ডুবতে বসেছে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল
বিশেষ প্রতিনিধি ::
দৈনিক প্রভাতী
প্রকাশিত : ০১:৩৭ পিএম, ১১ আগস্ট ২০২৪ রোববার
বিশেষ প্রতিনিধি ::
নানা সমস্যা জর্জড়িত হয়ে পড়েছে দেশের পাঁচ তারকা হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও। একের পর এক লোকসান, স্টাফ কমে যাওয়া, বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ডুবতে বসেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে সম্প্রতি সময়ে ছাত্র আন্দোলনের সময় আওয়ামীলীগ নেতাদের লুকিয়ে থাকার সুযোগ করে দেয়ায় আরো বির্তকিত হয়ে পড়েছে হোটেলটি।
প্রাপ্ত সূত্র মতে, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পাচ তারকা হোটেল। স্বাধীনতা পরবর্তী এই হোটেলটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয় এবং ১৯৭৭ সালে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ভিত্তি স্থাপন করেন। ১৯৮১ সালে বিদেশি অতিথিদের জন্য হোটেলটি উদ্বোধন করা হয়। রাষ্ট্রীয় এই হোটেলটি প্যান প্যাসিফিক সিঙ্গাপুর কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হয়। সরকারের পক্ষ হতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োজিত এমডি, কোম্পানি সেক্রেটারি এবং আরো কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী এখানে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। যারা কিনা মালিকপক্ষ, অপরদিকে অন্যান্য সব কর্মকর্তা ও কর্মচারি প্যান প্যাসিফিক সিঙ্গাপুর দ্বারা নিয়োগকৃত যার পরিমাণ প্রায় ৪০০ জন। এখানকার কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রম ও মেধায় চালুর পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি কখনোই লোকসানের মুখ দেখেননি। বিদেশি অতিথিদের জন্য এটি ঢাকা শহরের প্রথম পছন্দ।
ক্ষুদ প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা এবং কর্মচারী অভিযোগ করে বলেছেন, গত ৩ বছর যাবত হোটেলটির ব্যবসায়িক সাফল্য মুখ থুবড়ে পড়েছে। সরকার হারাচ্ছেন রাজস্ব আয়।যার কারণে সকল কর্মচারীগণ তাদের জীবন পরিচালনা অত্যন্ত দুষ্কর হয়ে পড়েছে। গত ৩ বছরে সকল কর্মচারীগণ ব্যাংক লোনে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। হোটেলটির এই ব্যবসায়িক পতনের মূলে রয়েছেন হোটেলটির কিছু অসাধু ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ও হোটেলটির অপারেশন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা জিএম রবিন জেমস এডওয়ার্ডস ও তার কিছু অনুসারী কর্মকর্তা। তার মধ্যে অন্যতম কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন (ডিরেক্টর) হাবিবুর রহমান জহির (শেফ)ও অন্যান্য কয়েকজন কর্মকর্তা। জিএম রবিন উক্ত কর্মকর্তা ও মালিকপক্ষের দু-একজন কর্মকর্তা মিলে সকল নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে হোটেলটিকে নিয়ে গেছেন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আর এসবের মূলে রয়েছে নিয়োগ বাণিজ্য, প্রমোশন বাণিজ্য, ও ক্রয়াদেশ এবং হোটেলটির সংস্কারের নামে নানারকম দুর্নীতি ও লুটপাট। আর এসবই হচ্ছে জিএম রবিন এর নেতৃত্বেই।
খবর নিয়ে জানা গেছে, জিএম রবিন ও অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হোটেলটির কোন কর্মচারী মুখ খুলতে নারাজ। কারণ অসাধু এই জিএম ও কর্মকর্তাগণ হোটেলটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সচিব জনাব মোকাম্মেল হোসেন এর আশীর্বাদপুষ্ট। উল্লেখ্য সচিব মোকাম্মেল হোসেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন যে কিনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত কাছের এবং আস্থাভাজন ছিলেন। ২০২২ সালের আগস্টে জনাব রবিনকে প্যান প্যাসিফিক সিঙ্গাপুর কর্তৃক এক বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে উক্ত হোটেলটি পরিচালনার দেয়া হয়।
পরবর্তীতে সচিব মোকাম্মেল এর মাধ্যমে আরো ১ বছর বৃদ্ধি করা হয়. রবিন এর দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবার পূর্বেই নিয়ম বহির্ভূত ভাবে অন্যান্য বোর্ড মেম্বারদে ও কর্পোরেট অফিস প্যান প্যাসিফিক সিঙ্গাপুর এর কোন প্রকার সম্মতি ছাড়াই সচিব মোকাম্মেল হোসেন নিজ ক্ষমতাবলে আরো দুই বছর নিয়োগ বৃদ্ধি করেন যার কারণে সকল শ্রমিক ও কর্মচারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ। কারণ রবিন ও তার অনুসারী কর্মকর্তাগণ গত ২ বছরে ব্যবসায়িক কোন সাফল্য তো দেখাতে পারেন ই নি বরং ব্যবসায়িক সাফল্য ও সুনাম নিয়ে গেছেন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রবীন কে পুনরায় নিয়োগ দেয়ার পেছনে রয়েছে সচিব লোকাম্মেল হোসেন এর অর্থনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্য। আমরা আরও জানতে পারি উক্ত কারণে সকল শ্রমিক ও কর্মচারীগণ সম্প্রতি হোটেলটির এমডি বরাবর উক্ত জিএমকে অপসারণের জন্য একটি অনাস্থা প্রদান করেন। আমারা আরও জানতে পারি এমডি ও মালিকপক্ষের কিছু কর্মকর্তা উক্ত বিষয়টিকে সুরাহা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু বিষয়টি এখনো সুরাহা না করায় শ্রমিক ও কর্মচারীদের মধ্যে বিরাজ করছে অত্যন্ত চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ।