি বেধে টেস্ট আম্পায়ারিং করার স্বপ্ন দেখেন।  

২৪টি ওয়ানডে এবং ১১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দায়িত্ব পালন করা উইলসনের ভাগ্যে জুটে নি এখনও পর্যন্ত কোন টেস্ট ম্যাচে আম্পায়ারিং। হয়তো অচিরেই সেটা মিলবে।  

২০১৯ বিশ্বকাপে তিনিই একমাত্র আম্পায়ার যার থলিতে কোন টেস্ট ম্যাচে আম্পায়ারিং করার অভিজ্ঞতা নেই।    

রিচার্ড ইলিংওর্থ


রিচার্ড ইলিংওর্থ বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় একজন আম্পায়ার। সাবেক এই ইংলিশ ক্রিকেটার দীর্ঘদিন খেলেছেন কাউন্টি ক্লাব ওরচেস্টারশায়ারের হয়ে। যদিও কিছু সময় তিনি খেলেছেন ডার্বিশায়ার ও বাইরের দল নাটালের হয়ে। 

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ইংল্যান্ডের হয়ে তার পদচারণা ছিল। ১৯৯০ সালে এক বছরে ৭৫ উইকেট নিয়েছিলেন ২৮.২৯ গড়ে যা তাকে দেয় ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে ঢোকার সুযোগ। রিচার্ড ইংল্যান্ডের হয়ে দুটি বিশ্বকাপেও প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৯২ ও ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে তিনি দলে ছিলেন। 

৯ টেস্টের ক্যারিয়ারে করেন ১২৮ রান এবং উইকেট নেন ১৯টি। ২৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে উইকেট নেন ৩০টি। 

ক্রিকেট থেকে অবসরের পর নাম লেখান আম্পায়ারিংয়ে। ২০০৬ সালে কাউন্টি মৌসুমে তিনি প্রথম আম্পায়ারিং করেন। ২০০৮ সালের মৌসুমে ৪৭টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে আম্পায়ারিং করেন ইলিংওর্থ। ২০১৩ সালে আইসিসির আম্পায়ারদের এলিট প্যানেলে যোগ দেন তিনি। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে আম্পায়ারিং করেন। এছাড়া এবারের ২০১৯ বিশ্বকাপেও তিনি আছেন আম্পায়ার হিসেবে ম্যাচের দায়িত্বে। এখন পর্যন্ত ৪২টি টেস্ট, ৬০টি ওয়ানডে এবং ১৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে দাঁড়িয়েছেন ইলিংওর্থ। 

রিচার্ড ক্যাটেলব্রহ

সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার রিচার্ড ক্যাটেলব্রহ ১৯৭৩ সালে জন্ম নেন ইয়োর্কশায়ারে। স্থানীয় কাউন্টি দলটির হয়েই ৩৩টি প্রথম শ্রেনির ম্যাচ খেলেছেন তিনি। সঙ্গে মিডেলসেক্সের হয়ে খেলেছেন কিছুদিন এই বা হাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। মাঝে মাঝে বা হাতে পেস বোলিংও করতেন। সে ওর্কসপ কলেজের ক্রিকেট একাদশের হয়ে দীর্ঘদিন খলেছেন। 

২০০০ সালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের তালিকাভুক্ত আম্পায়ার হন ক্যাটেলব্রহ। তবে এর আগে ২০০২ সালে তার প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে আম্পায়ার হিসেবে অভিষেক ঘটে ডারহাম বনাম ডারহাম ইউসিসিই এর মধ্যকার ম্যাচে। ২০০৪ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে ডারহাম বনাম এসেক্সের মধ্যকার ম্যাচেও দায়িত্ব পালন করেন। 

২০০৯ সালে ফ্রেন্ড প্রোভিডেন্ট ট্রফির সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে আম্পায়ারিং করেন। পাশাপাশি ক্লাইডেসদালে ব্যাংক ৪০ ওভারের টুর্নামেন্টের ফাইনালেও তাকে আম্পায়ার হিসেবে দেখা যায়। ২০০৯ সালে তিনি প্রথমবারের মত আইসিসির টিভি আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেন। ঐ বছরেই ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার  টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ক্যাটেলব্রহর। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ঐ বছরেই তার ওয়ানডেতেও অভিষেক ঘটে। ২০১০ সালে শ্রীলংকার গলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম লংকানদের মধ্যকার টেস্ট ম্যাচের মধ্য দিয়ে এখানেও অভিষেক হয়ে যায় তার। ২০১১ সালে আইসিসির এলিট আম্পায়ার প্যানেলে নিযুক্ত হন ক্যাটেলব্রহ।

২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন তিনি। এছাড়া ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে বাংলাদেশ বনাম ভারতের ম্যাচে এবং ফাইনালে ভারত বনাম পাকিস্তানের ম্যাচেও তাকে আম্পায়ার হিসেবে দেখা যায়। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে তাই অবধারিতভাবেই তিনি থাকছেন আইসিসির আম্পায়ারদের প্যানেলে। 

রুচিরা পালিয়াগুরুগে 

ক্রিকেট বিশ্বে রুচিরা পালিয়াগুরুগে ভালো আম্পায়ারিংয়ের থেকে বাজে আম্পায়ারিংয়ের কারণেই বেশ সমালোচিত। বিশ্বকাপ শুরুর পর ইতোমধ্যে তিনি তার স্বভাবসুলভ বাজে আম্পায়ারিংও করে ফেলেছেন একটি ম্যাচে। 

পালিয়াগুরুগে আম্পায়ারিংয়ে আসার আগে ছিলেন ক্রিকেটার। লংকান ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে ২০০ উইকেট নিয়েছেন তিনি মিডিয়াম পেস বোলিং করে। এছাড়া ব্যাটিংও করতেন ভালোই। যেখানে তার ঝুলিতে রয়েছে ৪ হাজারেরও বেশি রান। 

তার আন্তর্জাতিক ম্যাচে আম্পায়ারিংয়ে অভিষেক ঘটে ২০১১ সালে শ্রীলংকা বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ওয়ানডে ম্যাচের মধ্য দিয়ে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে আইসিসির ২০ আম্পায়ারের এলিট প্যানেলে জায়গা করে নেন তিনি। ২০১৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার হওয়া এশিয়া কাপের ফাইনালেও তিনি আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালেই লংকান ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক আম্পায়ার অফ দ্য ইয়ার জেতেন তিনি। টেস্টে তার অভিষেক হয় ২০১৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে। 

২০১৯ সালের এপ্রিলে আইসিসি তাদের বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য ১৫ সদস্যের আম্পায়ার প্যানেলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করে।  আম্পায়ারিংয়ে অভিষেক হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ২টি টেস্ট, ৭২টি ওয়ানডে ও ৩২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছেন রুচিরা পালিয়াগুরুগে।



দৈনিক প্রভাতী/সালি