সোনারগাঁও হোটেলের নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
দৈনিক প্রভাতি ডেস্ক ::
দৈনিক প্রভাতী
প্রকাশিত : ০১:৪৩ পিএম, ৯ নভেম্বর ২০২৪ শনিবার
সোনারগাঁও হোটেলের নির্বাহী পরিচালক
দেশের অন্যতম বিলাসবহুল পাঁচ তারকা প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল। হোটেলটিতে অনিয়ম, দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন কাজি মোয়াজ্জেম হোসেন। হোটেল সোনারগাঁও যেনো তার কাছে জাদুর চেরাগ। তিনি ঘষা দিলেই বেরিয়ে আসছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। সাবেক আওয়ামীলীগ সরকারকে ব্যবহারকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও থেমে নেই তার অপকর্ম। সোনারগাঁও হোটেলে নির্বাহী পরিচালক কাজি মোয়াজ্জেম হোসেন এখন হোটেলটির আতঙ্কের নাম বলে মনে করছেন এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।
অভিযোগ উঠেছে,আওয়ামী সরকারের পতনের পর কাজি মোয়াজ্জেম হোসেন ১০ দিন অফিসিয়ালি কোনো নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই গা ঢাকা দেন। কিন্তু মাত্র ২ মাসের ব্যবধানে খোলস পাল্টে এখন জামায়াত নেতৃবৃন্দ ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দু'একজন উপদেষ্টাদের নাম ভাঙ্গিয়ে পুনরায় আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে স্বনামধন্য হোটেলটির সকল কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।
ফেসবুক ও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত মতে, বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দেয়া, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রোগামে উপস্থিতি, আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিতেন মোয়াজ্জেম হোসেন। আর সেই ছবিগুলো দেখিয়ে হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে রাখতেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন ভাবে হোটেল থেকে মোটা অংকের সুযোগ সুবিধা নিতেন। এভাবে তিনি হোটেলটিতে আধিপত্যের সাম্রাজ্য গড়ে তুলে দিনের পর দিন অনিয়ম-দুর্নীতি করে গেছেন।
প্রাপ্ত সূত্রমতে জানা যায়, কাজি মোয়াজ্জেম হোসেন সোনারগাঁও হোটেলে এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর। ২০১৯ সালে মোয়াজ্জেম হোসেন একজন ম্যানেজার পদে অত্র হোটেল নিয়োগ পান। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পদে রয়েছেন। মাত্র ৫ বছরে তিনি শুন্য থেকে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদের পাহাড়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চাকুরিতে যোগদানের সময় পর অনেক সহকর্মীদের সঙ্গে ফ্লাট শেয়ার করে থাকতেন। কিন্তু সেই মোয়াজ্জেম হোসেনের ঢাকার পান্থপথে ‘প্রতিক কামিনি’ ভবনে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্লাট নং ৭ ডি। যার বাজার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। গত বছরে মিরপুরে একটি ডেভলমেন্ট কোম্পানির নির্মানাধীন রেডিমেন্ট ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছেন । যার বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা। ঢাকার শানারপাড়ে তার নিজের মালিকানাধীন ৬ তলা বাড়ির নির্মানকাজ চলমান রয়েছে।
অভিজাত এই হোটেলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, কাজি মোয়াজ্জেম হোসেন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় গড়ে তুলেছেন প্রমোশন, নিয়োগ ও কমিশন বানিজ্য। নিজের মতো করে লুটপাট করে চলেছেন সরকার নিয়ন্ত্রিত হোটেলটি। যার মূলে ছিলেন গত আগস্টে হোটেলটির চাকরিচ্যুত জিএম রবিন জেমস এডওয়ার্ড। অপেশাদারিত্ব ও ব্যবসাবান্ধব না হওয়ায় গত আগষ্টে চাকরিচ্যুত হন রবিন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে উদ্ধর্তন একজন কর্মকর্তা দৈনিক যায়যায়দিনকে জানান, কাজি মোয়াজ্জেম হোসেনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতা প্রয়োগের পিছনে ছিল বিগত সরকারের বেশ কয়েকজন ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের আশীর্বাদ। তার গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলায় হওয়ায় তিনি নিজাম হাজারির ছত্রছায়ায় হোটেলটিতে দেদারছে নিজের অপকর্ম চালিয়ে গেছেন নিজের মতো করে। এছাড়াও মোয়াজ্জেম হোসেনের আধিপত্যের নৈপথে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনই ছিল মূল মাস্টারমাইন্ড । এছাড়াও চলতি বছরের জুলাই মাসে সাধারণ ছাত্রদের উপর হামলার পর ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম ও সেক্রেটারী ইনানকে সোনারগাঁও হোটেলে ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই লুকিয়ে রাখেন কাজি মোয়াজ্জেম হোসেন। এমনকি হোটেলটিতে ছাত্রলীগের সকল কমিটির নেতাদের আড্ডাবাজির কেন্দ্রস্থল বানিয়েছিলেন তিনি। এতে বিদেশী অতিথিদের কাছে হোটেলটি বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিদেশি অতিথিরা নানা সময়ে হোটেলের পরিবেশ ও অতিথি সেবা নিয়ে অভিযোগ করার পরেও কোন প্রকার ব্যবস্থা নেননি কাজি মোয়াজ্জেম হোসেন। হোটেলটির বহু কর্মকর্তা কর্মচারি এসব বিষয়ে মুখ খুললেই নানা রকম নির্যাতনের শিকার হতেন এবং চাকরি হারাতেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, আমি হজ্জ্ব করে আসছি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি মিথ্যা। আমি এখনো ঢাকায় ভাড়া থাকি। আমি এখন ধার দেনা করে চলি। সত্যি বলতে আমার কিছু নাই। আমি এসকল অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নয়। তিনি আরো জানান, প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয় থাকতে পারে। এতে তো দোষের কিছু নাই।
সোনারগাঁও হোটেলে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারিরা অভিযোগ করে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বিগত সরকারের অন্যতম সহযোগী ছিলেন কাজি মোয়াজ্জেম হোসেন। বিভিন্ন সময় আওয়ামীলীগের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্নভাবে অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তিনি এখন খোলস পাল্টে সেই অনিয়মের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। এজন্য কাজি মোয়াজ্জেম হোসেন আমাদের কাছে এখন আতঙ্কের কারণ। তার কারণে যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে আমাদের প্রাণের এ প্রতিষ্ঠানটি। এমন পরিস্থিতিতে আমরা এখন তার অপসরণ চাই। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার সঠিক বিচার করার জন্য পর্যটন মন্ত্রনালয় ও বর্তমান সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।