হত্যা ও চাঁদাবাজির হুমকিতে আতঙ্কিত আড়াইহাজারের ব্যবসায়ীরা
বিশেষ প্রতিনিধি ::
দৈনিক প্রভাতী
প্রকাশিত : ০২:৩২ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২৪ রোববার
আড়াইহাজারের ব্যবসায়ীরা
নারায়নগঞ্জের আড়াই হাজার। দেশের ব্যবসায়ীদের প্রাণকেন্দ্র। বড় বড় কোম্পানি তাদের ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর জন্য আড়াই হাজারে তাদের কারখানা স্থাপন করেছে। বিগত দিনে তারা অনেকটা স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করে আসলেও সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিছু দুর্বৃত্ত এই সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে হুমকি ও চাঁদাবাজীর ফাঁদে ফেলতে চাচ্ছে। শুধু চাঁদা আদায় নয় হুমকি দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন হত্যা মামলায় তাদের ফাঁসিয়ে দেয়ার। বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কোন ব্যবসায়ীকে যেন ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রানি না করা হয় সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
অন্যদিকে বিএনপি, জামায়াত সহ অন্যান্য রাজনৈতি দল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে,কোনভাবে দলীয় পরিচয়ে কোন চাঁদাবাজি বা কাউকে হুমকি দেয়া বরদাশত করা হবে না। কোন ব্যক্তির অপকর্মের দায়ও নেবে না দল। বরং যে বা যারা এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আড়াই হাজারের একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই ধরনের চাঁদাবাজি ও হত্যার হুমকিতে আতঙ্কিত তারা। আর এমনটা চলতে থাকলে ব্যবসা বাণিজ্য সঠিকভাবে পরিচালনা কঠিন হয়ে পরতে পারে। ফলে চাকরি হারাবে হাজার হাজার কর্মী । ব্যবসায়ীরা বলেন, ইতিমধ্যে ৪০ থেকে ৫০টি কারখানা তালা লাগিয়ে চাঁদা দাবি করেছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। চাঁদা না দিলে চূড়ান্তভাবে ফ্যাক্টরি বন্ধের হুমকি দিয়েছে তারা। এতোসবের পরও নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারে শত শত ব্যবসায়ীকে হত্যা, হত্যা মামলা, চাঁদাবাজি ও ফ্যাক্টরি বন্ধের হুমকি দিচ্ছে কিছু দুষ্কৃতকারীরা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিএনপির মূল দলের আন্তর্জাতিক সহ সম্পাদক, নজরুল ইসলাম আজাদ ও তার ভাই রফিক সরাসরি ব্যবসায়ীদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে। পাশাপাশি চাঁদা না দিলে ব্যবসায়ীদের ফ্যাক্টরি বন্ধ সহ হত্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এলাকার স্থানীয় কিছু নেতারা সরাসরি ব্যবসায়ীদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে। পাশাপাশি চাঁদা না দিলে ব্যবসায়ীদের ফ্যাক্টরি বন্ধ সহ হত্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, অন্তবর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস নিশ্চয়ই বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক ব্যবসা করার পরিবেশ নিশ্চিত করবেন। যাতে করে দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা বাণিজ্য স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারেন। এবং বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের হাতকে শক্তিশালী করতে পারেন।
এরই মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা হত্যা মামলার সাথে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নাম যুক্ত করা হয়েছে নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারে। এই সব মামলায় অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মত যুক্ত করা হয়েছে ফকির গ্রুপের তিন কর্নধাররকেও। আড়াইহাজারের ব্যবসায়ী ফকির গ্রুপের, ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ, ফকির আকতারুজ্জাম ও ফকির মাসরিকুজ্জামান নিয়াজকে যুক্ত করা হয়েছে। চাঁদা চাওয়া হয়েছে মোটা অঙ্কের। চাঁদা না দিলে বিভিন্নভাবে সরাসরি হত্যার হুমকিও দিয়েছে বিএনপি নেতা ও তার সহযোগীরা। শুধু ফরিক গ্রুপ নয়, আড়াই হাজারের বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে একইভাবে চাঁদা চেয়ে হুমকি দিচ্ছে তারা। চাঁদা না দিলে হত্যা মামলার আসামি সহ নানা ভাবে হয়রানিমূলক কর্মকান্ড করছে তারা। এই অবস্থায় সমস্যা সমাধানে দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহায়তা চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ প্রতিবেদকে জানিয়েছেন, আমরা ইতোমধ্যে শুনতে পেরেছি বিএনপি না ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি হচ্ছে। বিএনপি'র নাম ভাঙিয়ে যারা দখলদারিত্ব করেছে তাদের চিহ্নিত করতে কাজ করা হচ্ছে। বিএনপির কোনো নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা পেলে সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রেজভী আরো জানান, কিছু দুষ্কৃতকারীদের অপর্কমের কারণে জাতির সামনে বিএনপি'র ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে । তাই আইনের মাধ্যমে এসব সুযোগ সন্ধানীদের প্রতিহত করতে হবে। যদি আমাদের কোনো নেতাকর্মীরা ভূমি দখল, প্রতিষ্ঠানে হামলা, হামলা-ভাঙচুর, প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদাবাজি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, পুলিশ, ডিজিএফআইসহ গোয়েন্দাদের কাছে আপনারা অভিযোগ দেবেন।